রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকেই জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। ঢাকার বিভিন্ন মোড়, এলাকায়ও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এসব বিক্ষোভের পরও অনেকে মিছিল নিয়ে শহীদ মিনারে যোগ দেন।
রিকশাচালকরাও আসেন
চালকরা শহীদ মিনারের পাশে বেশ কয়েকটি রিকশা নিয়ে অবস্থান নেন। রিকশায় বসে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাদের স্লোগানের মধ্যে রয়েছে ‘গুলি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, ‘রক্ত দিয়েছি, আরও রক্ত দেব’, ‘রক্তের বন্যায় অন্যায় ভেসে যাবে’ ইত্যাদি।
বাচ্চাদের সাথে বাবা-মা
গত ১৮ জুলাই বিক্ষোভকারীদের পানি দিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মীর মাহফুজুর রহমান মোছাদ। তার স্মরণে গতকাল অনেক শিক্ষার্থী ‘পানি লাগবে, পানি লাগবে’ বলে বিনামূল্যে সবাইকে পানি বিতরণ করেন। কেউ কেউ নিজ খরচে বিক্ষোভকারীদের পেয়ারা দিয়েছেন।
খুরসিদা শিরিন তার স্বামী, দুই মেয়ে ও চার ভাতিজিকে নিয়ে আসেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার আন্দোলনে। তিনি রাজধানীর আফতাবনগর থেকে এসেছেন। মাথায় পতাকা বাঁধা, মুখে স্লোগান। শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে খুরসিদা শিরিন বলেন, ‘তারা একা প্রতিবাদ করবে কেন, আমরা সবাই এসেছি। ‘
বেলা বাড়ার পর আন্দোলনকারীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। শহীদ মিনার চত্বর ও এর আশপাশের এলাকায় মানুষের প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে পা রাখার জায়গা ছিল না। ‘আমার ভাই কবরে, খুনি বাইরে কেন’; ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’; ‘রক্ত দিয়েছি, আরও রক্ত দেব’; ‘একসাথে অত্যাচারের গদিতে আগুন লাগাই’; ‘বুকে অনেক ঝড়, বুকে গুলি’; আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ‘পদত্যাগ, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ স্লোগান দিতে থাকে।
‘সম্পূর্ণ অসহযোগিতা’
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সমাবেশ থেকে ‘সম্পূর্ণ অসহযোগ’ বিষয়ে কিছু নির্দেশনা পড়ে শোনান বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, অসহযোগ কর্মসূচির মধ্যে হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, জরুরি পরিবহন সেবা (ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন), অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা ও পরিবহন। এ খাতের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সেবা অব্যাহত থাকবে। .
এই নির্দেশে ট্যাক্স বা ফি প্রদান না করা অন্তর্ভুক্ত। বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল সহ কোন প্রকার বিল পরিশোধ না করা। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস-কারখানা বন্ধ করে দিন। অফিসে যাচ্ছেন না, মাস শেষে বেতন তুলে নিচ্ছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। নির্দেশনায় প্রবাসীদেরকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স না পাঠাতে বলা হয়েছে।
নির্দেশনায় গণপরিবহন স্থগিত করার কথাও রয়েছে। জরুরী ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য সপ্তাহের রবিবারে ব্যাঙ্ক খোলা রাখা। পুলিশ সদস্যদের রুটিন ডিউটি ছাড়া অন্য কোনো দায়িত্ব পালন না করার জন্য বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিজিবি ও নৌবাহিনী ছাড়া অন্য বাহিনী সেনানিবাসের বাইরে দায়িত্ব পালন করবে না বলে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এই নির্দেশনায় বিলাসবহুল দোকান, শোরুম, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ নির্দেশনায় উল্লেখ করেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।