
মনজুর আহমেদ
সিনিয়র সাংবাদিক
এমনই একটা আশঙ্কা করছিলাম। হাসিনার লেজুডবৃত্তি করা সাংবাদিকদের পরিণতি কি হতে পারে গত ক’দিন ধরে তা নিয়ে ভাবছিলাম। এখন দেখলাম দালাল সাংবাদিকদের একটা তালিকা প্রকাশ করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাতীয় প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষকে তাদেরকে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছে, সাংবাদিক অঙ্গনে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে বলেছে।
মনে পড়ছে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১৮ ডিসেম্বর প্রেস ক্লাব অঙ্গনে সাংবাদিকদের প্রথম সমাবেশে সাংবাদিক নেতা কে জি মুস্তাফা দালাল দুজন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে তাদেরকে প্রেস ক্লাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। কিন্ত সঙ্গে সঙ্গে বলেছিলেন, ‘উইচ হান্টিং নয়, সাংবাদিকদের মধ্যে যেন উইচ হান্টিং না করা হয়’।
হাসিনার লেজুডবৃত্তি করা সাংবাদিকদের প্রতি আমরা সবাই ক্ষুব্ধ। সাংবাদিকতা পেশাকে তারা ধ্বংস করেছে, এই মহান পেশাকে তারা চাটুকারিতার ক্ষেত্রে পরিণত করেছে, সাংবাদিকতার কন্ঠ রোধে একের পর এক প্রণীত কালাকানুনগুলিকে তারা সমর্থন জানিয়েছে, অবান্তর কারণে সাংবাদিকদের গ্রেফতার, গুম ইত্যাদি সব নির্যাতনকে সমর্থন দিয়ে গেছে, সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনকে নস্যাৎ করে দিয়ে হাসিনার কাছে বাহবা নিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বড বড উচ্চ পদে নিজেদের অধিষ্ঠিত করেছে, সরকারি নানান সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিত্তশালী হয়ে উঠেছে, সম্পদ-সম্পত্তি প্লটের মালিক হয়েছে।
সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক কাজ তারা করেছে, এই দুর্বার গণ আন্দোলনের মধ্যেও তারা অন্তত দুটি প্রকাশ্য সমাবেশ করে আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে। তারা যে মানুষের দৃষ্টির বাইরে থেকে যাবে এটা মনে করার কোন কারণ নেই। তারা এখন ছাত্র-জনতার রোষে পড়েছে।
কিন্তু তারপরও কি নানা দুষ্কর্মের জন্য দায়ী এই দালাল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া সাংবাদিক সমাজের জন্য সঙ্গত হবে? প্রেস ক্লাব তো বরাবরই নানা মতের সাংবাদিকদের একটি মিলন কেন্দ্র। সেখানে সাংবাদিকরা একই টেবিলে বসে চা খায়, তর্ক-বিতর্ক করে।
প্রেস ক্লাবের এই পরিবেশ আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে এসেছি। এখানে রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি করে আওয়ামী দালাল সাংবাদিকরা হয়ত সেই পরিবেশ নষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনাই তো হবে এখন সচেতন সাংবাদিক সমাজের দায়িত্ব।
নিশ্চয় অন্যায়কারী সাংবাদিকরা দেশের আইনের ঊর্ধে নয়। যারা যেখানেই যে অন্যায় করেছে, যত অপকর্ম করেছে, অন্যায্য সুবিধা লুটেছে, জ্ঞাত আয়ের বহির্ভূত সম্পদ-সম্পত্তির মালিক হয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে, দেশের আইনেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। নিশ্চয় তারা ছাড পাবে না।