শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ব্যাংকিং খাতে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। ইতোমধ্যে অনেক ব্যাংকের পরিবর্তন এসেছে, মানুষ দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ভালো ব্যাংকে জমা করছে।
এমন পরিস্থিতিতে কয়েকটি ব্যাংকের ভল্ট খালি থাকলেও অনেক ব্যাংকে টাকা রাখার জায়গা নেই। অতিরিক্ত জমার কারণে অনেক শাখা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে টাকা জমা করছে। গত পাঁচ দিনে বিভিন্ন ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমা করেছে ২ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার পতনের পর কয়েকদিন নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা নিচ্ছিল ব্যাংকগুলো। তবে গেল সপ্তাহের পাঁচ দিনে যত টাকা নিয়েছে, জমা করেছে তার চেয়ে বেশি।
গত ২২ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে জমা হয় ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গত ১৮ আগস্ট তা ছিল ১০ হাজার ৯০৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে নোটস ইন সার্কুলেশন বা প্রচলনে থাকা টাকার পরিমাণ কমে গত ২২ আগস্ট ৩ লাখ ১৯ হাজার ৪৬৯ কোটিতে নেমেছে। গত ১৫ আগস্ট তা ছিল তিন লাখ ২২ হাজার ৬১ কোটি টাকা।
এর আগে গত ৬ আগস্ট সরকার পতনের পরদিন প্রচলন ছিল ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। আর সরকার পরিবর্তনের পর ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ৯ দিনে মানুষের হাতে টাকার পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৫২২ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, সার্কুলেশনে থাকা নোটের মধ্যে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে সারাদেশে ১১ হাজারের মতো ব্যাংক শাখার ভল্টে ১৬ থেকে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো জমা থাকে। সার্কুলেশনে থাকা বাকি টাকা রয়েছে নাগরিকদের পকেট, ঘরের আলমারি, সিন্দুক কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
জানা গেছে, অনেকে দুর্নীতিসহ নানাভাবে উপার্জিত টাকা ঘরে রেখেছিলেন। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর তাদের অধিকাংশই পলাতক। কেউ কেউ ঘরে টাকা রেখে এখন বিপদে পড়েছেন। নিরাপদ বোধ না করায় তারা বিভিন্নভাবে ভালো ব্যাংকে টাকা জমা রাখছে।
সরকার পতনের পর থেকে মানুষ বড় অঙ্কের নগদ টাকা তুলতে পারছে না। কারণ সরকার পতনের প্রথম সপ্তাহে সর্বোচ্চ এক লাখ, দ্বিতীয় সপ্তাহে দুই লাখ এবং তৃতীয় সপ্তাহে তিন লাখ টাকা উত্তোলনের সীমা নির্ধারণ করা হয়। এ কারণে অনেকেই খারাপ অবস্থার ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের আমানত তুলতে পারছেন না।
সমস্যায় পড়া ন্যাশনাল, পদ্মাসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংকে টাকা তোলার চাপ রয়েছে। সীমা প্রত্যাহার হলেই এসব ব্যাংকের প্রকৃত সংকট বোঝা যাবে। বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেও গ্রাহক ধরে রাখতে পারছে না এসব ব্যাংক। অনেকেই এসব ব্যাংক থেকে মেয়াদি আমানত ভঙ্গ করে পে-অর্ডার নিয়েছেন।

previous post