New York Bangla Life
বাংলাদেশবিশেষ প্রতিবেদন

বেশুমার হামলা আর ‘ডাকাতের কবলে’ বাংলাদেশ, কে দেবে আশা?

ডাকাতের কবলে বাংলাদেশ

জনগণের নিরাপত্তা কে দেবে- এই প্রশ্নে আপাত কোনো জবাব নেই। রাত হতেই এলাকায় এলাকায় দল বেঁধে পাহারা দিচ্ছে, আন্দোলনে জড়িত ছিল এমন অনেকেই ফেসবুকে লিখছেন, ‘আমরা এ জন্য দেশ স্বাধীন করলাম?’

এনওয়াই বাংলা স্পেশাল:


শেখ হাসিনা সরকারের পতনের প্রথম দিনই প্রমাদ গুনেছিল বাংলাদেশ। প্রথম দিন আক্রান্ত আওয়ামী লীগ আর তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

দ্বিতীয় আর তৃতীয় দিন আক্রান্ত সাধারণ মানুষ। খোদ ঢাকা শহরে রাতে দল বেঁধে ডাকাতি শুরু হয়েছে ।ডাকাতের কবলে শহরবাসী । মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে. জনগণ দল বেঁধে লাঠি হাতে পাহারা দিচ্ছে।

বাড়িতে ডাকাত হানা দেওয়ার পর মানুষ ফেসবুকে লাইভ করছে সহায়তার আশায়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান লুট হচ্ছে, চুরি, ছিনতাই মামুলি ব্যাপার। গ্রামে গ্রামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আর এলাকা দখলের জন্য এক দল আক্রমণ করছে দল বেঁধে, আরেক দল আবার আসছে তা ঠেকাতে ।

সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তারা পুলিশের কাজ করতে পারবেন না, এটা তাদের সক্ষমতার বাইরে। ওদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হতে যাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস একের পর এক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু এসব নিয়ে কিছু বলছেন না।

তাহলে জনগণের নিরাপত্তা কে দেবে- এই প্রশ্নে আপাত কোনো জবাব নেই। রাত হতেই এলাকায় এলাকায় দল বেঁধে পাহারা দিচ্ছে ডাকাতের কবল থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য, আন্দোলনে জড়িত ছিল এমন অনেকেই ফেসবুকে লিখছেন, ‘আমরা এ জন্য দেশ স্বাধীন করলাম?’

এখানে সেখানে দোকান লুট হচ্ছে, মার্কেট দখল হচ্ছে এর নামে ওর নামে। বন্ধ হয়ে যাওয়া টেলিভিশন আবার চালু হয়েছে, শোনা যাচ্ছে, এর জন্য চাঁদা দিতে হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকে ঢুকে প্রকাশ্যে হুমকি দেওয়া হয়েছে, ‘আমাদের সঙ্গে কথা না বলে ব্যাংকে আসলে আর ফিরে যেতে পারবে না।’

হুমকিদাতারা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জড়িত, এট স্পষ্ট ভিডিওতে।

নতুন আইজিপি পুলিশ সদস্যদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে থানায় যোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা থানায় গিয়ে বসবে, এমন সুযোগও নেই। পুড়িয়ে ছাড়খার করে দেওয়া হয়েছে সব কিছু। অপরিণামদর্শী কাজের ফল এখন ভুগছে সবাই।

ব্যবসা বাণিজ্য বন্ধ, আমদানি রপ্তানি বন্ধ, উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ, সেবা সংস্থার কাজ সীমিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও উপস্থিতি সীমিত। কেউ কাউকে বিশ্বাস করছে না, সব মিলিয়ে এক দম বন্ধ করা অবস্থা চার পাশে।

অর্থনীতি স্থবির হয়ে থাকলে পেটে যে লাথি পড়বে, সেই আশঙ্কা পেয়ে বসেছে মানুষের মনে।

যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে অনেক কথা হয়েছে গত কয়েক বছরে। কিন্তু সরকারের সমালোচনায় আসলে কেউ কোনো কিছু বাদ দেয়নি, কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি নিয়ে কেউ অন্য রকম কোনো মত প্রকাশ করতে গেলেই তার দিকে দল বেঁধে আক্রমণ করছে।

বিএনপি বিশাল একটি সমাবেশ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নতুন নির্বাচন চেয়েছে, তবে তাদের আশাহত হওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। কোটা ও সরকার পতন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এই আন্দোলনে কোনো দলের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি।

কোথায় কী হতে যাচ্ছে, তারেক রহমান মনে হয় কিছুটা টের পেয়েছেন। তাই বিজয় উদ্যাপনের জন্য ডাকা সমাবেশে তিনি বলেছেন, ‘‘দেশকে গণতন্ত্র উত্তরণের চলমান প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে সারাদেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে “
নতুন সরকারের কাছে বিএনপি ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন চায়, কিন্তু ছাত্র আন্দোলন বলছে, দেশে সংস্কার প্রয়োজন।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদের ফেসবুক স্ট্যাটাস বিএনপির পাতে ছাই ঢেলে দেওয়ার ইঙ্গিত কি না, সেটি নিয়েও উঠতে পারে প্রশ্ন।

তিনি লিখেছেন, ‘ছাত্র-জনতার এই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে মেরামত করে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ সাধন করার জন্য। গণঅভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হবে ছাত্র নাগরিকের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করা। কোনো নির্দিষ্ট দল কিংবা গোষ্ঠীর ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা চরিতার্থ করার জন্য নয়।’

তারেক রহমান যে খেলাটা যে ধরতে পেরেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য ছাত্র আন্দোলন করা সরকারের তালিকা থেকেই স্পষ্ট হয়।

সংগঠনটি রাষ্ট্রপতির কাছে অন্তর্বর্তী সরকারের যে ১৫ জন সদস্যের নাম দিয়েছে, সেটিও প্রকাশ পেয়েছে এরই মধ্যে। সেই তালিকা দেখছে বিএনপির উচ্ছ্বাস মিইয়ে যাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।

গণমাধ্যমে এই তালিকাটা খুব একটা আসেনি, তবে ছাত্র আন্দোলনদের শীর্ষ নেতারা কয়েকজন সাংবাদিকের কাছে এই নামগুলো নিশ্চিত করেছেন। বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্য কারা হবে, সে বিষয়ে তারা এখন কোনো দেন দরবার করবে না, যদিও সরকার পতনের দিন বঙ্গভবন থেকে বের হয়ে উচ্ছ্বসিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, তারা অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য নাম দেবেন।

প্রথমদিন জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামী সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনায় থাকলেও তারাও এখন দূরে দূরে। এখন বঙ্গভবন, সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনই।

তারা যে নামগুলো ঠিক করেছে, তাদের মধ্যে আছেন সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দীন আহমেদ, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, মানবাধিকার সংস্থা অধিকার এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল হাসান আরিফ, বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ।

আরও ২টা আছে, সেগুলো নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

ড. ইউনূস দেশে ফিরবেন বৃহস্পতিবার, তিনি রাতে শপথ নেবেন। তবে তার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন হলে পরিস্থিতির কী উন্নতি হবে সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ, প্রশাসন ভেঙে পড়েছে, পুলিশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, গোয়েন্দা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। সীমিত পরিমাণ গাড়ি সড়কে, সেগুলোর ট্র্যাফিক ব্যবস্থাপনায় ছাত্ররা- এটা দেখে মানুষ রোমান্টিসিজমে ভুগছে, কিন্তু গাড়ি বাড়লে এর চাপ কীভাবে তারা সামাল দেবে, সেটা নিয়ে আছে প্রশ্ন।

যে কার যার না, সেটা করতে গেলে যে গুবলেট পাকাতে হয়, সেই বোধ তরুণ মনে থাকার কথা না। ছাত্ররা এখন বাজারে হানা দিচ্ছে, নিত্যপণ্যের দাম নাকি তারা তদারকি করবে। এটা যদি সত্য হয়, তাহলে পৃথিবীর বাজার অর্থনীতি লিখতে হবে নতুন করে।

পরিস্থিতি যে সুবিধার না, সেটি টের পাচ্ছে বহু মানুষ। আর শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের ভাষাও পাল্টে গেছে এক দিনেই। আগের দিন তিনি বলেছিলেন, রাজনীতিতে আর মাথা ঘামাবেন না তিনি ও তার পরিবার।

তবে এদিন তিনি ফেসবুক লাইভে এসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাহস নিয়ে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে এই মুহূর্তে গোপালগঞ্জ ছাড়া আওয়ামী লীগের কোনো কার্যালয়ই আর অক্ষত নেই। সেখানকার নেতাকর্মীরা অবশ্য শেখ হাসিনাকে আবার রাজনীতিতে ফেরানোর শপথ নিয়েছেন।

এর মধ্যে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের ছেলে তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ ফেসবুক লাইভে এসে বলেছেন, কেউ অন্যায় করলে তার বিচার হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের একজন কর্মীরও বেঁচে থাকার অধিকার আছে।

দেশে সরকার পতন এর আগেও হয়েছে। সরকারে আওয়ামী লীগও এসেছে। কিন্তু সদ্য বিদায়ী সরকারের নেতাকর্মীদের ওপর এমন উন্মত্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেনি।

২০০১ সালেও আওয়ামী লীগ ভোটে হেরে যাওয়ার পর তাণ্ডব বয়ে গিয়েছিল দেশে। সে সময় ইন্টারনেটের এত বিস্তার ছিল না, ফেসবুক ছিল না। তখনও এমন বেশুমার আক্রমণ হলেও সেটি জানতে পারেনি মানুষ। এবার কিন্তু সবাই জানতে পারছে দেখতে পারছে।

তবে দেশের মিডিয়াগুলো সাহস করে সেগুলো দেখাচ্ছে না বা দেখাতে পারছে না। যদিও এতদিন বলা হত, গণমাধ্যমের নাকি টুঁটি চেপে ধরা হয়েছিল, এখন কেন সেগুলো কেন দেখানো হচ্ছে না, সেই প্রশ্নের জবাব নেই।

আপডেট খবর দেখতে এখানে ক্লিক করুন এবং ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন

Related posts

ক্ষমতায় থাকার কৌশল হিসেবে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে : সিপিবি

Ny Bangla

ইউনূস-মোদির বৈঠক হতে পারে নভেম্বরে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

Ny Bangla

৩ মাসের মধ্যে নির্বাচনের দাবি: মির্জা ফখরুল

Ny Bangla

ধর্মীয় নেতাদের ডেকে যা বললেন ড. ইউনূস

Ny Bangla

সেনাবাহিনী ও ইউনূস সরকারের জন্যে যে তথ্য লুকিয়ে গেছে গণমাধ্যম

Ny Bangla

সুরতহালে হত্যাকারী ‘কোটাবিরোধীরা’, রিমান্ডে আনিসুল-সালমান

Ny Bangla

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy