সিরাজুল হোসেন
অনেকেই আমাকে প্রশ্ন করে পোস্টে বা মেসেজ করে যে বর্তমানের বাংলাদেশে যা ঘটছে তার সমাধান কি? উত্তরে বলি যা করা হচ্ছে তার কোন সমাধান দেখি না। তিন চারটা শক্তি রাষ্ট্রের কাঠামো ধ্বংস করতে নেমেছে যাদের কারো উপর কারো নিয়ন্ত্রন নেই। সামনে আছেন ড: ইউনুসের দল, তাদের শক্তি অতি সীমিত আর দলের বেশিরভাগের মাথায়ই সমস্য।
নিজ নিজ এজেন্ডা নিয়ে তারা ব্যস্ত। ১৮ কোটি লোকের দেশ চালানোর দায়িত্ব নিয়েছেন যারা এখনও বেশিরভাগ দিন আনে দিন খায়। আপনাদের হাতে নিয়ন্ত্রণ না থাকলে ছেড়ে দিন। সেটা না করে উনারা ছিঁচকে চোর ধরতে ব্যাস্ত অথবা ব্যক্তিগত ক্ষোভের প্রতিশোধ নিতে।
টাকা পাচার আর খেলাপি ঋণের টাকায় দেশ চলে না। বিশাল জিডিপির এগুলো স্পিলওভার মাত্র। টাকা পাচার হয় কালো টাকা, যেগুলো অর্থনীতির হিসাবের বাইরের টাকা। আর খেলাপি ঋণেের বেশিরভাগ কাগুজে টাকা, প্রিন্টেড মানি। অর্থনীতি যারা গভীরভাবে বোঝে তারা এটা জানে। সেই জন্যই এই দুটোকে প্রশ্রয় দেয় সব সরকার। দেশের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোটাকে ধ্বংস করা হচ্ছে অবারিতভাবে। এখন কে এর সমাধানের দায়িত্ব নেবে? কেনই বা নেবে? অনেক বলছে আওয়ামী লীগ, কিন্তু তারা কেন আসবে, কেনই বা নেবে?
প্রশ্ন হচ্ছে একটি দেশে বিপ্লব হোক বা সামরিক ক্যু, যা বাংলাদেশে অনেকবার হয়েছে, তাদের একটা পরিকল্পনা থাকে, একটা দায়িত্ববোধ বা কমিটমেন্ট থাকে। নতুন ক্ষমতায় এসে তারা দ্রুত দেশের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক কাঠামোকে কার্যকরী করে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতার দিকে নজর দেয়। কিন্তু এবার তার ছিটেফোটাও দেখা যাচ্ছে না। উল্টো তারাই দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার জন্য একের পর এক অপকর্ম হাত নিচ্ছে।
সাধারণত এমন হয় যখন কোন দেশে সিআইএ এর ফর্মুলায় সরকার পরিবর্তন হয়। কারণ তখন সরকার পরিবর্তনে একাধিক গোষ্ঠির সম্মিলিত শক্তি ব্যবহৃত হয় কিন্তু তাদের মধ্যে কোন প্রারম্ভিক বোঝাপাড়া বা ক্ষমতা পরিবর্তনের পর কি হবে তার নীলনকশা থাকে না। এমনকি এদের মধ্যে অনেকে পরষ্পরের বিরোধী বা পরষ্পরের শত্রুরাও যুক্ত হয় সরকার ফেলে দিতে। কারণ উদ্দেশ্য সরকার ফেলা, একসাথে দেশ পরিচালনা নয়।
এমন হয় কারণ সব রেজিম চেঞ্জের যোগাযোগ ও পরিকল্পনা হয় ভিন্ন দেশের আন্ডারকাভার এজেন্টদের মাধ্যমে। ফলে সরকার পরিবর্তনের পর সেই এজেন্টরা উধাও হয়ে গেলে দেশটা পড়ে যায় কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে যাদের মধ্যে কোন একক লক্ষ্য বা বোঝাপাড়া নেই। কেউ যে মধ্যস্থতা করবে তেমনও কেউ থাকে না।
কারো নেতৃত্বও থাকে না। এটাকে তারা বলে মাল্টিপল স্টেকহোল্ডার অপারেশন। ঠিক এই কারণেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আরব স্প্রিং এর পর আই এসের মত সন্ত্রাসবাদের উদ্ভব হয়েছে, ধ্বংস হয়ে গেছে ওই সব দেশের রাষ্ট্রকাঠামো, শিল্প, কলকারখানা। ধ্বংস হয়েছে অর্থনীতি। মানুষের জীবন চলে গেছে সীমাহিন দুর্ভোগের অতলান্তে।