রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৫০০ কোটি ডলারের অর্থ আত্মসাৎ করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পোরেশন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা-রোসাট্রম শেখ হাসিনাকে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে এই অর্থ আত্মসাতের সুযোগ করে দেয়, যার মধ্যস্থতা করেন তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয় এবং ভাগ্নী টিউলিপ সিদ্দিক।
সম্প্রতি গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পোরেশন এ বিষয়ে নিজস্ব গবেষণার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প নামে পোর্টালটি ২০১৮ সালে চালু করা হয়। তারা বিভিন্ন দেশের সামরিক ও প্রতিরক্ষা খাতে দুর্নীতির অনুসন্ধান করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও ব্যয়বহুল প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের পর এটি দেশের বিদ্যুতের চাহিদার ২০ শতাংশ পূরণ করবে বলে আশা করা হয়।
এতে আরও বলা হয়, রাশিয়ার সহায়তায় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ২৬৫ মিলিয়ন ডলার। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। যাতে করে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনার এই বাজেটের ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা-রোসাট্রম। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা- রোসাট্রম।
ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকীর মধ্যস্থতায় রাশিয়ার সঙ্গে এই চুক্তি করেন তৎকালীন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার হওয়া অর্থের ৩০ শতাংশ পান টিউলিপ, শেখ রেহানা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য।
২০১৩ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় শেখ হাসিনার সহচর ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের মতে, সে সময়ে ঢাকা-মস্কো বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তিতেও তিনি মধ্যস্থতা করেন।
২০০৯ সালে টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা শেখ রেহানা এবং চাচা, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক ‘প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানি চালু করেন। তাদের অ্যামেরিকা জুমানা ইনভেস্টমেন্টস নামে একটি কোম্পানিও রয়েছে।
গ্লোবাল ডিফেন্স কর্প বলছে, শেখ হাসিনা এই কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থ পাচার করতেন। তাদের কোম্পানি ডেসটিনি গ্রুপ নামে একটি প্রতারণা তহবিল কোম্পানির সাথে যুক্ত এবং প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার অ্যামেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছে।
এদিকে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্ব হতে পারে বলে জানান রুশ রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মান্টিটস্কি। গত বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে তিনি এ কথা বলেন।
রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে কিছুটা বিলম্ব হতে পারে। তবে এটা কঠিন নয়।
রাশিয়ার সহায়তায় পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১২ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন ডলার। এটি তৈরি হলে এর দুটি ইউনিট থেকে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে।
প্রকল্পের ৯০ ভাগ অর্থায়ন হচ্ছে রাশিয়ার ঋণে। সরকার জোগান দিচ্ছে ১০ ভাগের। প্রকল্পটিতে ভিভিইআর প্রযুক্তির তৃতীয় প্রজন্মের পরমাণু চুল্লি ব্যবহার করা হয়। যার প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট। প্রথম ইউনিটটি চলতি বছর এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৫ সালে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়ামের প্রথম চালান গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর দেশে আসে। পরে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তা বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে রাশিয়া।