
মনজুর আহমেদ
সিনিয়র সাংবাদিক
কারা সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিচ্ছে?
বাংলাদেশে তিন সপ্তাহের আন্দোলনে ৫০০-এরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকেই রয়েছে। পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারার সে সব হৃদয়বিদারক দৃশ্য ফেসবুকে দেখে পৃথিবীর মানুষ শিউরে উঠেছে। কিন্তু ওদের হৃদয় কাঁপেনি।
ওরা এর প্রতিবাদ জানায়নি, মিছিল-সমাবেশ করেনি। বরন্চ ওদের কাউকে কাউকে দেখা গেছে শেখ হাসিনার পক্ষে অর্থাৎ এই হত্যাযযজ্ঞের সমর্থনে হাতে হাত মিলিয়ে দাঁডিয়ে গেছে ডাইভারসিটি প্লাজায় আওয়ামী লীগের জমায়েতে।
এখন দেখছি ওরা সোচ্চার হয়ে উঠেছে মানবতার পক্ষে। ওরা রাস্তায় নেমেছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিরুদ্ধে।
কার বিরুদ্ধে ওরা ক্ষোভ প্রকাশ করছে? পুরো দুইদিনও হয়নি যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের বিরুদ্ধে? সাংবাদিক সম্মেলন করে ওরা দাবী জানিয়েছে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সেনা প্রধানকে ‘আইনের আওতায়’ নেওয়ার। ওদের যুক্তি, সেনা প্রধান সব দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
হ্যাঁ, সেনা প্রধান তার তিন দিনের সময়কালে দেশের অরাজক পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেননি। ধসে পড়া প্রশাসন, পুলিশবিহীন দেশ, চারদিক বিশৃঙ্খলা, লুটেরা-দুর্বৃত্তদের বেপরোয়া তৎপরতা ইত্যাদি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি।
খোদ ঢাকা শহরেও রাতভর ডাকাতি বন্ধ করতে পারেননি। এগুলি বন্ধ করতে সহায়তার হাত বাডিয়েছে এলাকাবাসী, সাধারণ মানুষ। তারা কিন্তু সেনা প্রধানের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ করেনি, ক্ষোভ প্রকাশ করেনি।
তার চাইতে বড কথা, এই অরাজক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন আপামর মানুষ, শুধু সংখ্যালঘুরা নয়। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িঘরে আগুন জ্বলেছে, অনেককে হত্যা করা হয়েছে।
কিন্তু এখন সংখ্যালঘুদের প্রতি দরদ দেখিয়ে যারা রাস্তায় নেমেছেন, টাইমস স্কয়্যারে জমায়েত করেছেন, জাতিসংঘে ছুটে গেছেন, তারা খুঁজে খুঁজে বের করেছেন শুধুই সংখ্যালঘুদের। তাদের ইস্যু শুধু সংখ্যালঘু, অন্যরা নয়। তাদের মানবতা শুধু সংখ্যালঘুদের জন্য। অন্যরা বোধহয় তাদের কাছে মানব সন্তান নয়!
এই মানুষগুলিকে আমার ভয়ানক রকমের সাম্প্রদায়িকতা মনে হয়। এরাই বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতা সম্প্রীতি বিনষ্টে ইন্ধন যুগিয়ে চলেছে।
———————————————–
আন্তর্জাতিক খবর দেখতে এখানে ক্লিক করুন এবং ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন ।