ডিবেটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গী থাকার কথা ছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের, যিনি প্রথম দফার ডিবেটে নাস্তানাবুদ হন। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় মুখোমুখি হতে হলো কামালা হ্যারিসের, যাকে এর আগে কখনো সামনা-সামনি দেখেননি তিনি। আর তাতেই বিপর্যয়। কামালার সাথে ডিবেটে কেমন যেন চুপসে গেলেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে বাইডেনের পরিবর্তে কামালা হ্যারিসের নাম আসতেই যেমন উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, ঠিক তেমন মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত নয়টায় ডিবেট শুরু হতেই এর রাশ হাতে তুলে নেন কামালা।
বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর জোরালো বক্তব্য ট্রাম্পকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেয়, তাঁর ফোকাস বদলে দেয়। এই দেখে ডেমোক্র্যাটরা যেমন উৎফুল্ল, তেমনি রিপাবলিকানরাও ট্রাম্পের থতমত খাওয়ার বিষয়টি মেনে নিচ্ছেন। অথচ এর আগের ডিবেটে একই অবস্থা হয়েছিল বাইডেনের।
এই ডিবেটের পর ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা ৫২ শতাংশ থেকে কমে ৪৭ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে কামালা হ্যারিসের জনপ্রিয়তা বেড়ে ৫৩ থেকে ৫৫ শতাংশ হয়েছে। খ্যাতিমান আইনজীবী কামালার সামনে তুখোড় বক্তা, ব্যক্তি-আক্রমণে পারঙ্গম ট্রাম্প এভাবে চুপসে গিয়ে গা বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়বেন, এমনটা কেউ ভাবেননি।
রিপাবলিকান শিবিরের কৌশলবিদ রন বোনজেনের মতে, ‘ট্রাম্প নিজের জন্য কিছুই করতে পারেননি। তবে এই ডিবেটের সাফল্য কামালার কতটা কাজে আসবে, তা নিয়ে সন্দেহ আছে।’ উজ্জীবিত কামালা-শিবির তো আগামী অক্টোবরে আবার ডিবেটে মুখোমুখি হওয়ার জন্য ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
ট্রাম্প অবশ্য চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার ব্যাপারে হ্যাঁ/ না কিছুই বলেননি। গত রাতের ডিবেট সম্পর্কে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, এটা তাঁর সেরা ডিবেট। অন্যদিকে ফক্স নিউজের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি (কামালা) এটা চান, কারণ তিনি হেরে গেছেন।’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘আমি এটা ভেবে দেখব। তবে আপনি যদি ডিবেটে জিতেই যান, তাহলে আমার মতে, আমার আর এটা করা উচিত কি? কেন আমি আরেকটা ডিবেট করব?’
এবিসি টেলিভিশনের আয়োজনে ফিলাডেলফিয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প ও কামালা হ্যারিসের মধ্যে প্রথম দফা ডিবেট শুরু হয়। দুইবার বিরতি দিয়ে চলে দেড় ঘণ্টা। ডিবেট শুরুর আগে ট্রাম্প তাঁর নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। কামালা এগিয়ে যান ট্রাম্পের দিকে এবং করমর্দন করেন।
২০১৬ সাল থেকে এই প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল ডিবেটে হাত মেলানোর ঘটনা ঘটলো। আর সেটা হলো কামালা হ্যারিসের সৌজন্যে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সাল থেকে পরপর তিনবার ট্রাম্প অ্যামেরিকা র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তখন থেকে এই সৌজন্য উধাও হয়ে গেছে।
ডিবেটে অভিবাসন, পররাষ্ট্র নীতি, স্বাস্থ্যসেবা, গর্ভপাতসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। দুই প্রার্থী মধ্যে ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ নিয়ে মতবিরোধ ফুটে ওঠে। উভয়ে এই দুই সমস্যার সমাধান করার দাবি করলেও তাঁরা কীভাবে এসব সংঘাতের অবসান ঘটাবেন সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব দেননি।
কামালা হ্যারিস এই বলে ট্রাম্পকে অভিযুক্ত করেন যে, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের পক্ষ হয়ে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন তুলে নিতে চান। ট্রাম্প এই অভিযোগকে ‘অসম্মানজনক’ বলে অভিহিত করেন। অন্যদিকে ট্রাম্প দাবি করেন হ্যারিস ইসরাইলকে ‘ঘৃণা করেন’। এই দাবি অবশ্য কামালা প্রত্যাখ্যান করেন।
কামালার গায়ের রং নিয়েও নিয়মিত টিটকিরি করেন ট্রাম্প। অথচ ডিবেট মঞ্চে বললেন, ‘তিনি (কামালা) যাই হন না কেন, আমার কাছে ঠিকই আছে।’
অ্যামেরিকা র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর ৫৬ দিন বাকি। এরই মধ্যে কোথাও কোথাও পোস্টাল ব্যালটে ভোট শুরু হয়েছে। অধিকাংশ অ্যামেরিকা ন কাকে ভোট দেবেন–সে ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছেন।
ফলে এই ধরনের ডিবেট খুব কম ভোটারের মধ্যে প্রভাব ফেলবে, যারা হয়তো এখনো মনস্থির করেননি। নিউইয়র্ক টাইমস লিখেছে, এবারের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে সাতটি সুইং স্টেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ১০ হাজার ভোটের পার্থক্য বদলে দিতে পারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল।
next post