জামায়াতকে আসন না ছেড়েই জোটের সুবিধা পেয়ে যেতে পারে বিএনপি। আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে ধানের শীষে সওয়ার হতে পারে নিষিদ্ধ দলটির কর্মী সমর্থকরা।
এনওয়াই বাংলা স্পেশাল:
জামায়াত প্রশ্নে বারবার বিএনপি বলে এসেছে, ‘সরকার তাদের নিষিদ্ধ করে না কেন?’ কোটা আন্দোলনে সহিংসতা আর প্রাণহানির দায় দিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এই নির্দেশ আসার পর বিএনপির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়াই আসেনি।
সরকারের সিদ্ধান্ত আসার প্রায় সাত ঘণ্টা পরে এক প্রতিক্রিয়ায় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “আন্তর্জাতিক মানের ন্যায়সংগত ও বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ কোনো তদন্ত ছাড়াই কোনো রাজনৈতিক দলকে অপবাদ দিয়ে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা অন্যায় এবং সংবিধানসম্মত নয়।”
স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনীতি শুরুর করার পর ৪৫ বছর ধরেই জামায়াত নিষিদ্ধের দাবি জোরাল ছিল। বিএনপি এই দাবির পক্ষে ছিল না কখনো, সমালোচনার পড়ে মাঝেমধ্যে নেতারা বলেছেন, ‘তাহলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করে না কেন?”
জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি বিরোধী দলে থাকতে আওয়ামী লীগও করেছে, তবে সরকারে এসে এই সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিয়েছে ২০ বছর।
এর নেপথ্যে অন্য নানা কারণের পাশাপাশি ভোটের সমীকরণও যে জড়িত, তা ভোটের ইতিহাস পর্যালোচনায় স্পষ্ট।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা জামায়াত বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের বদান্যতায় ১৯৭৬ সালে রাজনীতিতে ফেরে ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লিগ বা আইডিএল নামে একটি মোর্চা দিয়ে। পরে ১৯৭৯ সালের মে মাসে নিজের নামে রাজনীতি শুরু করে।
জামায়াত বিএনপির অবস্থানের বাইরে গিয়ে ১৯৮৬ সালে আরেক সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলের ভোটে অংশ নেয়। এরপর কেবল ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দল দুটির মধ্যে কোনো যোগাযোগ ছিল না। সেই নির্বাচনে জিতেই ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ।
জামায়াত নিষিদ্ধ হলেও তাদের কর্মী সমর্থকদের ভোট রয়ে যাবে এবং এটা স্বাভাবিক যে, সেই ভোট বিএনপির দিকেই ঝুঁকবে।
নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের নতুন সংগঠন গড়ার সুযোগ থাকলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সেদিনে নিশ্চিত নজর থাকবে। ফলে রাজনীতিতে আপাতত বিএনপির দিকে ঝোঁকা ছাড়া বিকল্প থাকবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “তারা বিএনপি বা এবি পার্টিতে চলে গিয়ে বলল, ‘জামায়াতও নাই, আমরাও নাই’, এখন আমরা বিএনপির কর্মী। একই সমস্যা হচ্ছে।”
জামায়াত বিএনপিতে বিলীন হলে বিএনপি শক্তিশালী হবে মত দিয়ে তিনি বলেন, “সহিংসতার জন্য যে তহবিল করা হচ্ছে, তা তখন অন্য দলের কাছে পৌঁছাবে।”
বিএনপি ও জামায়াত অতীতে জোট করলেও ২০০১ থেকে ২০১৮ সালে যতগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, সেগুলোতে সব আসনে সমঝোতা হয়নি। পরে কিছু আসনে উন্মুক্ত লড়াই হয়েছে। যেমন এর মধ্যে আছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রামের বিভিন্ন আসন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মুজিবুর রহমানের লেখা বইয়ের তথ্য বলছে, ১৯৯১ সালে তারা বিএনপির কাছে ১০০ আসন চাওয়ার পর তাদের জোট আর হয়নি। ২০০৬ সালে জামায়াতের রুকন সম্মেলনে আমির মতিউর রহমান নিজামী বিএনপির কাছে ৬০টি আসন চাওয়ার কথা বলেছিলেন। এমন বক্তব্য তখন বিএনপির পছন্দ হয়নি। কারণ, তারা ৩৫টির বেশি আসন ছাড়তে কখনো রাজি ছিল না।
মুজিবুর রহমানের লেখা বইয়ের তথ্য বলছে ১৯৯১ সালে ৩৫ আসনেই গোপন সমঝোতা হয়েছিল দুই দলে।
নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় বিএনপির আপাতত আসন ছাড়া নিয়ে এই দুশ্চিন্তা কাটল। অর্থাৎ সব আসনেই তারা নিজেদের প্রার্থী দিয়েও জোটের সুবিধা ভোগ করতে পারবে। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-কোন্দল আর মান অভিমানের কোনো কিছু থাকবে না।
১৯৯৯ সাল থেকে জোট চালিয়ে যাওয়ার পর ২০২২ সালে যে ভাঙন ধরে, তাতে মান অভিমানের বিষয়টিই সামনে আসে। কুমিল্লায় একটি রুকন সম্মেলনে অনলাইনে অংশ নিয়ে দলের আমির শফিকুর রহমান প্রশ্ন তোলেন, তারা বিএনপির কাছ থেকে কী পেয়েছেন।
শফিকুর সেদিনই জানান, জামায়াত ও বিএনপির পথ আলাদা হয়ে গেছে। এরপর ডিসেম্বরে সেই জোট ভেঙে যাওয়ার কথা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে। এরপর বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনেও অংশ নেয়নি জামায়াত।
জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় ভোটে বিএনপির বাজিমাত
১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকেই দেখা গেছে বাংলাদেশে জামায়াতের ভোট সাধারণত ৫ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে উঠানামা করে। কেবল ১৯৯১ সালেই একবার তা ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল, তবে ভোট শেষে জামায়াতের সাবেক এক সংসদ সদস্য তার বইয়ে বিএনপির সঙ্গে সেবার আসন সমঝোতার তথ্য দিয়েছিলেন।
জামায়াতের এই ভোট এককভাবে খুব বেশি আসনে ভোটে জেতার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ হয়নি। তবে তারা সমঝোতা বা জোটবদ্ধ হয়ে ভোটে লড়লে বড় দলের জন্য তা সুবিধা করে দেয়। এটিই বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াতের প্রভাব বাড়িয়েছে।
পাকিস্তান আমলে ১৯৭০ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনের ফল বিবেচনা করে দেখা যায়, জামায়াতের ভোট দিনাজপুর, রংপুর, গাইবান্ধা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, ঝিনাইদহের কিছু আসন, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কিছু এলাকাতেই কেন্দ্রীভূত।
স্বাধীনতার ৫০ বছরে তারা কেবল সিরাজগঞ্জের একটি, পিরোজপুরের একটি ও কুমিল্লার একটি আসনে ভোট বাড়িয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসার মত শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তবে এক সময় বেশ ভালো ভোট পেত, এমন আসনে শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সমঝোতায় ভোটের রাজনীতিতে কতটা প্রভাব পড়ে, সেটি বোঝা গেছে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে।
ওই নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমানের লেখা একটি বইয়ের তথ্য বলছে, পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে জামায়াতকে অঘোষিতভাবে ৩৫ আসনে সমর্থন দেয় বিএনপি। আর বিএনপিকে শতাধিক আসনে ভোট দেয় দলটি।
সেই নির্বাচনে বিএনপি আসন পায় ১৪০টি, জামায়াত পায় ১৮টি। আর আওয়ামী লীগ পায় ৮৮ আসন।
ওই নির্বাচনে দুই প্রধান দলের ভোট ছিল একেবারেই কাছাকাছি। ধানের শীষ নিয়ে বিএনপি পায় মোট ভোটের ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ। আর নৌকা নিয়ে আওয়ামী লীগ পায় ৩০ দশমিক ১০ শতাংশ।
জামায়াতের বাক্সে পড়ে ১২ দশমিক ১০ শতাংশ ভোট। দলটির রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বাভাবিক হারের দ্বিগুণের বেশি ভোট পাওয়াতেই এটা স্পষ্ট হয়, সমঝোতার সুফল তারা পেয়েছে।
অথচ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে ৬ শতাংশ ভোট পাওয়া জামায়াত স্বাধীনতার পর ১৯৮৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে ভোট পায় ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আসন পায় ১০টি।
১৯৯৬ সালে যে দুইবার ভোট হয়, তার মধ্যে ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোট আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মত বর্জন করে জামায়াতও। ওই বছরের ১২ জুন সব দল একক শক্তিতে যে নির্বাচন করে, তাতে জামায়াতের ভোট কমে হয় ৮.৬১ শতাংশ। আসন পায় তিনটি।
ওই বছর মোট ভোটের ৩৭ দশমিক ৪০ শতাংশ পড়ে আওয়ামী লীগের বাক্সে। আসন পায় ১৪৬টি। বিএনপি ১১৬টি আসন পায়। মোট ভোটের ৩৩ দশমিক ৬০ শতাংশ পায় দলটি।
অর্থাৎ এই নির্বাচনেও যদি বিএনপি ও জামায়াতের সমঝোতা থাকত, তাহলে তারা আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি ভোট ও আসন পেতে পারত।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনের আগে জোট বাঁধে বিএনপি ও জামায়াত।
সেই নির্বাচনে বিএনপি একাই পায় ১৯৩টি, জামায়াত পায় ১৭টি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি বা বিজেপি চারটি, ইসলামী ঐক্যজোট পায় দুটি আসন।
ওই বছর আওয়ামী লীগ আসন পায় ৬২টি। এর মধ্যে উপনির্বাচনে দলটি আরও চারটি আসন হারিয়ে ফেলে। শেষ পর্যন্ত আসন দাঁড়ায় ৫৮তে।
সেই নির্বাচনে বিএনপি ভোট পায় ৪১ দশমিক ৪০ শতাংশ। আওয়ামী লীগ পায় ৪০ দশমিক ০২ শতাংশ। জামায়াতের ভোট ছিল ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগও ভোটে নামে জোটের শক্তি নিয়ে। জাতীয় পার্টির একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট যোগ হওয়ার পর বিএনপির জোট আর পাত্তা পায়নি।
সেই নবম সংসদ নির্বাচনে ৪৮ দশমিক ০৪ শতাংশ ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগ আসন পায় ২৩০টি। এই
আর বিএনপির ধানের শীষে ভোট পড়ে ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ। আসন হয় ৩০টি। জামায়াতের দাঁড়িপাল্লায় ভোট পড়ে ৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা আগের নির্বাচনের চেয়ে বেশি, তবে আসন কমে হয় দুটি।
নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় এরপর আর দলীয়ভাবে নির্বাচন করতে পারেনি জামায়াত। ২০১৮ সালে দলটির নেতারা বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়েই অংশ নেন, তবে জিততে পারেননি কেউ।
জামায়াতকর্মীরা বিএনপিতে আসতে পারেন?
এই প্রশ্নের এই মুহূর্তে নিশ্চিত কোনো জবাব না থাকলেও স্বাধীনতার পর জামায়াতের নেতাকর্মীরা অন্য দল করেছেন এবং তারা মসজিদভিত্তিক তৎপরতা চালিয়েছেন বলে পরে নেতাদের বক্তব্যে উঠে এসেছে।
সাতক্ষীরা-৫ আসনে জামায়াতে সাবেক সংসদ সদস্য গাজী নজরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের পর জাসদ গণবাহিনীর সদস্য ছিলেন বলে পরে তথ্য পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশে জামায়াতের সূচনা জিয়ার বদান্যতায়
মুক্তিযুদ্ধের পর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় জামায়াতে ইসলামীর সংগঠন করার কোনো অধিকার ছিল না।
তবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর পাল্টে যায় পরিস্থিতি। জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হওয়ার পর রাষ্ট্রপতি এএস এম সায়েম একটি অধ্যাদেশ জারি করে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদ বাতিল করান। এতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়।
জামায়াত সরাসরি নিজের নামে আত্মপ্রকাশ না করে কৌশলী ভূমিকা নেয়। ওই বছরের ২৪ আগস্ট ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দল মিলে গঠন হয় ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ, আইডিএল। তিন বছর পর ১৯৭৯ সালের ২৭ মে, জামায়াত তার নিজ নামে রাজনীতিতে ফেরে।
পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির গোলাম আযমের যে নাগরিকত্ব বঙ্গবন্ধু সরকার বাতিল করে, সেই নাগরিকত্ব তিনি ফিরে পান বিএনপির শাসনামলেই।
গোলাম আযম দেশে ফেরেন, যখন জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতায়। পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে ১৯৭৮ সালে তিনি দেশে আসেন অসুস্থ মাকে দেখার কথা বলে। তিন বছর গোপন থাকার পর বিষয়টি প্রকাশ হয় ১৯৮১ সালে, যখন গোলাম আযম বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ফিলিস্তিনিদের জন্য আয়োজিত গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন। সে সময় তাকে জুতাপেটা করা হয়।
দেশে ফেরার পর গোলাম আযমের নির্দেশনাতেই চলত দল। তবে তিনি পাকিস্তানি নাগরিক হওয়ায় কৌশলের কারণে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে আব্বাস আলী খানকে দায়িত্ব দিয়ে রাখে জামায়াত।
সেই মুখোশও জামায়াত খুলে ফেলে ১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর, যখন বিএনপি ক্ষমতায়। গোলাম আযমকে দলের আমির ঘোষণা করা হয়।
পাকিস্তানি নাগরিককে রাজনৈতিক দলের প্রধান ঘোষণার পর তার বিচারের দাবিতে মাঠে নামের শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। গঠন হয় একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি।
সে সময় গণআদালত বসিয়ে গোলাম আযমের বিচার চলে। প্রতীকী সেই বিচারের রায়ে বলা হয়, ১৯৭১ সালে তার অপরাধ মৃত্যুদণ্ডের সমতুল্য।
আন্দোলনের মুখে গোলাম আযমকে গ্রেপ্তার করা হয়, তবে তার আগেই বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা হয়ে যায় জামায়াতের।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি অপ্রত্যাশিতভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও তা সরকার গঠনের জন্য যথেষ্ট ছিল না। তাদের আসন ছিল ১৪০টি, কিন্তু সরকার গঠন করতে লাগে ১৫১টি। ওই সংসদে জামায়াতের আসন ছিল ১৮টি। তারা বিএনপিকে সমর্থন দিলে বিএনপির সরকার গঠন নিশ্চিত হয়।
গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহ-হিল আমান আযমী সংবাদ মাধ্যমকে পরে জানিয়েছেন, এই সমঝোতার বিনিময়ে গোলাম আযমকে বাংলাদেশে নাগরিকত্ব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিল বিএনপি।
অবশ্য এই বিষয়টি পরে আদালতে মীমাংসা হয়। প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানসহ আপিল বিভাগের বেঞ্চ গোলাম আযমের পক্ষে রায় দেন। ১৬ মাস কারাগারে থেকে বের হন তিনি।
তবে গণআদালত বসানোয় শহীদ জননী জাহানারা ইমামসহ বহু গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা করে বিএনপি সরকার। অন্যদিকে সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা নির্মূল কমিটির পাশে দাঁড়ান।
অবশ্য বিএনপির সেই আমলেই দলটির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় জামায়াত। তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়ে আওয়ামী লীগের দাবির পক্ষেই ছিল তাদের অবস্থান।
১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপি একতরফা যে নির্বাচন করে, তাতে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি বা বামপন্থি দলগুলোর মত বর্জন করে জামায়াতও। তত্ত্বাবধায়কের দাবি মানার পর ১২ জুনের নির্বাচনে অংশ নেয় সব দল। ১৯৮৬ সালের পর সেবারই জামায়াত একক শক্তিতে লড়ে এবং আসন কমে যায় ১৫টি।