অ্যামেরিকার ২৪৭ বছরের ইতিহাসে কোনো নারী প্রেসিডেন্ট নেই। এখন পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত পৌছেছেন কামালা হ্যারিস। এবার তিনিই প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। দেশটির পুরুষদের অধিকাংশই এখনো একজন নারীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নিতে প্রস্তুত নয়। কামালাকে সেই বাধাও অতিক্রম করতে হবে। সেই কঠিন যাত্রাই শুরু করেছেন আত্মবিশ্বাসী কামালা।
অ্যামেরিকার শিকাগোতে ২২ হাজার ডেমোক্র্যাট সমর্থকের সামনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ডেমোক্রেট পার্টির মনোনয়ন গ্রহণ করেন কামালা হ্যারিস। নিজের নির্বাচনী প্রচারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরুতে কামালা বলেন, সেই সব অ্যামেরিকান, যারা তাদের স্বপ্নপূরণে প্রতিদিন কঠোর পরিশ্রম করে, যারা একে অপরের পাশে দাঁড়ায়, যাদের গল্প শুধু অ্যামেরিকাতেই সম্ভব, তাদের সবার পক্ষে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন আমি গ্রহণ করছি।
কামালা নিজেকে একজন সাধারণ অ্যামেরিকান হিসেবে তুলে ধরেন, যিনি এক শ্রমজীবী অভিবাসী পরিবারে জন্ম নিয়ে শুধু কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার লড়াইয়ে এত দূর হেঁটে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের মতোই একজন অ্যামেরিকান।’
কামালা বলেন, ‘ক্যালিফোর্নিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে বিচারকের সামনে প্রশ্ন-উত্তর শুরুর সময় আমি নিজের পরিচয় দিয়ে বলতাম, কামালা হ্যারিস জনগণের পক্ষে হাজির। বস্তুত আমার পেশাদারি জীবনে আমি বরাবর জনগণের পক্ষেই লড়াই করে এসেছি।’
অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প, পিতার অঢেল সম্পদে যার লালন, তার পক্ষে সাধারণ অ্যামেরিকানদের দৈনন্দিন লড়াই বোঝা ও তাঁদের লড়াইয়ে শামিল হওয়া সম্ভব নয়। কামালা বলেন, ‘সারা জীবন ট্রাম্প শুধু একজনের জন্যই লড়ে গেছেন, আর সে হলো ট্রাম্প নিজে।’
এর এক দিন আগে সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন কামালার রানিং মেট হিসেবে দলীয় মনোনয়ন গ্রহণ করেন মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ। এই মনোনয়নের ভেতর দিয়ে কামালা-ওয়ালজ জুটি আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্প-জে ডি ভ্যান্সের বিরুদ্ধে নির্বাচনী লড়াইয়ে শামিল হলেন।
ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে কামালা হ্যারিসের মনোনয়ন এক মাস আগেও অভাবিত ছিল। এই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ছিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের, যিনি দুই মাসের বেশি সময় ধরে অনুষ্ঠিত দলীয় বাছাইপর্বে জয়ী হয়ে দলীয় মনোনয়ন গ্রহণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন।
কিন্তু ৮২ বছরের বাইডেন এই পদে দায়িত্ব পালনে সক্ষম কি না, এই প্রশ্নে নাগরিকদের মনে দ্বিধা ক্রমেই বাড়ছিল। ২৭ জুন ট্রাম্পের সঙ্গে প্রথম ডিবেটে নিদারুণ ব্যর্থতার পর দলের ভেতরেই তার প্রার্থিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। তবে প্রবল অনাগ্রহে, বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান। ২১ জুলাই দলীয় প্রার্থী হিসেবে তার স্থলাভিষিক্ত হন কামালা হ্যারিসের।
গত এক মাসে জনমত জরিপে দ্রুত সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে এসেছেন কামালা। বাইডেন যেখানে ৫-৭ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিলেন, সেখানে কামালাএ মুহূর্তে জাতীয় পর্যায়ে ট্রাম্পের চেয়ে ২ পয়েন্টে এগিয়ে।
নির্বাচনের নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী, মোট ভোটের হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো ইলেকটোরাল ভোটে অন্যূন ২৭০টি ভোট পাওয়া। এই সংখ্যক বা তার চেয়ে বেশি ভোট পেতে হলে ট্রাম্প বা কামালাকে ‘ব্যাটলগ্রাউন্ড’ হিসেবে পরিচিত সাতটি স্টেইটের অধিকাংশে জয় পেতে হবে। এর প্রতিটিতেই বাইডেন বড় ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলেন। কামালা এর ব্যবধান কমিয়ে এনেছেন, কোনো কোনোটিতে তিনি এগিয়েও গেছেন।
previous post