এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর ঋণ ছাড়ে বিধিনিষেধের মধ্যে কৌশলে টাকা বের করে নিচ্ছে গ্রুপটি। নিয়ন্ত্রণ হারানোর শেষ সময়ে ভেঙে ভেঙে এক কোটি বা তার কম অঙ্কের পে-অর্ডারের মাধ্যমে অর্থ সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।
এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের জামাতা বেলাল আহমেদ এসআইবিএলের চেয়ারম্যান। তাঁর মালিকানাধীন ইউনিটেক্স এলপি গ্যাসের নামে গত ১৯ আগস্ট ৫০ কোটি টাকা বের করা হয়। অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতিটি ৯০ লাখ টাকা চেক জমা দিয়ে এ অর্থ বের করা হয়েছে। এভাবে প্রতিদিনই বিপুল অঙ্কের অর্থ বের করে নিচ্ছে গ্রুপটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
বিধিনিষেধের মধ্যেই এভাবে এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা বের করা হচ্ছে। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সহায়তায় এমন এক সময়ে এভাবে টাকা বের করা হচ্ছে, যখন অনেক আমানতকারী অর্থ পেতে হিমশিম খাচ্ছেন।
নামে-বেনামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ ২ লাখ কোটি টাকার মতো ঋণ নিয়ে বড় অংশই পাচার করেছে। এর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক থেকে অন্তত ৭৫ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে গ্রুপটি। এসআইবিএল থেকে নেওয়া অর্থের পরিমাণ ১৫ থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকার মতো।
জনতা ব্যাংকের রয়েছে ১৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এছাড়া ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ঋণের বড় অংশের সুবিধাভোগী এস আলম গ্রুপ। এর বাইরেও বিভিন্ন ব্যাংকে তার বড় অঙ্কের ঋণ রয়েছে।
মূলত ভোগ্যপণ্য ব্যবসার আড়ালে নন-ফান্ডেড দায়কে ফান্ডেড ঋণে পরিণত করার মাধ্যমে অর্থ বের করা হয়। ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহায়তায় সব ধরনের নির্দেশনা অমান্য করে এ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।
কেবল সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের খাতুনগঞ্জ শাখায় এক হাজার ১১৩ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে ফান্ডেড ৩৭৫ কোটি টাকা। বাকি ৭৩৮ কোটি টাকা নন-ফান্ডেড। মাত্র ৩৪৩ কোটি টাকা সীমার বিপরীতে বিপুল অঙ্কের এ ঋণ দিয়েছে ব্যাংকটি। দুটি এলসির বিপরীতে সৃষ্ট বিলের মাধ্যমে ১৫ কোটি ১ লাখ ৩২ হাজার ৬৬৪ টাকা বের করা হয় ১৬টি পে-অর্ডারের মাধ্যমে।
কেবল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের কর্মীরা শক্ত অবস্থান নিয়েছেন। এরই মধ্যে এস আলম ঘনিষ্ঠ ৬ ডিএমডিসহ ৮ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এস আলমের সহযোগী অন্যরা ভয়ে আর ব্যাংকে ঢুকতে পারছেন না। গত ৬ ও ৭ আগস্ট ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখার মাধ্যমে ৮৪৮ কোটি টাকা বের করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় গ্রুপটি।
এর আগে গত ১৬ আগস্ট এস আলমের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকগুলোর চলতি হিসাব ঘাটতি থাকা অবস্থায় যেন অন্য ব্যাংক এক কোটি টাকার বেশি চেক নগদায়ন না করে সে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ছাড়া গ্রুপটির শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যেই বিপুল অঙ্কের টাকা বের করছে গ্রুপটি।
previous post
next post