বাংলাদেশে বহুল সমালোচিত ব্যবসায়ী এস আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের মোট ৯১টি ব্যাংক হিসাব তলব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এনবিআরের আয়কর বিভাগ থেকে রাজধানীর কর অঞ্চল-১৫ থেকে সব ব্যাংকে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। এস আলম শিল্পগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। এস আলম গ্রুপ বিদায়ী সরকারের আমলে লাভবান হওয়া বৃহত্তম শিল্প গ্রুপগুলির মধ্যে একটি ছিল।
এনবিআর আয়কর বিভাগের রাজধানী কর অঞ্চল-১৫ সূত্রে জানা গেছে, এস আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীন, মা চেমন আরা বেগম ও ভাই আবদুল্লাহ হাসানের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে।
এছাড়া যৌথ নামে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা তাদের বাবা-মা, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে বা বোনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণও চাওয়া হয়। এ ছাড়া তাদের নামে ক্রেডিট কার্ডের তথ্যও চাওয়া হয়। ব্যাংকের পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর ও ডাক বিভাগের কাছে থাকা হিসাবের তথ্য চেয়েছে কর অঞ্চল-১৫।
এস আলমের স্ত্রী ফারজানা পারভীন, ভাই আব্দুল্লাহ হাসান এস আলম লাক্সারি চেয়ার কোচ সার্ভিস, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিল লিমিটেডের পরিচালক। আর এস আলমের মা চেমন আরা বেগম এস আলম লাক্সারি চেয়ার কোচ সার্ভিসের পরিচালক। এস আলম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে গত এক দশকে ব্যাংক দখল, অর্থ পাচারসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। রাষ্ট্রের সহায়তায় তিনি এসব কর্মকাণ্ড করেছেন।
এদিকে, অসন্তুষ্ট এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে, সাইফুল আলমের আত্মীয় এবং ঘনিষ্ঠদের ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
এরপর সাড়ে সাত বছরে বেনামে ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় গ্রুপটি। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম, তার স্ত্রী, মেয়ের স্বামী, আত্মীয়স্বজনসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের নামে এই টাকা তোলা হয়েছে। টাকা তুলতে কোনো নিয়ম মানা হয়নি। শুধু ইসলামী ব্যাংক নয়, আরও ৫টি ব্যাংক তাদের নিয়ন্ত্রণে এবং লুটপাট করেছে এস আলম গ্রুপ।
এস আলম গ্রুপের ৮টি কোম্পানি বিভিন্ন মেয়াদে ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে মোট ১৩টি ঋণ নিয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে এসব ঋণের ভারসাম্য দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ এবং এর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক ঋণের ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করতে বাধ্য হয়।
এদিকে সরকার পরিবর্তনের পর ইসলামী ব্যাংক বেনামি ঋণের মাধ্যমে একদিনে ৮৮৯ কোটি টাকা তুলতে বাধা দেয়। ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর প্রায় ১০ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে এস আলম গ্রুপ। এসব কর্মকর্তার বেশির ভাগই সাইফুল আলমের নিজ এলাকা পটিয়া উপজেলার।
ফলে ব্যাংকটির অর্ধেক কর্মকর্তাই এখন পটিয়ার। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই ২০১৭ সালের আগে নিয়োগ পাওয়া পুরোনো কর্মকর্তারা আন্দোলন শুরু করেছেন ব্যাংকটিকে ‘এস আলম ও পটিয়ামুক্ত’ করতে। এর মধ্যে বিবদমান দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে গুলিবর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে।
ফলে ব্যাংকের অর্ধেক কর্মকর্তা এখন কুমার। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরপরই, ২০১৭ সালের আগে নিয়োগপ্রাপ্ত পুরানো কর্মকর্তারা ‘এস আলম ও পটিয়ামুক্ত’ ব্যাংকে আন্দোলন শুরু করেন। এর মধ্যে প্রতিপক্ষ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গোলাগুলির ঘটনাও ঘটেছ।
previous post