কি হচ্ছে বাংলাদেশে?
বেকুব লোকজন মনে করছে স্বাধীনতা এনে ফেলেছে। আসলে গত দুই টার্ম হাসিনাকে পুতুলের মত সামনে রেখে দেশে অলিগাগার্ক/সামরিক/গোয়েন্দা শাসনই ছিল যাকে ডিপ স্টেট বলা হয়। একথা আমরা সবসময় খোলাখুলি বলেছি। সংসদ ছিল পাপেট শো এর মত। বাইরে ছিল আওয়ামী লিগের নামে লুটপাটের বাহিনী এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছিল দালাল শিক্ষক ও ছাত্রলীগ নামে সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রনে। প্রকৃত আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীদের আগেই বের করে দেওয়া হয়েছিল। সবাইকে বের করে দিলেও শেখ হাসিনার ইমেজ ছিল অসম্ভব শক্তিশালী। সেটা ছাড়া চলা সম্ভব ছিল না। সেই ডিপ স্টেট রয়েই গেছে হয়ত ব্যক্তি পরিবর্তিত হবে। শুধু শেখ হাসিনাকে সরিয়ে আর এক নোবেল পাওয়া ইমেজকে আনা হয়েছে। এরকম ঘটনা দুনিয়াতে এটাই প্রথম নয়। এই ঘটনায় কে দায়ী কে দায়ী না সেই প্রশ্ন ভিন্ন। শত শত মানুষের মৃত্যুর জন্য তার হিসাব নিশ্চই একদিন হবে। গত ১৫ বছরে গুম খুনে যত মানুষ নিহত হয়েছে তার চেয়ে ঢের বেশি মানুষ মারা গেছে এই গত কয়েক দিনে। এই পরিবর্তনের কুশীলবদের সেই দায় নিতে হবে।
কি হচ্ছে বাংলাদেশে?
কিন্তু তার চেয়েও বড় প্রশ্ন সামনে কি হবে। সকল ইন্ডিকেশন বলছে আমরা ইরাকের পরিণতি ভোগ করতে যাচ্ছি। চ্যাট জিপিটিকে বললাম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রেজিম চেঞ্জ বা শাসন পরিবর্তনের জন্য যে বিভিন্নভাবে হস্তক্ষেপ করেছে তার তালিকা দিতে। তালিকাটি দেবার পর মনে হল এই যে বিদেশ প্রভাবিত অরাজনৈতিক রেজিম চেঞ্জ, তার পরিণতিতে হত্যাকান্ড কত হয়েছে? চ্যাট জিপিটিকে বললাম আগের লিস্টের নিচে নিহত মানুষের সংখ্যা যোগ কর। নিচের লিষ্টে দেখুন এইসব কান্ডের ফলে বিপুল মানুষের নিহত হবার সংখ্যা। অরাজনৈতিক রেজিম চেঞ্জের এইসব ঘটনা পরবর্তিতে গণহত্যা বা সিভিল ওয়ারের বাটারফ্লাই ইফেক্ট হিসাবে কাজ করে। এই পোস্টে আমাকে নানা প্রশ্ন করে লাভ নেই। আমাদের জীবন আমরা কাটিয়ে এসেছি। যারা তরুণ এবং যারা জেনজি বলে গর্ব করছেন, বয়ষ্কদের কথায় কথায় অপমান করছেন, স্বাধীনতা আনা মুজিবের মূর্তির উপর মুত্রত্যাগ করছেন, আপনাদের জীবন সামনে। সারা দুনিয়া ভেঙ্গে পড়ছে অর্থনৈতিক মেল্টডাউন ও পরবর্তি বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কায়। কাদের পক্ষে খেলছেন? কিসের বিনিময়ে আর কিসের দায়ে সেটা বুঝে শুনে চলুন। ১৯৭১ থেকেই এটা স্বাধীন দেশ।
কি হচ্ছে বাংলাদেশে?
চ্যাটজিপিটি: নিচে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন দেশে শাসন পরিবর্তনের হস্তক্ষেপের তালিকা সঠিক ক্রম অনুসারে এবং প্রতিটি ঘটনার জন্য আনুমানিক প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখ করা হলো, এই তালিকা সংক্ষিপ্ত:
১. ১৯৪৭: ইতালি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিতে সোভিয়েত-সমর্থিত কমিউনিস্ট পার্টির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কমিউনিস্টদের পরাজিত করার জন্য গোপনে আর্থিক সহায়তা এবং প্রোপাগান্ডা ব্যবহার করে। মার্কিন প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ ১৯৪৮ সালের নির্বাচনে ডানপন্থী দল বিজয়ী হয়।
- প্রাণহানি: সরাসরি সহিংসতার তথ্য নেই, তাই প্রাণহানির সংখ্যা শূন্য বলে ধরা হয়।
২. ১৯৫৩: ইরান
মোহাম্মদ মোসাদ্দিক ১৯৫১ সালে ইরানের প্রধানমন্ত্রী হন এবং ইরানের তেল সম্পদ জাতীয়করণের উদ্যোগ নেন। যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করে এবং ১৯৫৩ সালে সিআইএর সহায়তায় মোসাদ্দিককে ক্ষমতাচ্যুত করে। তার পরিবর্তে শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভিকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয়। - প্রাণহানি: আনুমানিক ২০০-৩০০ জন।
৩. ১৯৫৪: গুয়াতেমালা
গুয়াতেমালার প্রেসিডেন্ট জাকোবো আরবেনজ যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির জমি পুনঃবণ্টনের চেষ্টা করেন। সিআইএ আরবেনজকে ক্ষমতাচ্যুত করতে অপারেশন পিবিসাক্স (PBSUCCESS) পরিচালনা করে, এবং কর্নেল কার্লোস কাস্টিলো আরমাসকে নতুন শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। - প্রাণহানি: ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত চলমান গৃহযুদ্ধে আনুমানিক ২০০,০০০ জন।
৪. ১৯৬০-১৯৬৫: কঙ্গো (বর্তমান ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো)
প্যাট্রিস লুমুম্বা কঙ্গোর প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং পশ্চিমা শাসনের বিরোধিতা করেন। ১৯৬০ সালে সিআইএর সহায়তায় লুমুম্বাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় এবং পরে তাকে হত্যা করা হয়। ১৯৬৫ সালে জেনারেল মোবুতু সেসে সেকো ক্ষমতায় আসেন এবং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন পান। - প্রাণহানি: আনুমানিক ১০০,০০০ জন।
৫. ১৯৬১: কিউবা
কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রো ক্ষমতায় আসার পর যুক্তরাষ্ট্র তার কমিউনিস্ট শাসনের বিরোধিতা করে। ১৯৬১ সালে সিআইএ সমর্থিত বেহিয়া দে কোচিনোস (বেহিয়া অফ পিগস) আক্রমণ পরিচালনা করে ক্যাস্ত্রোকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু এই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। - প্রাণহানি: আনুমানিক ১২০ জন।
৬. ১৯৬৩: ইরাক
১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে সামরিক অভ্যুত্থানে সহায়তা করে যা প্রধানমন্ত্রী আব্দুল করিম কাসেমকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এই অভ্যুত্থানের ফলে বাথ পার্টি ক্ষমতায় আসে, এবং সাদ্দাম হুসেইনের রাজনৈতিক উত্থান শুরু হয়। - প্রাণহানি: আনুমানিক ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ জন।
৭. ১৯৬৫: ইন্দোনেশিয়া
১৯৬৫ সালে সিআইএ ইন্দোনেশিয়ার সামরিক বাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে কমিউনিস্ট পার্টি (পিকেআই) সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। প্রেসিডেন্ট সুকর্ণ ক্ষমতাচ্যুত হন এবং জেনারেল সুহার্তো ক্ষমতায় আসেন। এই অভ্যুত্থানের ফলে লাখ লাখ মানুষ নিহত হয়। - প্রাণহানি: আনুমানিক ৫০০,০০০ থেকে ১ মিলিয়ন জন।
৮. ১৯৬৬: ঘানা
প্রেসিডেন্ট ক্বাম নক্রুমা ঘানার স্বাধীনতার নেতা ছিলেন এবং সমাজতান্ত্রিক নীতির অনুসারী ছিলেন। ১৯৬৬ সালে, সিআইএ সমর্থিত সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নক্রুমাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। - প্রাণহানি: প্রাণহানির সংখ্যা কম ছিল, নির্দিষ্ট সংখ্যা জানা নেই।
৯. ১৯৭৩: চিলি
চিলির সমাজতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দে ১৯৭০ সালে নির্বাচিত হন। তার শাসনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে এবং সিআইএ সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন করে। ১৯৭৩ সালে চিলির সামরিক বাহিনী অভ্যুত্থান করে আলেন্দেকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং জেনারেল অগুস্তো পিনোশে ক্ষমতায় আসেন। - প্রাণহানি: আনুমানিক ৩,০০০ থেকে ১০,০০০ জন।
১০. ১৯৭৬: আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট ইসাবেল পেরনের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়, যা সিআইএর সমর্থনে হয়। এই অভ্যুত্থানের ফলে দেশটি একটি নৃশংস সামরিক শাসনের অধীনে চলে যায় যা হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়। - প্রাণহানি: আনুমানিক ১০,০০০ থেকে ৩০,০০০ জন।
১১. ১৯৮০-এর দশক: নিকারাগুয়া
নিকারাগুয়ার সান্দিনিস্তা সরকারকে উৎখাত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র গোপনে কন্ট্রাস বিদ্রোহীদের সমর্থন করে। রোনাল্ড রেগানের প্রশাসন কন্ট্রাসদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সহায়তা দেয়, যা নিকারাগুয়ায় গৃহযুদ্ধের সৃষ্টি করে। - প্রাণহানি: আনুমানিক ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ জন।
১২. ১৯৮১: ইরান
১৯৮১ সালে ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়, যুক্তরাষ্ট্র ইরাকের সাদ্দাম হুসেইনকে সামরিক এবং গোয়েন্দা সহায়তা প্রদান করে, যার মাধ্যমে ইরান বিপ্লবী সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। - প্রাণহানি: আনুমানিক ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ জন (যুদ্ধের উভয়পক্ষ মিলিয়ে)।
১৩. ১৯৮৩: গ্রেনাডা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৩ সালে গ্রেনাডায় সামরিক হস্তক্ষেপ করে, যার মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী মরিস বিশপকে উৎখাত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র “অপারেশন আরবেন্ট ফিউরি” পরিচালনা করে এবং গ্রেনাডায় মার্কিন সমর্থিত সরকার প্রতিষ্ঠা করে। - প্রাণহানি: আনুমানিক ১০০-২০০ জন।
১৪. ১৯৮৯: পানামা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৮৯ সালে “অপারেশন জাস্ট কজ” নামে একটি সামরিক অভিযান চালায় এবং পানামার শাসক ম্যানুয়েল নরিয়েগাকে ক্ষমতাচ্যুত করে। নরিয়েগা মাদক চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন। - প্রাণহানি: আনুমানিক ৫০০ থেকে ৪,০০০ জন।
১৫. ১৯৯১: হাইতি
১৯৯১ সালে হাইতির প্রেসিডেন্ট জ্যঁ-বেরত্রঁ আরিস্তিদকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে উৎখাত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সরকারকে স্বীকৃতি প্রদান করে এবং আরিস্তিদকে পুনরায় ক্ষমতায় আনার জন্য একটি সামরিক হস্তক্ষেপের হুমকি দেয়। - প্রাণহানি: কয়েকজন নিহত, সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা নেই।
১৬. ২০০১: আফগানিস্তান
৯/১১ সন্ত্রাসী হামলার পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র “অপারেশন এনডিউরিং ফ্রিডম” নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে এবং তালেবান সরকারকে উৎখাত করে। এই অভিযানের মাধ্যমে আফগানিস্তানে একটি নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। - প্রাণহানি: আনুমানিক ১ লাখ ৭৬ হাজার থেকে ২ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ।
১৭. ২০০৩: ইরাক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা ২০০৩ সালে ইরাকে সামরিক আক্রমণ চালায় এবং সাদ্দাম হুসেইনের শাসনকে উৎখাত করে। যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তি ছিল যে, ইরাক গণবিধ্বংসী অস্ত্র তৈরি করছে, যদিও পরবর্তীতে এমন কোনও অস্ত্র পাওয়া যায়নি। - প্রাণহানি: আনুমানিক ২ লাখ থেকে ৫ লাখের বেশি মানুষ।
১৮. ২০১১: লিবিয়া
আরব বসন্তের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার ন্যাটো মিত্ররা লিবিয়ার শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। এই অভিযানের ফলে গাদ্দাফি উৎখাত হন এবং পরে তাকে হত্যা করা হয়। - প্রাণহানি: আনুমানিক ১০,০০০ থেকে ৫০,০০০ জন।
এই তালিকায় উল্লেখিত প্রতিটি ঘটনাই নির্দিষ্ট দেশের ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আসলেই কি হচ্ছে বাংলাদেশে?
—————————————————————————— সংগৃহীত——————————————————————————————
বাংলাদেশের আরো খবর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে আপডেট খবর দেখতে সাবস্ক্রাইব করে আপডেট নিউজ দেখুন New York Bangla Life