ইকরামুল হক. লেখক, গবেষক
আমি আমার এলাকার বন্যা পরিস্থিতির চিত্র সকালে তুলে ধরেছি। রাজনীতি করতে আসিনি। এ জন্য কেউ কেউ আমাকে কটাক্ষ করেছেন। আরেকটা কথা, ভূগোল সম্পর্কে আমার ন্যূনতম জ্ঞান আছে। আমি খাল খননের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি, যাতে পানি দ্রুত সরতে পারে। ফেনী-নোয়াখালীতে কেন এই বন্যা তা বাংলাদেশের নদী বিশেষজ্ঞরা কেবল অনুধাবন করতে পারবেন।
ভারতের ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ায় ফেনীতে কি বন্যা হয়েছে? উত্তর- না। কারণ, ডম্বুর বাঁধের সাথে ফেনীর কোনো সংযোগ নেই। কিন্তু কীভাবে পানি বেড়েছে? এই উত্তর খুঁজেছেন? উত্তর- না। আপনাদের পড়াশোনা কেবল ফেসবুকে! নিজ দেশের ভৌগলিক অবস্থান নিয়েও আপনাদের ধারণা শূন্য। চলুন বিস্তারিত বোঝার চেষ্টা করি।
ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে ফেনীর মুহুরী নদীতে বন্যা হচ্ছে না। কারণ, ডম্বুর বাঁধের অবস্থান ত্রিপুরার গোমতী নদীর সঙ্গে। অর্থাৎ, বাঁধ খুলে দেওয়ায় ডম্বুর লেকের পানি গোমতী নদী দিয়ে ত্রিপুরার ভেতর থেকে কুমিল্লায় প্রবেশ করে দেবীদ্বার, মুরাদনগর, দাউদকান্দি হয়ে মেঘনা নদীতে পড়ছে।
ফেনী নদী বা মুহুরী নদীর সাথে এই গোমতী নদীর কোনো সংযোগ বা সংশ্লেষ নেই। তাই ডম্বুর বাঁধ খোলার ফলে ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির ওপর ভৌগলিকভাবে কোনো প্রভাব পড়ছে না।
তাহলে ফেনীতে বন্যা কেন হচ্ছে?
বন্যা হওয়ার কারণ, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করায় বাংলাদেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে এবং ভারতের ত্রিপুরায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। বাংলাদেশের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের প্রদত্ত উপাত্ত অনুসারে গত ১৯ আগস্ট ফেনীর পরশুরামে ৩০৪ মিলিমিটার (২৪ মিলিমিটারে এক ইঞ্চি), খাগড়াছড়ির রামগড়ে ১৪৫ মিলিমিটার, নোয়াখালীতে ১৫৪ মিলিমিটার, কুমিল্লায় ২১০ মিলিমিটার, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ২৩৮ মিলিমিটার, কমলগঞ্জে ১৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
একইসাথে ত্রিপুরার আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপাত্ত অনুসারে গত ১৯ আগস্ট ফেনীর সীমান্তবর্তী দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার বাগাফায় সর্বোচ্চ ৩৭৫ মিলিমিটার ও বিলোনিয়ায় ৩২৪ মিলিমিটার এবং গোমতী জেলার অমরপুরে ৩০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এই অতিভারী বৃষ্টিপাত আরও দুদিন অব্যাহত ছিল। আরও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
সোমবার সকাল আটটা পর্যন্ত ত্রিপুরায় ৬০ ঘণ্টা অবিরাম বৃষ্টিপাত হয়। ফলে ত্রিপুরায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে এবং বন্যার পানি ফেনী নদী দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এদিকে বাংলাদেশের ফেনীতে টানা ভারী বর্ষণের সাথে পাহাড়ি ঢলে মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।
পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়ি শহর প্লাবিত হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে ডাকাতিয়া নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে চৌদ্দগ্রামে পাহাড়ি ঢল নয়, বরং জলাবদ্ধতার কারণে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নোয়াখালীতেও একই অবস্থা। সেখানে খাল-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় ভারী বর্ষণের পানি সরতে পারছে না। এতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
দক্ষিণের মুহুরী ও ফেনী নদীর পর উত্তরের সোনাই, ধলাই, খোয়াই, মনু নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলা কবলিত হচ্ছে। এছাড়া কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। গতকাল (২১ আগস্ট) বেলা তিনটায় কুমিল্লা পয়েন্টে গোমতী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।
মূলত ত্রিপুরার মধ্যাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের অতিরিক্ত পানি (ডম্বুর লেক থেকে ছাড়া পানিসহ) গোমতি নদী হয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে পড়ছে। অথচ ফেনী জেলা গোমতী নদীর বেসিনের বাইরে। সুতরাং ডম্বুর বাঁধ খুলে দেওয়ার কারণে ফেনীর মুহুরী নদীতে বন্যা হচ্ছে, এই তথ্যটি ভুল।
আরেকটা কথা, প্রেসিডেন্ট জিয়া ও এরশাদ খাল খনন অব্যাহত রেখেছিলেন। এরপর আর কোনো সরকার খাল খনন করেনি। না জেনে দোষারোপ বাদ দিয়ে খাল খনন কর্মসূচি আবার শুরু হোক।
তাহলে ফেসবুকে ভুল প্রচার হচ্ছে কেন? কারণ ফেসবুক চালায় বাচালরা।