গত ১৮ জুলাই সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা পয়েন্টে আন্দোলনরত নিরস্ত্র শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলামের নির্দেশে ও নেতৃত্বে খুব কাছ থেকে গুলি করা হচ্ছিল সেদিন।
বিক্ষোভের প্রতীক হয়ে পুলিশের সাঁজোয়া যানের সামনে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন ইয়ামিন। তখনই গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয় তার বুক।
তারপর আন্দোলনকারীদের ‘শিক্ষা’ দিতে গুলিবিদ্ধ মুমূর্ষু ইয়ামিনকে সাঁজায়ো যানেই সড়ক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একপর্যায়ে টেনে ফেলে দেওয়া হয় সড়কে।
এ ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফুঁসে ওঠেন শিক্ষার্থীরা।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও ফলাও করে প্রচারিত হয় ইয়ামিন হত্যাকাণ্ডের এই দৃশ্য।
ইয়ামিনকে পুলিশ ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যার পর যে নৃশংসতা দেখিয়েছে, তা বর্বরতাকেও হার মানায়।
ইয়ামিন শহীদ হওয়ার পরেই ৫ আগস্ট পতন হয় স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের এতেই সন্তুষ্ট বাবা সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মহিউদ্দিন।
তিনি আর এখন ছেলে হত্যার জন্য চান না মামলা করতেও, তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে দোষীদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনলে আপত্তি নেই ইয়ামিনের বাবার।
শহীদ ইয়ামিনকে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ায় প্রথমে দাফন করার কথা চিন্তা করেন পরিবার । সব প্রস্তুতি নেওয়ার পর সেখানকার থানা থেকে জানানো হয়, ময়নাতদন্ত ছাড়া কোনো লাশ সেখানে দাফন করতে দেওয়া হবে না। তারপর সাভারের তালবাগের কবরস্থানে দাফন করার চেষ্টা করলে সেখানেও একই অজুহাতে বাধা দেওয়া হয়।
অবশেষে ব্যাংক টাউন কবরস্থানের সভাপতির আন্তরিক প্রচেষ্টায় সেখানেই চিরনিন্দ্রায় শায়িত করা হয় শহীদ ইয়ামিনকে।
দুই সন্তানের মধ্যে ইয়ামিন ছিলেন বড়। ইয়ামিনের ইচ্ছা ছিল পছন্দের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিষয়ে পড়াশোনা শেষে বিদেশে পাড়ি জমাবেন উচ্চ শিক্ষার জন্য। সেই স্বপ্ন থমকে গেল বৈষম্য বিরোধী কোটা আন্দোলনে।
এদিকে পুত্র সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় পরিবারের অন্য সদস্যরা। দিনে কয়েকবার বাসার পাশের কবরস্থানে গিয়ে তাই সন্তানের জন্য চোখের পানি ফেলে দোয়া করেন বাবা মহিউদ্দিন।
এদিকে দলের নির্দেশনা অনুযায়ী সাভারের ব্যাংটাউন এলাকায় ইয়ামিনের পরিবারের খোঁজখবর নিতে আসেন জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি।
এদিকে স্বৈরাচার সরকারের নির্দেশ পালন করতে মরিয়া হয়ে যারা ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়েছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপি’র এই নেতা।
শুধু ইয়ামিন’ই নয়, পুলিশের নির্বিচার গুলিতে সাভার সহ গোটা দেশে যারা শহীদ হয়েছেন প্রত্যেকের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।