মাদকমিশ্রিত আয়ুর্বেদিক সালসা তৈরি কারখানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ঢাকা মেট্রোঃ (দক্ষিণ) কার্যালয়ের অভিযান, বিপুল পরিমাণ সালসা জুস এবং তৈরির কাঁচামাল জব্দ, গ্রেপ্তার ২
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ‘মাদকাসক্তিমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে সংঘবদ্ধ মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
এর ধারাবাহিকতায় অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস ও গোয়েন্দা) জনাব তানভীর মমতাজ এর নির্দেশনা মোতাবেক একটি টিম গঠন করে রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থানাধীন ৯৮, কেবি রোডস্থ শুভ আজমেরী দাওয়াখানা নামের মাদকমিশ্রিত আয়ুর্বেদিক সালসা তৈরি কারখানায় মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানকালে ২০৩৩ বোতল (মোট ৪৫০ লিটার) বিভিন্ন ধরনের আয়ুর্বেদিক সালসা নামীয় জুস, বিভিন্ন ধরনের মিশ্রণ এবং ১২০ কেজি বিভিন্ন ধরনের সালসা তৈরির কাঁচামাল জব্দ করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ০২ (দুই) জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আসামীদের বিবরণঃ
১। মোঃ নাঈম (৪৪) (পলাতক), পিতাঃ মৃত আবুল হোসেন, (কারখানার মালিক)
ঠিকানাঃ ৭৫, হৃষিকেশ দাস রোড, ওয়ার্ড নং-৪৪, সূত্রাপুর, ঢাকা;
২। মোঃ শরিফ (৩৫), পিতাঃ মৃত ফালান শরীফ, (কারখানার ম্যানেজার)
ঠিকানাঃ ৯৮/এ, কেবি রোড, গেণ্ডারিয়া, ঢাকা।
৩। মোঃ বুলু মিয়া (৪৮), পিতাঃ মৃত কুন্নু মিয়া (কারখানার স্টাফ)
ঠিকানাঃ ৯৮/এ, কেবি রোড, গেণ্ডারিয়া, ঢাকা।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের প্রেক্ষিতে সালসা তৈরির কারখানাটির সন্ধান পায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ঢাকা মেট্রোঃ (দক্ষিণ) কার্যালয়। ইতোপূর্বে কারখানাটিতে অভিযান চালিয়ে ১৮টি বিভিন্ন ধরনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে প্রেরণ করা হয় এবং কারখানাটির কার্যক্রম বন্ধ করা হয়।
কেন্দ্রীয় রাসায়নিক পরীক্ষাগারের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক ডঃ দুলাল কৃষ্ণ সাহা সাক্ষরিত প্রতিবেদনে প্রেরিত ১৮টি নমুনার মধ্যে ১১টি নমুনায় গাঁজা এবং ৫টি নমুনায় ক্যাফেইনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কারখানাটি পুনরায় চালুর বিষয়ে জানা গেলে অভিযান পরিচালনা করে ২০৩৩ বোতল (মোট ৪৫০ লিটার) বিভিন্ন ধরনের আয়ুর্বেদিক সালসা নামীয় জুস, বিভিন্ন ধরনের মিশ্রণ এবং ১২০ কেজি বিভিন্ন ধরনের সালসা তৈরির কাঁচামাল জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মো. নাঈম (৪৪) নামের একজন ব্যক্তি উক্ত কারখানার মালিক এবং মূল প্রস্তুতকারী। ইতোপূর্বে গত ২৪ আগস্ট ২০২২ রাজধানীর নারিন্দা এলাকার ফকিরচান সর্দার কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন এক বাড়ি থেকে র্যাব অনুরূপ কারখানায় অভিযান চালিয়ে ছিল।
পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পেয়ে ৭-৮ মাস আগে মো. নাঈম (৪৪) সূত্রাপুরের ৯৮, কেবি রোডের একটি বাড়ির দোতলায় কারখানাটি স্থাপন করেন। মাত্রা ভেদে দেড়শ থেকে দুই হাজার টাকায় এই জুস বিক্রয় করা হতো বলে জানা যায়।
গ্রেপ্তারকৃতদের সালসা কি জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানা যায়, সালসা হচ্ছে মাদকমিশ্রিত আয়ুর্বেদিক মিশ্রণ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পাকা মিষ্টি কুমড়া, বেল এর সাথে ক্যাফেইন, গাঁজা এবং গাঢ় রং ও বিভিন্ন রাসায়নিক উপকরণ মিশিয়ে এই সালসা তৈরি করা হয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) অনুযায়ী ক্যাফেইনের সর্বোচ্চ স্বাভাবিক মাত্রা ০.১৪৫ এর বেশি গ্রহণ করলে কিডনি বিকল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ক্যাফেইনের সঙ্গে নানা ধরনের ক্ষতিকর উপাদান একসঙ্গে গ্রহণ করায় বড় ধরনের শারীরিক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদে এটি গ্রহণ করলে ক্ষুধামন্দা, নির্জীবতা, নিদ্রাহীনতা, শরীরের মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া, অত্যধিক দুর্বলতা, হাত-পা অনবরত কাঁপতে থাকা, উচ্চ রক্তচাপ, এমনকি পুরুষত্বহীনতার মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ (সংশোধিত ২০২০) এর সংশ্লিষ্ট ধারায় সংশ্লিষ্ট থানায় নিয়মিত মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান।