বেনামী ঋণ দিয়ে ৭ হাজার ৯২৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের পাহাড় গড়েছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল)। ব্যাংকটি দীর্ঘদিন ধরে সে তথ্য গোপন রেখেছিল এবং খুদ কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ কাজে সহায়তা করেছে। এছাড়া প্রভিশনের ঘাটতির কারণে এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ব্যাংকটি লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারছে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন দল চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকের প্রধান পাঁচটি শাখা, ১০টি শাখা অফ-সাইট ভিত্তিতে এবং ঢাকার বাইরে সাতটি শাখা পরিদর্শন করে এবং আর্থিক প্রতিবেদনে এই অসঙ্গতিগুলি চিহ্নিত করে।
এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন শরিয়াভিত্তিক সামাজিক ইসলামী ব্যাংককে ৭ হাজার ৯২৬ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আড়াল করার সুযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক গোপন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৫৬৮ কোটি টাকা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে ব্যাংকটি দেখিয়েছে মাত্র ১ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা।
এছাড়া, পরিদর্শন দল ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এসআইবিএল)-এ ৮ হাজার ১২৭ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতি খুঁজে পায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার পরামর্শে মাত্র ৬৪ কোটি টাকা দিতে প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি আড়াল করা হয়েছে ৮ হাজার ৬৩ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের বিতরণ করা মোট ঋণের মধ্যে শ্রেণিবিন্যাসযোগ্য পরিমাণ ৯ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ৭ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার প্রভিশন প্রয়োজন। যদিও প্রভিশন রাখা হয়েছে ব্যাংক হিসেবে দেখানো হয়েছে ১ হাজার ৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ পরিদর্শন দলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘাটতি রয়েছে ৬ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা।
পরিদর্শন দলের অনুসন্ধানে জানা যায়, আদালত কর্তৃক স্থগিতাদেশ প্রাপ্ত বিনিয়োগের বিপরীতে সংরক্ষণের জন্য ১ হাজার ৭০৮ কোটি টাকার প্রয়োজন ছিল। যদিও ব্যাংকটি দেখিয়েছে মাত্র ৪০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে ১ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা।
এর বাইরে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (ওবিইউ) থেকে বিনিয়োগ, অন্যান্য সম্পদের বিপরীতে রিজার্ভ প্রভিশন ছিল ১৫৪ কোটি টাকা। যদিও, ব্যাংকটি তার প্রতিবেদনে দেখিয়েছে যে এই দুটি খাতে তার প্রভিশনের প্রয়োজন ছিল মাত্র ২০ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন টিম ব্যাংকটির বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতির তথ্য পেলেও- রিপোর্টে দেখানো হয়েছে খুবই কম।
বাংলাদেশ ব্যাংক সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের প্রকৃত তথ্য গোপন করে – পরে যেভাবে রিপোর্ট করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে ব্যাংকটির মোট প্রভিশন রিজার্ভের প্রয়োজন ছিল ১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। আর ব্যাংকটি সাশ্রয় করতে পেরেছে ১ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রভিশন ঘাটতি দেখানো হয়েছে মাত্র ৬৪ কোটি টাকা।
এছাড়া ব্যাংকিং খাতকে অক্ষুণ্ন রাখা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রেটিং এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ব্যাংকের সুনাম ও ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী আর্থিক ভিত্তি স্থাপনের জন্য এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণের মধ্যে আগামী জুনের মধ্যে ৩০ শতাংশ, আগস্টের মধ্যে ৩০ শতাংশ এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি ৪০ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন মাসিক শ্রেণিবদ্ধ ঋণ ও প্রভিশনিং প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৩৫ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। যদিও এই প্রতিবেদনে প্রভিশন ঘাটতির পরিমাণ দেখানো হয়নি।
সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসিকে এস আলম গ্রুপের কবল থেকে মুক্ত করে প্রকৃত মালিক ও উদ্যোক্তাদের কাছে মালিকানা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছেন শেয়ারহোল্ডাররা।

previous post
next post