ঢাকাকে যেমন মসজিদের শহর বলা হয়, বাংলাদেশকেও তেমনি এনজিওর দেশ বললে অত্যুক্তি হবে না। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে এনজিওদের ইতিবাচক ভূমিকা যেমন আছে, তেমনি নেতিবাচক কার্যক্রমও জনপরিসরে প্রকাশিত। বিভিন্নসময় ক্ষমতার পালাবদলেও এনজিওর রয়েছে একটি দীর্ঘ প্রসারিত হাত।
পাশাপাশি এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা বিদেশী টাকায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার নজিরেরও অভাব নাই। ক্ষুদ্রঋণের নামে গরীবের রক্ত চুষে খাওয়ার এক বিশাল মেশিন এই এনজিও। বর্তমানে দেশের ১৪ কোটি মানুষ ক্ষুদ্র ঋণের বেড়াজালে আটকা পড়ে আছে। সরকারের কাছে স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা আশা করা এইসব এনজিওরা নিজেদের আয়-ব্যায়ের স্বচ্ছতা আর জবাবদিহিতা করতে নারাজ। তাই, সরকার যতোবারই এনজিওদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে চেয়েছে, ততোবারই এনজিও ব্যবসায়ীদের বিরাগভাজন হয়েছে।
স্বাধীনতার পর থেকে এই ১০ বছর আগেও এনজিওদের ব্যবসা ছিলো রমরমা। বাংলাদেশ যেদিন থেকে মধ্যম আয়ের দেশের পথে হাঁটা শুরু করে, তখন থেকেই এই এফডিআই (ফরেন ডেভেলপমেন্ট ইনভেস্টমেন্ট), মানে দাতা সংস্থাদের অনুদান কমতে থাকে। গত ১০ বছরে অসংখ্য এনজিও বন্ধ হয়ে গেছে, বা ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছে। দেশে যদি গরীব না থাকে, অসহায়ত্ব না থকে, বৈষম্য না থাকে. তাহলে এনজিওদের ব্যবসাও থাকে না।
আপনারা যদি দাতা সংস্থার কাছে দেয়া এই এনজিওদের যেকোন প্রোপোজাল পড়েন, তাহলে দেখবেন কত ইনিয়ে বিনিয়ে দেশের দুর্দশার কথা তুলে ধরে ভিক্ষা চাওয়া হচ্ছে। আর হ্যাঁ, মনে রাখবেন, এই টাকা অবশ্যই দেশের চাহিদা অনুযায়ী দেয়া হয় না। বরং, দাতাদের চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্প সাজাতে হয়। যেমন ধরেন, দেশে এখন ধানের ফলন বাড়ানো দরকার, কিন্তু দাতা সংস্থা বলবে, না তোমাদের এখন লটকন চাষ করা উচিত। তখন এনজিওরা ভাতের ব্যবস্থা না করে, আপনাকে লটকনের উপকারীতা শেখাবে এবং লটকন চাষ করার জন্য ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিবে।
যাইহোক, সারাজীবন পশ্চিমা ফর্মুলায় চলা এইসব এনজিও নেতারা এবার দেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে সংখ্যাগরিষ্ঠ জায়গা করে নিয়েছে। ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার জোবরা গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংক নামে যে ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা গড়ে উঠে, সেই ব্যবসার কর্ণধার আজ হয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিপদটা আপনারা টের পাচ্ছেন তো?
এবারের কোটা সংস্কার আন্দোলন দেশে বিদ্যমান এনজিওদের জন্য ছিল একটি বিরাট সুযোগ। কারণ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় ঢুকে গেলেই (লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল ২০৩১ সাল) এনজিওদের জন্য বিদেশী অর্থ বরাদ্দ শুকিয়ে পাবে। এ আশঙ্কায় দেশের ছোট-বড়-ক্ষুদ্র-মাঝারি সবধরনের এনজিও একত্রিত হয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কৌশলে ‘এক দফা’র দিকে নিয়ে যায়।
এনজিও কোটায় যারা উপদেষ্টা হলেন
১. ড. ইউনূস-গ্রামীণ ব্যাংক
২.নূর জাহান বেগম-গ্রামীণ শিক্ষা
৩.সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান-বেলা
৪.সালেহ উদ্দিন-BBK গভর্নর হওয়ার আগে PKSF এর পরিচালক
৫.আদিলুর রহমান-অধিকার
৬.ফরিদা আখতার-উবিনীগ
৭.শারমিন মুরশিদ-ব্রতী
এক দফা’র আন্দোলনের মাঝামাঝি সময়ে কুশীলব হিসেবে নাম আসতে থাকে দেশের অন্যতম বৃহত্তম এনজিও ব্র্যাকের । কারণ এই জায়ান্ট এনজিওর প্রধান কর্মকর্তা কোটা সংস্কার আন্দোলনে যখন শুধু পাবলিক ভার্সিটিগুলো যুক্ত সে সময়ে আমেরিকান এম্বাসেডরের সাথে দেখা করেন ১৪ বা ১৫ জুলাই ২০২৪ এ এবং ১৬ জুলাই তিনি সবগুলো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিকে এ আন্দোলনের সাথে যুক্ত করার ব্যবস্থা করেন। সাথে তো নব নির্বাচিত প্রধান উপদেষ্টা ছিলেনই।
বাংলাদেশ ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে যেন আবার এনজিওগুলোর অর্থ যোগান দিতে পারে, সেই কারণে তার নিজের বুকে গড়ে উঠা সকল উন্নয়ন অবকাঠামোর ছাই নিয়ে আজ ঘুরতে হচ্ছে । যে ধ্বংসযজ্ঞ এক দফা আন্দোলনের নামে ঘটানো হয়েছে এবং হচ্ছে তা অনেকে জাস্টিফাই করছেন যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এমন হয় বলে। অথচ দেশে কোন বহিঃশত্রুর আক্রমণ ঘটেনি। আন্দোলন এবং যুদ্ধ যে এক নয় তা বুঝার মতো বুদ্ধি বিধাতা দেননি বিকারগ্রস্ত উন্মাদ জাতিকে।
এনজিওর ঘাড়ে চড়ে যুদ্ধাপরাধী সৈয়দ মহিবুল হাসান (হবিগঞ্জ চুনারুঘাট-বাহুবল) এর কন্যা সৈয়দা রিজওয়ানাও আজ স্বাধীন বাংলাদেশের উপদেষ্টা।
আমরা জানি না জাতি তার ত্রাতা নির্বাচনের সময় ব্যক্তির ব্যাপারে কোন হোমওয়ার্ক করে কি না। পেছন ফিরে একবার জিজ্ঞেস করে কি না, যে ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ আমাদের প্রতিনিধিত্ব করবে তার বা তাদের মাঝে ন্যূনতম দেশপ্রেম আছে কি না।
সংগ্রাম ও লাগাতার প্রতিরোধ প্রতিবাদের ইতিহাস বাংলাদেশের মানুষের রক্তে। এনজিওবাদীদের অর্থ পিপাসা মেটানোর জন্য তারা নিজেদের বলি দেবে কি না, তাদের শিরায় সাময়িক যে এড্রিনালিন প্রবাহিত হচ্ছে, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নিজেরা নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণের সময় পাবে কি না সেটাই এখন দেখার বিষয়।
(তথ্যসূত্র-ইন্টারনেট
কলমে-টিম বাংলাদেশ চাও?)