অনির্দিষ্টকালের জন্য নয়, রাষ্ট্র সংস্কার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার বেলা ৩টায় সিলেটের একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
এসময় বিএনপি মহসচিব বলেন, ‘বিএনপি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে। ছাত্র-জনতার বিজয়কে নস্যাৎ গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি তাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। এজন্য প্রতিটি ইউনিটে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যারা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম করেছে এরা বিএনপির কেউ নয়। এরা দুর্বৃত্ত।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে যৌক্তিক সময় দেওয়া হবে। রাষ্ট্র সংস্কার করতে যতটুকু সময় লাগে, ততটুকু সময় দেওয়া হবে। তবে সেটা অনির্দিষ্টকাল হবে না।’
এদিকে সংক্ষিপ্ত সফরে রোববার সকাল সাড়ে এগারোটার দিকে সিলেটে আসেন বিএনপি মহাসচিব। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রথমবারের মতো সিলেট সফর করেন তিনি।
সিলেট সফরে এসে তিনি প্রথমে শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন। পরে মির্জা ফখরুল শাহপরান মাজারে যান। পরে বেলা ৩টায় সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় জেলা ও মহানগর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার মাত্র তিন মাসে সব জঞ্জাল দূর করে সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিয়েছিলেন।
২০০১ সালে, বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসাবে প্রথমবারের মতো, শেখ হাসিনা পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। সংবিধান অনুযায়ী সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা না থাকলেও তারা এ ধরনের বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয় এবং অক্টোবরে উচ্চপদে বেশ কয়েকটি রদবদলসহ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ওই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসে।
শিক্ষার্থীদের সহিংস বিক্ষোভের মুখে দেড় বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। তিন দিন পর, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধান মেনে চলার অঙ্গীকার করে শপথ নেন।
সংবিধান অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে। কোনো দৈব দুর্বিপাকে সেটা করা না গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হতে হবে।
তবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময়সীমা সম্পর্কে কিছু বলছে না অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল পত্রিকায় কলাম লিখে সংবিধান স্থগিত বা রদ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গত ১২ অগাস্ট ড. ইউনূসের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে বিএনপির মতবিনিময়ে ভোটের সময়সীমা নিয়ে কোনো আলোচনা করেনি। সেদিন তিনি সাংবাদিকদেরকে বলেন, "একটা নির্দিষ্ট সময় লাগবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে। আমরা তাদেরকে সেই সময়টি আমরা অবশ্যই দিয়েছি। আমরা তাদের সব বিষয়গুলোতে সমর্থন দিয়েছি।"
তবে শপথ গ্রহণের দিন থেকেই সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে কোনো ইঙ্গিত না দিয়েই 'সংস্কারের' কথা বলে আসছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা।
জাতির উদ্দেশে দেয়া দ্বিতীয় ভাষণে ইউনূস নিজেই তার সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য দেননি।
তিনি বলেন, “একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এটার জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদেরকে বিদায় দেবেন।
তবে ইউনূস তার সরকারের দীর্ঘ কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে বলেছেন, তারা একটি ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়তে যান।