New York Bangla Life
বাংলাদেশ

বিএনপি ‘দখলবাজ’, জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী: দুই দলের পাল্টাপাল্টি চলছেই


বিএনপিকে ‘দখলবাজ’ বলে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান যে আক্রমণটা করেছেন, তার পাল্টা আক্রমণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াতকে স্বাধীনতাবিরোধী আখ্যা দিয়েছেন; বলেছেন, দলটি ভোটে জিততে পারবে না বলে তারা নির্বাচন চায় না।

১৯৯৯ সাল থেকে বিএনপি-জামায়াতের গলায় গলায় ভাব থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং একের পর এক হত্যা মামলা ও পুলিশের অভিযানের মুখে নেতাকর্মীদের আত্মগোপনের মধ্যে ফাঁকা মাঠে দল দুটির মধ্যে নজিরবিহীন শত্রুতা দেখে বিস্মিত হচ্ছে মানুষ।

দল দুটির বিপরীতমুখী অবস্থান নির্বাচন প্রশ্নে। বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইছে, যেটি ইউনূস সরকারের বিবেচনাতেই আছে বলে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে না, কিন্তু জামায়াত মনে করে, নির্বাচনের সময় এখনও আসেনি। বিএনপি নির্বাচনের দাবি তোলায় দলটিকে ধুয়ে দিয়েছেন জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান।

এখানেই তিনি থেমে থাকেননি, বিএনপিকে দখলবাজ আখ্যা দিয়েছেন; বলেছেন, জনগণ সবই দেখছে, এমন দলের সঙ্গে তারা আর জোটে যাবেন না।

জামায়াত আমিরের বক্তব্যে বিএনপি যতটা না বিস্মিত, তার চেয়ে বেশি অপমানিত হয়েছে। শফিকুর রহমান এমন বক্তব্য নিয়ে হাজির হওয়ার দুই দিনের মাথায় বোমা ফাটালেন মির্জা ফখরুল। জামায়াতের আমির গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমে গুরুত্ব পাচ্ছেন, এই বিষয়টাও তিনি পছন্দ করছেন না।

বলেছেন, “কোনো দিন দেখিনি… হঠাৎ করে মিডিয়ার ফ্রন্ট পেইজে চলে আসছে…তার বক্তব্য, তাদের থিওরি এগুলো আপনারা প্রচার করছেন।”

গত সোমবার জামায়াতের মেডিকেল শাখার এক আলোচনায় বিএনপির নাম উল্লেখ না করে দলটিকে ধুয়ে দেন জামায়াতের আমির।

বিএনপি গত কয়েকদিন ধরে নির্বাচনের রোডম্যাপ চাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় শফিকুর বলেন, “এখন জাতি বহুমুখী সংকটে, একদিকে শহীদ পরিবারগুলো আহাজারি করছে, আহতরা হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছে, পা হারা, হাত হারা, চোখ হারা, কী কষ্টের মধ্যে তারা আছে। আবার ইতিমধ্যে বন্যার ভয়াবহতা শুরু হয়েছে।

“যারা জনগণের জন্য রাজনীতি করে… রাজনীতি তো জনগণের জন্য তাদের তো উচিত এই বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো। এই সময়টায় ওখানে না দাঁড়িয়ে যদি নির্বাচন, নির্বাচন, নির্বাচন জিকির করলে জাতি তা কবুল করবে?”

বিএনপির সঙ্গে আর জোটে না যাওয়ার কথা জানিয়ে দলটির বিরুদ্ধে দখলবাজির অভিযোগও আনেন জামায়াত নেতা।

তিনি বলেন, “নির্বাচন ওনাদের (বিএনপি) লাগেও তো না, যেখানে যা দখল করা, ফুটপাত থেকে ফকিরের বাণিজ্য পর্যন্ত সব ওনারা নিয়ে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ১৫ বছরে যা সাজিয়েছিল, তার ৮০ শতাংশ ওনাদের দখলে ইতিমধ্যে চলে গেছে। বাকি ২০ ভাগ বাকি আছে। আর কী করবে সরকারে গেলে? সরকার তো হয়েই গেছে।”

দুই দিন পর সংবাদ সম্মেলনে এসে জামায়াতকে ভদ্র ভাষায় যে আক্রমণটা ফখরুল করেন, তা বর্তমান প্রজন্মের কেউ দেখেনি।

১৯৯৪ সালে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি ও জামায়াতও তত্ত্বাবধায়ক সরকার চেয়ে আন্দোলনে ছিল। সে সময় বিএনপির স্লোগান ছিল, ‘রাজাকার, স্বৈরাচার, হাইজাকার, তিন পাগলের আবিষ্কার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার’।

তবে ১৯৯৯ সালে বিএনপি ও জামায়াত জোট হওয়ার পর তাদের গলায় গলায় ভাব। জামায়াতের স্বাধীনতাবিরোধিতার কথা অন্য দল বললে বিএনপিই বরং তাদেরকে রক্ষা করেছে। একাত্তরের খুনি বাহিনী আলবদরের দুই নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্পর্ক শত্রুতায় পর্যবসিত হওয়ার পেছনে জামায়াতের ভূমিকাও কম না।

এখন রাজনীতিতে আপাতত আওয়ামী লীগের উপস্থিতি নেই। এই সময়ে ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সেই দুই দলই মুখোমুখি।

জামায়াত কেন এই মুহূর্তে নির্বাচন চায় না, তার মূল্যায়ন করে ফখরুল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “যাদের জনসমর্থন নেই, জনগণ মনে করে না যে এরা সরকার চালাতে পারবে, তারা এ ধরনের বিভিন্ন চিন্তা–ভাবনা করে, আমি কোনো দলের নাম বলছি না।

“সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে, আমাদের লড়াইটা গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। সেটার জন্যই তো নির্বাচন। এটা তো আমাদের অধিকার। আমরা তো নির্বাচনের জন্যই এতদিন লড়াই করেছি, সংগ্রাম করে এসেছি।”

ফখরুলের এই বক্তব্য আপাত দৃষ্টিতে সঠিক। জামায়াত ১৯৯০ সালে বিএনপির সঙ্গে অঘোষিত সমঝোতা করে ১৮টি আসন জিতে নেয়। ২০০১ সালে বিএনপির সঙ্গে জোটে গিয়ে জেতে ১৭টি। তবে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে এককভাবে লড়াই করে জেতে কেবল তিনটি আসনে।

তবে ভোটের রাজনীতিতে জামায়াত পিছিয়ে থাকলেও সাংগঠনিক দক্ষতা, কর্মীদের একাগ্রতা, প্রশাসন ও বেসরকারি উচ্চপদে থাকা কর্মীদের দলের প্রতি নিষ্ঠা ব্যাপক। এ কারণে জামায়াতকে গুরুত্ব না দেওয়ার আসলে ‍সুযোগ নেই।

এই মুহূর্তে দেশে অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায়, জামায়াত নিষিদ্ধ অবস্থা থেকে ফিরে দাপট দেখাচ্ছে, সেনাবাহিনী ও সরকারের কাছেও তারা গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগেও তাদের মতামত দৃশ্যত গুরুত্ব পাচ্ছে, বিএনপি এই অবস্থায় সম্ভাব্য ক্ষমতা হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে ভীত।

সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো আবার বিরাজনীতিকরণ শুরু হয়ে যায় কিনা, সেই সন্দেহও করছেন ফখরুল।

এমন কোনো লক্ষণ দেখছেন কি না- এই প্রশ্নে জামায়াতের আমিরকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “আমি লক্ষণ দেখছি না, সতর্ক করছি। কিছু ফেইস দেখলে আমরা ভয় পাই। আপনারাও দেখেছেন। কোনো দিন দেখিনি… হঠাৎ করে মিডিয়ার ফ্রন্ট পেইজে চলে আসছে…তার বক্তব্য, তাদের থিওরি এগুলো আপনারা প্রচার করছেন।”

গত কয়েকদিন ধরে মির্জা ফখরুলের চেয়ে জামায়াত আমিরের বক্তব্যই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে গণমাধ্যমে, এমনকি বাংলাদেশে ভারতের গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা দল বেঁধে জামায়াত আমিরের সঙ্গে মত বিনিময় করেছেন।

স্বাধীনতায় অবিশ্বাসীদের সমর্থন করা যাবে না মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে ১৯৭১ সালে জামায়াতের স্বাধীনতাবিরোধিতার প্রসঙ্গও আসে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে।

জামায়াতে ইসলামী নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন বাতিলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের পক্ষে না, সে যে দলই হোক।… কিন্তু দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের পক্ষে থাকতে হবে দ্যাট ইজ ভেরি ট্রুথ।

তিনি আরও বলেন, “আমার বাংলাদেশের স্বাধীনতায় যে বিশ্বাস করে না, সেই ধরনের দলকে তো সমর্থন করা যাবে না।”

জামায়াতের ১৯৭১ সালের ভূমিকা নতুন করে বলার কিছু নেই। দেশবাসী যখন আক্রান্ত তখন দলটির সে সময়ের নেতারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে গিয়ে বশ্যতা স্বীকার করেনি কেবল, মুক্তিযোদ্ধাদের দমনে গঠন করে রাজাকার বাহিনী। দলটির সে সময়ের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির সে সময় গড়ে তোলে খুনি বাহিনী আলবদর, যারা বুদ্ধিজীবী হত্যা করে।

আওয়ামী লীগ বরাবরই জামায়াতকে স্বাধীনতাবিরোধী দল আখ্যা দিয়ে আসছে। তবে ফখরুলের মুখে এই ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ শব্দটি একেবারেই নতুন।

ড. ইউনূসকেও আক্রমণ

নাম উল্লেখ না করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও আক্রমণ করেছেন ফখরুল। তিনি বলেছেন, “আমি যদি মনে করি, একজন ব্যক্তি একেবারে স্বর্গ বানিয়ে দিতে পারবে- আমার ওই চিন্তাটা সঠিক হবে না। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ কীভাবে চলবে।

“সংস্কারের দাবি তো আমরাই তুলেছি। আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। ৩১ দফা থেকে কমিয়ে ১০ দফা হয়েছে, ১০ দফা থেকে এক দফা হয়েছে। এটা নিয়ে আমরা আন্দোলন করেছি সারা বাংলাদেশ চষে বেড়িয়েছি। আমরা তো সংস্কার চাই। তবে সেই সংস্কারটা অবশ্যই হতে হবে জনগণের সমর্থন নিয়ে।’

তার মতে জনগণ নির্বাচন চায়। তিনি বলেন, “ব্যবসার জন্য, শিল্পের উন্নতির জন্য, অর্থনীতিকে সচল করার জন্য অতি দ্রুত একটা ‘সক্রিয় সরকার’ দরকার। যত দ্রুত হবে, তত ভালো।”

অর্থাৎ ড. ইউনূসের সরকারকে সক্রিয় সরকার মনে করছেন না ফখরুল।

Related posts

কত দিন ক্ষমতায় আছেন, নিজেই জানালেন ড. ইউনূস

Ny Bangla

শান্তির দূতের হাতে ইসরাফিলের শিঙ্গা !

Ny Bangla

বাংলাদেশের পথে পথে ছাত্র জনতার উল্লাস

Ny Bangla

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স(আরএসএফ)

Ny Bangla

আওয়ামী লীগের তৈরি আইনেই তাদের বিচার করতে হবে: জামায়াতের আমির

Ny Bangla

বাংলাদেশে প্রশিক্ষণের মধ্যে আরও ৫৮ এসআইকে অব্যাহতি

Ny Bangla

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More

Privacy & Cookies Policy