“কোটা সংস্কার থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং এক দফা আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে ছাত্রশিবির নিজের
ব্যানারকে, দলীয় প্রচারকে ও নিজস্ব ইমেজকে স্যাক্রিফাইস করে প্রতিটি আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল, আছে
এবং ভবিষ্যতেও থাকবে, ইনশাআল্লাহ।”
কোটা আন্দোলন ও এক দফার নেতৃত্বে ছাত্র শিবির: বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্বীকার
সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলন ও সরকার পতনের একদফা দাবিতে অসহযোগ আন্দোলনে নেতৃত্ব
দেওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করল সন্ত্রাসিবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ হওয়া জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র
সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পর হামলা, আর হত্যার মচ্ছবের মধ্যে
গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এই বিষয়টি সামনে আনে সংগঠনকি।
এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম
যৌথ বিবৃতিতে এই তথ্য ফাঁস করেন।
কোটা আন্দোলনে সংঘাত-সহিংসতা শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল,
ছাত্রদের আবেগকে ব্যবহার করে তৃতীয় পক্ষ ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। এই তৃতীয় পক্ষ বলতে জামায়াত-
শিবিরকেই বারবার বুঝিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।
তবে তাদের এই বক্তব্য দেশবাসীর মধ্যে এমনকি আওয়ামী লীগ পন্থি হয়েও এই আন্দোলনে সমর্থন দেওয়া
মানুষদের মধ্যেই দাগ কেটেছে এমনটি নয়।
তবে শেখ হাসিনা তার বোন শেখ রেহানাকে দিয়ে দেশ ছেড়ে যাওয়ার পর শিবিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “বৈষম্যবিরোধী এই মহাযাত্রায় ছাত্রসমাজের প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী
ছাত্রশিবিরের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা তাদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিতে এতটুকুও কার্পণ্য করেনি। কোটা
সংস্কার থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং এক দফা আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে ছাত্রশিবির নিজের
ব্যানারকে, দলীয় প্রচারকে ও নিজস্ব ইমেজকে স্যাক্রিফাইস করে প্রতিটি আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিল, আছে
এবং ভবিষ্যতেও থাকবে, ইনশাআল্লাহ।”
ছাত্র শিবিরের আসল উদ্দেশ্য কী, সেটিও এই বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, ”বৈষম্যের
অবসান ঘটিয়ে তথা, জুলুম-নিপীড়নের মূলোচ্ছেদ করে ভ্রাতৃত্ব ও ন্যায়ের সৌধের উপর এক আদর্শ সমাজ
বিনির্মাণ-ই ইসলামী ছাত্রশিবিরের আদি ও চিরন্তন উদ্দেশ্য।”
অর্থাৎ বাংলাদেশে তারা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়, অথচ এই আন্দোলনে সরকার পতনের
এক দফার কথা প্রথম প্রকাশ্যে বলেছিলেন বামপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
বামপন্থিরা শুরু থেকেই কোটা আন্দোলনকে ব্যবহার করে সরকারের বিরুদ্ধে জনমতকে উসকে দিয়েছেন।
ফেসবুক লেখনিতে তারাই ছিলেন এগিয়ে।
শিবিরের শীর্ষ দুই নেতার বিবৃতিতে বলা হয়, “২৮ অক্টোবর ২০০৬ লগি-বৈঠার পৈশাচিক গণহত্যা থেকে
অদ্যাবধি, বিশেষত গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন ‘শিবির’ ট্যাগের আড়ালে বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান
গ্রহণকারী ছাত্রদেরকে হত্যা-নির্যাতন অলিখিতভাবে বৈধ করে নিয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
বরাবরই ডিভাইড অ্যান্ড রুল এর ‘ঘৃণ্য অপকৌশল’ ভেঙে দিতে সচেষ্ট ছিল।
“তথাপি বিগত ১৬ বছরে ছাত্রশিবির নজিরবিহীন দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে এই জুলুমের অবসানের জন্য কাজ
করেছে৷ কিন্তু এতদিন ফ্যাসিবাদের পতন ঘটাতে সক্ষম হয়নি। ছাত্র-নাগরিক অভ্যুত্থানে আপামর ছাত্র-
জনতার অংশগ্রহণ এই জুলুমশাহীর পতন নিশ্চিত করেছে। সারাদেশে আপামর ছাত্র-জনতা যে অসাধারণ ত্যাগ
স্বীকার করেছে, এই ত্যাগ আমাদেরকে উজ্জীবিত ও কৃতজ্ঞ করেছে।”
বিবৃতির শেষে একটি স্লোগান দেয়া হয়, সেটি হল ‘বিজয়ের সুফল চাই, বিভেদ নয় ঐক্য চাই’।
এর আগে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে
অন্তর্বর্তী যে সরকারের ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে তিনি প্রথম নামটিই উল্লেখ করেন জামায়াতে ইসলামীর
আমির শফিকুর রহমানের।
আইনত জামায়াত এখন নিষিদ্ধ সংগঠন। নতুন সরকারি আদেশ আসার আগ পর্যন্ত এটি বৈধ সংগঠন নয়।
অবৈধ দলের সঙ্গে সেনাপ্রধান কেন বৈঠক করেছেন, সেই প্রশ্ন করার সুযোগ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে নেই,
যদিও অনেক সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে এখন দেশে মত প্রকাশ করার অবারিত সুযোগ।
এরপর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় বঙ্গভবনে যাওয়ার সময়ও সেনাপ্রধান জামায়াতের তিন জন, হেফাজতে
ইসলামের তিনজন আর চরমোনাইয়ের পীরের ইসলামী আন্দোলনের তিনজন এমনকি জাকের পার্টির এক
নেতাকে নিয়ে যান।
সরকার পতনের প্রথম দিনই লুট করা হয়েছে একাত্তর টেলিভিশনের কার্যালয়, দুইবার আগুন দেয়া হয়েছে
তাতে। সময় টেলিভিশনে হামলা হয়েছে। ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে হামলার পর বিএনপিপন্থি এক সাংবাদিক
ছাত্রদল ও বিএনপির নেতাদেরকে ফোন করে বলেছেন, এই টেলিভিশন এখন তারা চালাবেন। পরে হামলাকারীরা
ফিরে যায়।
বাংলা সিনেমা চালানোর জন্য সুপরিচিত মাইটিভি আর গানের চ্যানেল গানবাংলাও তছনছ হয়েছে।
হামলা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রায় সব ভাস্কর্য আর ম্যুরালে। ভাঙচুর করার সময় ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু
আকবার’ স্লোগান দেওয়া হয়েছে। সংসদ ভবনে ঢুকেও দেওয়া হয়েছে এই স্লোগান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অন্তর্বর্তী সরকারে হিস্যা দাবি করলেও সেটি সেখানে যে বিএনপি, জামায়াত-
শিবির আর হেফাজতের ইচ্ছার বাইরে যাওয়ার সুযোগ কম তা আপাতত বুঝতে পারছে না তারা।