একরাশ প্রতিশ্রুতি দিলেন কামালা হ্যারিস। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে কোন পথে এগোবেন, তা নিয়ে শোনালেন আশার কথা। কামালা বলেন, তিনি হতে চান মধ্যবিত্তদের প্রেসিডেন্ট। শক্তিশালী করতে চান তাঁদের হাত। কমাতে চান নিত্যপণ্যের দাম। সাধ্যের মধ্যে আনতে চান আবাসন খাতকে। কামালার কথায়, নতুন পথে এগিয়ে যেতে অ্যামেরিকা প্রস্তুত।
৫৯ বছর বয়সী কামালা ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। নভেম্বরের নির্বাচনের আগে তাঁর হাতে সময় আর মাত্র মাস দুয়েক। জোরেশোরে চলছে প্রচার-প্রচারণা। এর অংশ হিসেবে সংবাদমাধ্যম সিএনএনের সঙ্গে আলাপচারিতায় বসেন। সেখানেই শোনান আশার কথাগুলো। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন রানিং মেইট টিম ওয়ালজ।
এ সাক্ষাৎকারের মধ্য দিয়ে রিপাবলিকান সমালোচকদের মুখ বন্ধ করলেন কামালা। বাইডেন সরে দাঁড়ানোর পর কামালা কোনো সাক্ষাৎকারে অংশ না নেওয়ায় সমালোচনা করেছিলেন তাঁরা। এ ছাড়া আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ফিলাডেলফিয়ায় ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বিতর্কের মঞ্চে দাঁড়ানোর কথা রয়েছে তাঁর। ওই বিতর্কের ফল তাঁদের নির্বাচনী ভবিষ্যৎ অনেকটাই গড়ে দেবে।
আলাপচারিতা পরিচালনা করেন সিএনএনের ডানা ব্যাশ। শুরুটা হয় গল্পচ্ছলে। জানতে চাওয়া হয় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত তাঁকে কীভাবে জানিয়েছিলেন? কামালা জানান, সেদিন তিনি পরিবারের সঙ্গে সকালে নাশতা বানাচ্ছিলেন। তখন একটি ফোনকল আসে। অপর প্রান্তে ছিলেন বাইডেন। জানান, তিনি নির্বাচন করবেন না। সমর্থন দেবেন কামালাকে।
বাইডেনের অধীন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করাটা তাঁর জীবনে সবচেয়ে সম্মানজনক প্রাপ্তিগুলোর একটি—এমনই অভিমত কামালার। বাইডেনের দেখানো পথেই সামনের দিকে এগোতে চান। সে আলোকেই আলাপচারিতায় সরকার, রাজনীতি, অর্থনীতি, সীমান্তনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, জ্বালানিনীতি, অভিবাসনসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলেন তিনি।
আলাপচারিতায় নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ও রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করেন কামালা হ্যারিস। তিনি বলেন, ট্রাম্পের কারণে জাতি বিভক্ত হয়ে পড়ছে। তবে তিনি মনে করেন, ট্রাম্প অধ্যায়ের ইতি টানতে যাচ্ছে জনগণ। নতুন পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যামেরিকা এখন প্রস্তুত। আর তিনি যদি নির্বাচিত হন, তাহলে একজন রিপাবলিকানকে তাঁর মন্ত্রিসভায় রাখবেন।
অ্যামেরিকা জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন ও অভিবাসন নিয়েও ডানা ব্যাশের সঙ্গে কথা হয় কামালার। এ দুই বিষয়ে তিনি নাকি নীতি বদল করেছেন—এমন সমালোচনা চলছে। তবে তা উড়িয়ে দিয়ে কামালা সাফ জানিয়ে দেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে জীবাশ্ম জ্বালানি উত্তোলন নিষিদ্ধ করব না।’ আর অভিবাসনের বিষয়ে তিনি কঠোর আইন পাস করবেন।
আলোচনায় স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে ফিলিস্তিনের গাজা প্রসঙ্গ। এর আগে বরাবরই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির পক্ষে কথা বলে এসেছেন কামালা। আলাপচারিতায় তিনি বলেন, ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে ইসরায়েলের প্রতি বাইডেনের যে নীতি, তাতে কোনো বদল আনবেন না। গাজায় অভিযান চালাতে দেশটিতে অস্ত্র সরবরাহও বন্ধ করবেন না তিনি।
কামালা বলেন, ইসরায়েলে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছেন। নারীরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তিনি আগেও বলেছেন, এখনো বলছেন, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার ছিল, আছে। অন্যদিকে অনেক নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একটি চুক্তি করতে হবে। এ যুদ্ধ অবশ্যই শেষ হতে হবে। জিম্মিদের মুক্তির জন্য অবশ্যই একটি চুক্তি করতে হবে।
সাক্ষাৎকারের আয়োজন করা হয়েছিল জর্জিয়া স্টেইটের সাভানায়। কিছুক্ষণ বাদে এ এলাকাতেই এক নির্বাচনী সমাবেশে অংশ নেন কামালা ও ওয়ালজ। সমাবেশে অংশ নেন প্রায় সাড়ে সাত হাজার ডেমোক্র্যাট সমর্থক। অনেকের হাতে ছিল ‘স্বাধীনতা’ এবং ‘নতুনের দিকে যাত্রা’—লেখা প্ল্যাকার্ড। সমাবেশে কামালা বলেন, নির্বাচনে জয় পেতে হলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
প্রার্থী হওয়ার পর থেকে একপ্রকার মধুর সময় পার করছেন কামালা। নানা জরিপে তিনি ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। রেকর্ড পরিমাণ নির্বাচনী তহবিলও সংগ্রহ করেছেন। তবে হাল ছাড়ার পাত্র নন ট্রাম্প।
নির্বাচনী প্রচারে কামালাকে আক্রমণ করে চলেছেন তিনি। যেমন মিশিগানে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, কামালাকে দেখে তাঁর কাছে নেতার মতো মনে হয় না। আর কামালার সাক্ষাৎকার নিয়ে নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘একঘেয়ে’।

previous post