মিজানুর রহমান খান, সাংবাদিক
সাংবাদিকতা পেশা বাংলাদেশে কোনো আমলেই খুব একটা সম্মানজনক পেশা ছিলো না। কিন্তু তারপরেও কিছু কিছু সাংবদিক তাদের সততা ও সাহসের কারণে মানুষের কাছ থেকে অনেক শ্রদ্ধা কুড়াতে সক্ষম হয়েছিলেন। সমাজে এই সাংবাদিকদের একটা মর্যাদা ছিল। মানুষ তাদেরকে সমাজের বিবেক বলে বিবেচনা করতো।
এই ধরনের কিছু মানুষকে দেখে সাংবাদিকতা পেশায় আসার জন্য আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। তাই বুয়েটে ভর্তির জন্য পরীক্ষায় সফল হওয়ার পরেও পিতামাতার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে সাংবাদিকতায় পাঠগ্রহণ শুরু করি।
এর পরে তিন দশকেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। নিজের আত্মসম্মান বজায় রেখে আমি আমার সাংবাদিকতা পেশা এখনও অব্যাহত রেখেছি। জীবনে অনেক কঠিন সময় এলেও কোনোদিন অন্যায় অবিচারের সঙ্গে আপোষ করিনি। বিভিন্ন সময়ে অর্থবিত্ত ক্ষমতার প্রলোভন দেখানো হয়েছে, কিন্তু সৎ সাংবাদিকতার পথ থেকে কখনো বিচ্যুত হইনি।
একজন সাংবাদিক হিসেবে দেখেছি এই পেশার সম্মান মর্যাদা বর্তমানে একেবারই ভূলুণ্ঠিত হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, মানুষ এখন সাংবাদিকদের গালিও দেয়। এর পেছনে অনেক কারণ আছে। তা নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ হতে পারে। সেগুলো নিয়ে কথা বলতে গেলে অনেক সময় প্রয়োজন। কিন্তু দুটো জিনিস আমি শেয়ার করতে চাই।
সাংবাদিকতা পেশার প্রতি মানুষের যে বিদ্বেষ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ঘৃণা, সেটা তীব্র হয়েছে গত দশ বছরে। শেখ হাসিনার শাসনামলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো এই পেশাও তার পেশাদারিত্ব হরিয়েছে। আর এই অবস্থা হয়েছে গুটিকয়েক সাংবাদিকের জন্য।
এই সাংবাদিকরা গণভবনে যেতেন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটা বিদেশ সফরের পর। প্রশ্ন করার পরিবর্তে তারা স্তুতিবাক্য আবৃত্তি করতেন। সারা জাতি টেলিভিশনের পর্দায় দেখত তাদের নগ্ননৃত্য। সেখানে তারা হাসি তামাশা ঠাট্টা মশকরায় মেতে উঠতো। বিরোধী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের আক্রমণ করার জন্য সেই সংবাদ সম্মেলন হয় উঠতো উৎসবমঞ্চ।
দিনের পর দিন তাদেরকে দেখতে দেখতে এরাই একসময় মানুষের কাছে সাংবাদিকদের প্রতিনিধি হয়ে উঠলেন। মানুষ মনে করতে লাগলো এরাই সাংবাদিক। সৎ ও সাহসী সাংবাদিকরা তাদের চোখ ও চিন্তার সামনে থেকে একসময় হারিয়ে গেলেন।
এই সাংবাদিকরা কি একবারও নিজেকে প্রশ্ন করেছেন- কেন মানুষ আমাকে ঘৃণা করে, কেন আজ আমাকে এভাবে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে? মানুষের কেন এতো ক্ষোভ আমার বিরুদ্ধে?
সাংবাদিকরা তো সত্য অনুসন্ধান করেন। নিজেদের এই অবস্থা কেন হলো সেই অনুসন্ধান যদি না করি, তাহলে আমরা কোনোদিনও আমাদের হৃৎ মর্যাদা ফিরে পাবো না।