অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সীমিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন এবং রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে রোডম্যাপ প্রকাশের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক। আমরা সবাই মনে করি, এ অন্তর্বর্তী সরকার যৌক্তিক সময়ের মধ্যে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।
২৪ আগস্ট, জাতীয় প্রেসক্লাবে ভাসানী অনুসারী পরিষদ আয়োজিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকীর আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অতি দ্রুত জনগণের সামনে কী করতে চান, সেটা উপস্থাপন করবেন। আমরা আশা করি, একটা রোডম্যাপের মাধ্যমে অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিশ্বাস করেন না যে অনির্বাচিত সরকারের কিছু লোক ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ করবে। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘খুব দ্রুত’ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে বলেছেন; ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস কি করতে চান তার একটি রোডম্যাপও চেয়েছেন।
নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্রুত আলোচনার ব্যবস্থা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, তারা একটি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। এই সরকারের প্রতি আমাদের আস্থা আছে, জনগণের আস্থা আছে। তবে অবশ্যই এটা (নির্বাচন) সীমিত সময়ের মধ্যে, একটি যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অন্যথায় ছাত্র–জনতার গণ–অভ্যুত্থানের অভিষ্ট উদ্দেশ্য সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হবে।
ফখরুল বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে রাষ্ট্রীয় সংস্কার করতে হবে। এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এজেন্ডাভিত্তিক কোনো আলোচনা করেনি। কয়েকজন মিলে সংস্কারের উদ্যোগ নিলে তা কার্যকর হবে না। কারণ, এ জন্য জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি দরকার। আমি বিশ্বাস করি না, কিছু লোক সংস্কার করতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের অংশগ্রহণের মাধ্যমে সংস্কার হওয়া উচিত।’
মির্জা ফখরুল বিগত সরকারের সমালোচনা করে বলেন, যেসব সচিব তাঁদের অন্যায় কাজে সহযোগিতা করে এসেছেন, তাঁদের আর স্বপদে দেখতে চায় না জনগণ। এ সময় গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের আহ্বানও জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি পুনর্ব্যক্ত করতে চাই, আমরা আশা করি, এই অন্তর্বর্তী সরকার অবশ্যই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচনের আলোচনায় গতি বৃদ্ধি এবং জনগণের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়নে কাজ করবে।’
ফখরুল বলেন, ‘আমি নির্বাচনের ওপর জোর দিতে চাই। যেসব সংস্কার প্রয়োজন, তার জন্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ধরনের সংস্কার কীভাবে আসবে? একটি নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে এসব সংস্কার আসবে। এর বিকল্প কিছু নেই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যেসব ব্যক্তি হাসিনার (সাবেক প্রধানমন্ত্রীর) পাশে থেকে, তাঁর সঙ্গে থেকে, তাঁর দোসর হয়ে মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন করেছেন, লুটপাট করেছেন, বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, তাঁদের আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের আশপাশে দেখতে চাই না। পত্রিকায় যখন ছবি দেখি, এসব লোক আবার সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করছেন, তখন আমরা উদ্বিগ্ন হই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা খুব চিন্তিত হই, আজ ১৬ থেকে ১৭ দিন হয়েছে, এখন পর্যন্ত যেসব সচিব ওই সরকারকে এত দিন ধরে চালিয়েছেন, তাদের সব কুবুদ্ধি দিয়েছেন, তাঁরা এখনো এই সরকারের সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা দেখতে চাই, অবিলম্বে এই আমলাতন্ত্রে যাঁরা প্রো-পিপল আছেন, যাঁরা জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন, সেই আইন মেনে তাঁদের এই সরকারের পাশে দেখতে চাই।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এসব কথা আমরা বলতাম না, বলতে বাধ্য হচ্ছি এ জন্য, আমরা সেগুলো দেখতে পারছি না।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো ভাইস চ্যান্সেলর (উপাচার্য) নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অথচ আগের ভাইস চ্যান্সেলরগুলো পদত্যাগ করেছেন। আমরা দেখতে চাই, ভাইস চ্যান্সেলর যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে।’
ভাসানী আনুসারী পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও সদস্য সচিব আবু ইউসুফ (সেলিম) এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ। , বিএনপির নূর মোহাম্মদ খান, জহির উদ্দিন স্বপন, নাজমুল হক নান্নু, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
previous post