বাংলাদেশে বন্যাকবলিত ছয় জেলায় প্রায় ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৪৮ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থাটির ইউএনবি।বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।
এনওয়াই বাংলা স্পেশাল
বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ছয়টি, যেগুলো হলো কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী ও মৌলভীবাজার।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ছয় জেলার ৪৩ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত। এর ফলে জেলাগুলোতে এক লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৩টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ১৭ লাখ ৯৬ হাজার ২৪৮ জন।
বন্যায় হতাহতের বিষয়ে বলা হয়, বন্যার পানিতে ডুবে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যের বরাতে ইউএনবি জানায়, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। বাড়ছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীর পানি।
বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে চলা বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘আমরা দেখছি ত্রিপুরার গোমতী নদীর উজানে ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোতে বর্তমান বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে। এটি তথ্যগতভাবে সঠিক নয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যবর্তী অভিন্ন নদীগুলোতে হওয়া বন্যা দুই দেশের অভিন্ন সমস্যা যা জনগণের দুর্ভোগের কারণ এবং এর সমাধানে পারস্পরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।’
মন্ত্রণালয়ের ওই বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত গোমতী নদীর নিকটবর্তী এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে বছরের সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। বাংলাদেশে বন্যা মূলত বাঁধের নিচের দিকের এই বড় জলাভূমির পানির কারণে হয়েছে। যেহেতু দুটি দেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে, তাই নদীর পানি সহযোগিতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করে ভারত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও বলে, ‘আমরা দ্বিপক্ষীয় পরামর্শ ও প্রযুক্তিগত আলোচনার মাধ্যমে পানিসম্পদ ও নদীর পানি ব্যবস্থাপনার সমস্যা ও পারস্পরিক উদ্বেগের সমাধান করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘১০ জেলায় ৩৬ লক্ষ মানুষ বন্যা দুর্গত। এদের খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে এমন বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি (প্রধান উপদেষ্টা)। এখন পর্যন্ত কোন নিখোঁজ মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়নি।’
প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রণব ভার্মা প্রথমবারের মতো প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাথে দেখা করেছেন। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের সাথে কাজ করতে ভারত সবসময়ই আগ্রহী। ভারতের সাথে ড. ইউনূসের ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক রয়েছে। ইউনুস সেন্টারের সাথে ভারতের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও তার কাজ রয়েছে। এই সুসম্পর্ক অবশ্যই চলমান থাকবে, সুন্দর সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। ’
পানি বণ্টন চুক্তি নিয়েও ভারত–বাংলাদেশ কাজ করবে বলে বৈঠকে ড. ইউনুস জানিয়েছেন বলে জানান প্রেস সচিব।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবারের বর্ষায় বৃষ্টিপাত বেশি হতে পারে বলে আগেই বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছিলেন। অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ জানান, চলতি বছরের এপ্রিলে ভারতের পুনে শহরে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট আউটলুক ফোরামের ২৮তম অধিবেশনে বলা হয়েছিল, এবারের বর্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। বাংলাদেশের বৃষ্টি যেমন বেশি হবে, তেমনি বাংলাদেশের উজানে ভারতের রাজ্যগুলোতেও বৃষ্টি বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিগত সরকারও বন্যার আগাম প্রস্তুতির নিদের্শ ও দিয়েছিলেন।
বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন অর্থবছরের প্রথম একনেক বৈঠক জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) বৈঠক প্রধানমন্ত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে আগামী আগস্টে বন্যা হতে পারে।
একনেক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালাম। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস থাকার পাশাপাশি এখন যেভাবে বৃষ্টি হচ্ছে, তার প্রভাব পড়বেই। আগামী আগস্টে বন্যা হতে পারে। এ জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। একসঙ্গে সবাই কাজ করতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অর্থবছরের শুরু থেকেই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) মতে, জুলাই থেকে কয়েক মাস বৃষ্টি থাকে। এই সময়ে প্রকল্পের কাগজপত্রের কাজ শেষ করে যেন বৃষ্টির মৌসুম শেষ হওয়ার পরপর মাঠের মূল কাজ শুরু করা যায়।
বিবিসি:
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন,আকস্মিক বন্যায় অনেক অনিশ্চয়তা থাকে। অন্তত তিন দিন আগে থেকেই ওয়ার্নিং ছিল। একদিন আগে ডেঞ্জার লেভেলের ফোরকাস্ট দেয়া ছিল, যে ডেঞ্জার লেভেল ক্রস করবে।”
আকস্মিক বন্যায় তিন দিন পর্যন্ত সতর্কতা থাকে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের যে ইনিশিয়াল এস্টিমেশন ছিল তার তুলনায় বন্যাটা তীব্র হয়েছে। আমরা যে পরিমাণ পানি আশা করেছিলাম তার থেকে বেশি এসেছে। ফলে বন্যাটা অতি চরম আকার ধারণ করেছে।”
“এছাড়া মৌসুমী লঘুচাপের কারণে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সাগরের জোয়ারের লেভেল হাই ছিল। সব মিলিয়ে বন্যাটা তীব্র আকার ধারণ করেছে।”
উজানে নদনদীর তথ্য নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছিল জানিয়ে মি. রায়হান বলেন, “গোমতী নদীতে ভারতের অমরপুর পয়েন্ট থেকে ডাটা পেয়েছি।”
“অমরপুর পয়েন্ট ভারত – বাংলাদেশ থেকে ৮০ কি.মি উজানে। সেখান থেকে ভারত কর্তৃপক্ষ সবসময়ই তথ্য শেয়ার করে আমাদের সাথে। নিয়মিতভাবেই এ তথ্য পেয়েছি। উজানে পানি বাড়ছে অন্তত একদিন আগে থেকেই আমরা জানতাম।”