ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির এক মাস পূর্তি উপলক্ষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘শহীদি মার্চ’ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বেলা পৌনে চারটার দিকে ‘শহীদি মার্চ’ নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, কলাবাগান, মিরপুর রোড ধরে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ও সংসদ ভবনের সামনে দিয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এমন একটি দেশ গড়তে চায় যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো দানব তৈরি হবে না। ফলে যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকারকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সময় দিতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের মাঠে থাকতে হবে।
মিছিলে তাঁরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। এর মধ্যে রয়েছে ‘শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘আইয়ুব-মুজিব-হাসিনা স্বৈরাচার মানি না’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’ প্রভৃতি।
মিছিলের আগে সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের সমন্বয়ক নাজমুল হাসান বলেন, ‘এমন একটা বাংলাদেশ তৈরি করতে চাই, যেখানে আর কোনো শেখ হাসিনা, দৈত্য-দানব তৈরি হবে না। বৈষম্যহীন, সন্ত্রাসমুক্ত, দখলদারিমুক্ত, দুর্নীতিবাজমুক্ত একটি দেশ গড়তে চাই। সেই দেশে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের ঠাঁই হবে না।’
আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে নাজমুল হাসান বলেন, ছদ্মবেশে থাকা লীগকে প্রতিহত করা হবে। শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কূটনৈতিক সম্পর্ক চাইলে ভারতকে বাংলাদেশের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত দিতে হবে।
এখনো যুদ্ধ শেষ হয়নি বলে উল্লেখ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক ও ঢাকা কলেজের সমন্বয়ক মো. রাকিব। তিনি বলেন, ‘এই রাষ্ট্র সংস্কার করতে দিতে হলে মাঠে থাকতে হবে। যেকোনো সময় প্রতিবিপ্লব হতে পারে। ছাত্রলীগ এখনো ছদ্মবেশে মাঠে নামে। কখনো আনসার, কখনো রিকশাচালক, কখনো পল্লী বিদ্যুৎকর্মী, কখনো গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে মাঠে নামে। দেশের মানুষ যেটা চায়, সেটার পক্ষে যদি না আসেন, চিহ্নিত করে তাদের ধরিয়ে দেব।’
শিক্ষার্থীরা হাতে আইন নিতে চায় না উল্লেখ করে মো. রাকিব বলেন, রাষ্ট্রের কাঠামো এখনো ঠিকমতো কাজ করছে না। সংস্কার করে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা কলেজের সমন্বয়ক মইনুল ইসলাম। ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য-সংস্কৃতির বিরোধী নই। কিন্তু এই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বাংলাদেশে যে রাজনীতি চলে, সেটা পুরোপুরি ভারতকে সাপোর্ট করে। রবীন্দ্রনাথের রাজনীতিকেও আমরা শক্তভাবে প্রতিহত করব।’
ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনাসহ হত্যা-নির্যাতনের সঙ্গে সম্পৃক্তদের বিচার নিশ্চিতের দাবি জানান ঢাকা কলেজের সমন্বয়ক মো. জিহাদ হোসাইন।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন ঢাকা কলেজের সমন্বয়ক গাজী হোসাইন মাহমুদ, সহসমন্বয়ক নাহিয়ান রেহমান, সহসমন্বয়ক মো. সৈকত।