New York Bangla Life
বাংলাদেশ

বাংলাদেশে চলছে সাংবাদিক বিপর্যয়

সংখ্যালঘুদের পর বাংলাদেশের এখন সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দুর্দিনে আছেন সাংবাদিকরা। সাংবাদিকদের ওপর কেন এত ক্ষোভ? কারণ সাংবাদিকরা আদালতে কোটা আন্দোলনের পক্ষে রায় দেয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন নিয়ে কোন প্রশ্ন তোলেনি। বরং লাইভ সংবাদ প্রচার করে সারাদেশের মানুষের সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছে। এমনকী রংপুরের আলোচিত সাঈদের মৃত্যু নিয়েও প্রতিটি টেলিভিশনে যথাযত রিপোর্ট হয়েছে।

কিন্ত সরকার সব দাবি মেনে নেয়ার পর যখন আন্দোলন চলতে থাকলো, সরকারি স্থাপনায় ভয়াবহ তাণ্ডব চলতে থাকলো, তখন সাংবাদিকরা এর ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। কোন সমন্বয়ক কোন টেলিভিশনের শোতে যোগ দিয়ে নিজেদের যুক্তির কথা শক্ত করে তুলে ধরতে পারেননি। বার বার ল্যাজেগোবরে করায় তারা এক পর্যায়ে টেলিভিশন শোতে কথা বলাই বন্ধ করে দেয়। তাই টেলিভিশন সাংবাদিকদের ওপর তাদের বিদ্বেষ বেশি।

আরেকটি বিষয়ও আছে। সেটা হচ্ছে সাংবাদিকরা বার প্রধানমন্ত্রীর সেই উক্তি বার বার টেলিভিশনে আনেন। “চাকরি মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা পাবে না তো কী রাজাকারের সন্তানরা পাবে?” এর মানে কী করে হয়, যে যারা আন্দোলন করছে তারা রাজাকারের বাচ্চা। এখনও এই একটি পয়েন্ট ধরে সারা পৃথিবীর মানুষের সামনে বিতর্ক করা যেতে পারে। দুটি বক্তব্য এখনো ইউটিউব, ফেসবুকে ভাসে। চাইলেই পাশাপাশি চালিয়ে দেখা যেতে পারে। এই পয়েন্ট ধরেই সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে, এই আন্দোলন কোন ছাত্রের দাবির আন্দোলন নয়। বহু দিন থেকে ছক কষেই তারা হাঁটছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এখন আর যুক্তির মধ্যে নেই। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আজ সোস্যাল মিডিয়ার বাংলাদেশ হয়ে গেছে। সবার ওপরে সোস্যাল মিডিয়া সত্য তাহার উপরে নেই।

কিন্তু সাংবাদিক সব বুঝেও কীভাবে সেই সত্য এড়িয়ে যাবে? সেতো অ্যাকটিভিস্ট নয়। তাকে দুদিকের কথা ভাবতে হয়। একথা কেউ ভাবছে না। কিন্তু সাংবাদিককে ভাবতে হয়েছে। তাই সেই অপরাধে আজ ঘর ছেড়ে সে বাইরে বের হতে পারছে না। জাতীয় প্রেসক্লাবে ছাত্ররা নির্দেশ পাঠিয়েছে সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৫০ জনকে বহিস্কার করার। টেলিভিশনগুলোতে নির্দেশ পাঠাচ্ছে ওমুককে চাকরিচ্যুত করুন। কী অদ্ভুত! কারো কোন অপরাধ থাকলে, আইন আছে, আদালত আছে। কিন্তু বাংলাদেশে আজ সেসব নেই।

তারাই আইন, তারাই আদালত। ৫ ই আগস্ট ৯টি টেলিভিশনে ভাংচুর ও আগুন দেয়া হয়েছে। ঢাকাসহ বহু পত্রিকা অফিস ভাংচুর হয়েছে। এই সুযোগে বিএনপি-জামাতের কিছু লোক প্রতিষ্ঠান দখলে মেতেছে। ছাত্রদের নাম নিয়ে মূল মালিককে ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দিচ্ছে। এর সঙ্গে বিএনপি জামাতপন্থী কিছু সাংবাদিকও আছে। এই সুযোগে নিরাপত্তা ঝুঁকির অযুহাত তুলে গণমাধ্যমের অফিসও তুলে দিতে চাইছেন কোন কোন ভবনের মালিক বা ভবন মালিকদের সোসাইটি। সবকিছু মিলিয়ে ঢাকার সাংবাদিকদের এখন উদ্বাস্তু দশা।

সত্যিই ঢাকার বেশিরভাগ সাংবাদিক কথা বলতে পারছেন না। প্রায় সবাই চাকরি রক্ষা করছেন। কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না । পড়ে পড়ে মার খাচ্ছেন। ঘর ছেড়ে বাইরে বের হতে পারছেন না । আজ তাদের হয়ে কথা বলার কেউ নেই। ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারটি ব্যবহার করতো সাংবাদিকরাই বেশি। সেই সেন্টারটিও পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই তথ্যটিও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সেভাবে আসেনি। সাংবাদিক বিপর্যয়ের তথ্যগুলোও কোথাও আসেনি। যদিও সব ছবি ঘুরছে সোস্যাল মিডিয়ায়। আর বিবিসি আল-জাজিরার গাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে ঢাকা শহরের সর্বত্র। তারা কেউ কিছু বলছেন না। বললেও এমনভাবে বলছেন, যেন এরকমই হওয়ার কথা ছিল। সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর কাছে এই তথ্য এখনো পৌঁছেনি। তাই কেউ প্রতিবাদও করছে না।

এই ভয়াবহতার মধ্যে সংখ্যালঘুদের জন্যে ভারতের রিপাবলিক টিভির অবস্থান দেখে আশান্বিত বাংলাদেশের সাংবাদিকরা। তারা চান বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অবস্থা কেউ অনুসন্ধান করুক। কারণ ঢাকায় আসলেই ভয়াবহ সাংবাদিক বিপর্যয়। সাংবাদিকদের আবেদন, ঢাকার মুক্ত বাতাসে নিরাপদে চলার। কোন অপরাধের অভিযোগ থাকলে আইন অনুযায়ী বিচারের মুখোমুখি হতে চান তারা। যদি ধরেও নেই ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে কোন সাংবাদিক বা টেলিভিশন। সে তো তার মত প্রকাশ করেছে। মত প্রকাশের কারণে কী সাংবাদিকদের ওপর এই তাণ্ডব চালানো যাবে?

ভারতের রিপাবলিক টেলিভিশন যে ভঙ্গিতে খবর প্রচার এর কাছাকাছি ভঙ্গিতেও বাংলাদেশের কোন টেলিভিশন খবর প্রচার করেনি। অথচ তাদের প্রচার নিয়ে কোন প্রশ্নই করেন না ভারতের রাজনীতিকরা। কিন্তু রিপাবলিকও বাংলাদেশের সাংবাদিকদের নিয়ে কিছু বলছেন না। তারা মূলত কথা বলছেন সংখ্যালঘুদের নিয়ে।

অথচ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা সংখ্যালঘুর চেয়েও সংখ্যালঘু। সাংবাদিকদের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, সাংবাদিক নির্যাতনের পুরো বিষয়টি একটি পরিকল্পনার অংশ। কারণ যে সাংবাদিকদের নিষিদ্ধ করার তালিকায় ফেলা হয়েছে তারা সবাই সাংবাদিকতাটা জানেন। বেশিই জানে বলা যায়। তাদের দমিয়ে রাখতে পারলে হাজারো অনাচার প্রকাশ হবে না। এর চেয়ে বড় লাভ আর কী হতে পারে?

Related posts

রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সেনাবাহিনী জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে: সেনাপ্রধান।

isa

আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মশাল মিছিল

Ny Bangla

হাত মিলিয়েছে আওয়ামী লীগ-বিএনপি!

Ny Bangla

আওয়ামী লীগ সরকারের বড় নেতাদের ফেসবুক পেজ উধাও

Ny Bangla

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার

Ny Bangla

বেশুমার হামলা আর ‘ডাকাতের কবলে’ বাংলাদেশ, কে দেবে আশা?

Ny Bangla

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy