২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে ১৫ বছর পর মুখ খুললেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মঈন ইউ আহমেদ। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে সেসময় তার ভূমিকা নিয়ে নিজের ভাষ্য তুলে ধরেন তিনি।
ভিডিও বার্তায় ওই ঘটনার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দোষীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন সাবেক এই সেনাপ্রধান। আলোচিত ‘ওয়ান-ইলেভেন’ এর প্রধানতম চরিত্র মঈন ইউ আহমেদ বিডিআর সদর দপ্তরের নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে ঘটনায় এবারই প্রথম কথা বললেন। মঈন ইউ আহমেদের ২৯ মিনিটের ভিডিও বার্তায় তিনি সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, ৯ টা ৪৭ মিনিটে তার শেষবারের মতো বিডিআরের ডিজির সঙ্গে কথা হয়। এরপর তাকে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। ডিজি তাকে ভয়াবহ পরিস্থিতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন এবং সেনা কর্মকর্তাদের ওপর বিডিআর সৈনিকদের গুলি চালানোর কথা জানান।
শেখ হাসিনা ৪৬ ব্রিগেডকে পিলখানায় যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন জানিয়ে মঈন ইউ আহমেদ বলেন, কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাকিমের নেতৃত্বে ১০ জন কর্মকর্তা ও ৬৫৫ জন সৈনিক পিলখানার দিকে অগ্রসর হয়। তবে ব্রিগেডের প্রথম গাড়িটি পিলখানার মেইন গেটের কাছাকাছি পৌঁছালে বিদ্রোহীরা একটি পিকআপ লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এতে চালক ঘটনাস্থলেই মারা যান।
পরবর্তীতে মঈন ইউ আহমেদ কে জরুরি ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসবভবন যমুনায় ডাকা হয়।
মঈন ইউ আহমেদ জানান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন অফিসারদের বন্দি করে রাখার বিষয়টি জানতেন। তবে তিনি তাদের মুক্তির ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেননি।
মঈন ইউ আহমেদ বলেন, ২৬ তারিখ তার পরামর্শে শেখ হাসিনা বেলা ২টায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়ে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণের সময়সীমা বেঁধে দেন। এসময় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে বিদ্রোহীরা আত্মসমর্পণ না করলে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা হবে। সেনাবাহিনীর আক্রমণ প্রস্তুতি দেখে বিদ্রোহীরা আলোচনা ও আত্মসমর্পণের জন্য রাজি হয়।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনার তদন্ত নিয়েও কথা বলেন মঈন ইউ আহমেদ।
তৎকালীন সময় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বর্তমানে অন্তর্বতীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম এখন ওই ঘটনার সঠিক তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন এমন আশা প্রকাশ করেন মঈন ইউ আহমেদ।
বর্তমানে অ্যামেরিকার ফ্লোরিডায় অবস্থানরত মঈন ইউ আহমেদ আরও জানান বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে তার লেখা বই খুব শিগগির প্রকাশ করা হবে।
২০০৯ সালের বিডিআরের বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়।
previous post