তোমাদের যা বলার ছিলো বলছে কি তা বাংলাদেশ?
এনওয়াই বাংলা স্পেশাল
সুলতানা রহমান
আমার বন্ধুদের একটা বড় অংশ রাজপথে- দ্বিতীয় স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনে। তারা ফোনে, টেক্সট ম্যাসেজে, কমেন্টেসে আমাকে তিরষ্কার করছেন। কেন আমি তাদের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছি। তাদের প্রশ্ন-আমি কি স্বাধীনতা, বাংলাদেশের সংষ্কার চাইনা?
আমার বন্ধুদের আরেকটি বড় অংশ বর্তমানে ভীত স্বন্তস্ত্র। কেউ আছে আত্মগোপনে, কেউ বাংলাদেশ ছাড়তে চায়, কেউ সন্তান পরিবার পরিজনের নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ঙ্কর শংকিত। তারা বলছে- বিদেশে আছো কিছু বলো। কি অরাজকতার চলছে। তাদের প্রশ্ন- এভাবে কি বেচে থাকা যাবে?
আমার বন্ধুদের ছোট একটি অংশ জানতে চায়-কি হচ্ছে বাংলাদেশে? পরিবর্তন চাই কিন্তু এতো নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কি পরিবর্তন আসবে? তাদের প্রশ্ন-স্বাধীনতা মানে কি যাচ্ছে তাই?
এবার আমি আমার কথা বলবো। গত সরকারের আমলে সাংবাদিকতার কারনে আমি কম নিপীড়িত হইনি। জীবনে তোষামোদী, বাড়তি সুবিধা কিংবা অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করতে আমি শিখিনি। নিজস্ব বুদ্ধি বিবেচনা এবং নৈতিকতা দিয়ে আমার জীবন। স্পষ্টভাষী বলে অনেকেই আমাকে অপছন্দ করেন। তবু আমি স্পষ্ট কথা বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখিনি।
এবার বলি নিপীড়নের কথা।
১.
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীকে সরকারের বাহিনী তুলে নিয়ে যায়- সেই রিপোর্ট আমি করেছিলাম। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক কিশোর ডাব বিক্রেতা নিখুত বিবরন দিয়েছিলো। রিপোর্টটি প্রচারিত হওয়ার পর সেই কিশোর প্রাণ বাঁচাতে আমার কাছে ছুটে এসেছিল। অনেক আকুতি মিনতি করেও আমি তাকে একটি রাতের জন্য আমার অফিসে আশ্রয় দিতে পারিনি। সেই কিশোর ডাব বিক্রেতাকে আমি আর কোনোদিন খুঁজে পাইনি। আমার নিজের জীবনও হয়ে ওঠে বিপন্ন। তবু আমি থামিনি।
২.
সাগর রুনি হত্যার পর তিন পর্বের একটি রিপোর্ট তৈরী করেছিলাম। সরকারের আইন শৃঙখলা বাহিনী ওই হত্যাকান্ড সংগঠিত করে- এমন তথ্য উপাত্ত ওই প্রতিবেদনে ছিলো। রিপোর্ট প্রচার করতে তো পারিইনি, উপরন্তু প্রাণ ভয়ে আমাকে পালিয়ে বেড়াতে হয়। শেষমেষ চাকরিই ছেড়ে দিতে বাধ্য হই।
৩.
বর্তমানে সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানের স্বামীকে যখন গুম করা হয়, আমি তা কাভার করেছিলাম। সারা রাত নারায়নগন্জ ঘুরে আমি নিশ্চিত হই- তাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। তখনো ভোর হয়নি, আপাকে ফোন করে বলেছিলাম যদি কেউ তাকে বাঁচাতে পারে সে র্যাব ডিজি। আপা আমার উপর ভরসা করেছিলেন এবং স্বামীকে ফিরে পেয়েছিলেন। এ জন্য আমাকে চরম হেনস্থা হতে হয়।
৪.
হাসান মাহমুদ, আসলামুল হক, শাহজাহান খান- অনেকের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে গিয়ে আমি অনেক রোষানলে পরেছি। সন্ত্রাসী দূর্নীতিবাজদের হুমকি ধামকি বাদ দিলাম।
অসংখ্য উদাহরণ দিতে পারবো আমার সাংবাদিকতা জীবনে শত সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও আমি আমার দায়িত্ব পালনে ব্রত থেকেছি। কখনো পেরেছি কখনো পারিনি। নির্দিধায় বলতে পারি-কোনোদিন কারো তোষামদি করিনি, সুযোগ থাকা সত্বেও কখনো কারো কাছ থেকে কোনো সুবিধা নেইনি।
এতোগুলো কথা বলার কারণ আমি খুবই চিন্তিত আমার দেশটা নিয়ে। আবু সাঈদকে যেদিন হত্যা করা হয়, সেদিনই আমি লিখেছিলাম গণঅভযুন্থানের আলামত। এতো মানুষ হত্যার পর কখনোই কোনো সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারেনা, পারেনি।
শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। ওই সরকারের দুনীর্তি অপকর্ম সব কিছুর বিচার করতে পারবেন। খুবই কষ্ট পেয়েছি, চোখের পানি রাখতে পারিনি যেভাবে বঙ্গবন্ধুকে অপমান করা হয়েছে, এরও বিচার হতে হবে।
কিন্তু এখন সবার একটু নজর দেয়া দরকার রাষ্টের দিকে। যেভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে, যেভাবে জামাত ইসলামীকে পূর্ণবাসিত করা হচ্ছে রীতিমতা রাষ্টীয় আয়োজন করে- এগুলো খুবই সন্দেহজনক। এখন শুনছি তারা সংবিধানও বদলাবে। রাতারাতি যেমন পরিবর্তন আসেনা তেমনি রাতারাতি সব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদ শূণ্য করে চিহ্নিত দলীয় লোকের হাতে দায়িত্ব দেয়া দুরভিসন্ধিমূলক।
রাস্তাঘাট পরিষ্কার, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রন, গ্রাফিটির নিয়ে ব্যস্ত রেখে এদিকে রাষ্ট্রের সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে। সেদিকে কারো টুশব্দটি দেখছিনা।
থিওরি অব রিপ্লেসমেন্ট বিশ্বব্যাপী একটি ষড়যন্ত্রমূলক কনসেপ্ট। সবার উচিত এখন একটু এদিকে নজর দেয়া- রিপ্লেসমেন্ট করতে গিয়ে কাকে কোথায় কি দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে এবং তারা মানুষের আকাঙ্খা অনুযায়ী কাজ করছে কিনা সেদিকে নজর না দিলে সংকটাপন্ন বাংলাদেশ আরো গভির সংকটে পরবে, যেখান থেকে ফেরার আর কোনো পথ থাকবেনা।
————————————–
বাংলাদেশের খবর দেখতে এখানে ক্লিক করুন এবং ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন।