বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা স্বেচ্ছায় না দেওয়ার কথা জানিয়ে অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ ফেসবুক প্রোফাইলে বিবৃতিটি পোস্ট করেন।
টানা কয়েকদিন আটক থাকার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে মুক্তি পান বাংলাদেশের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক। মুক্তির পর তারা যৌথ একটি বিবৃতি দিয়েছেন। আটক থাকাকালীন জীবিকা কার্যালয়ে কি কি ঘটেছে এর ব্যাখ্যাও দেন।
একই সঙ্গে সরকারের মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ও দমন পিড়নকে তোয়াক্কা না করে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক।
বিবৃতিতে তারা বলেন, আন্দোলন ও নেতৃত্বকে ছাত্র ভঙ্গ করতে ১৯ জুলাই থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের গুম, গ্রেফতার, নির্যাতন ও হয়রানি করা হচ্ছে।
এর ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তার নামে হয় ছয় সমন্বয়ককে সাত দিন ধরে ডিবি হেফাজতে জোরপূর্বক আটকে রাখা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডিবি প্রধান নিরাপত্তার কথা বললেও আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে তাদেরকে ডিবি হেফাজতে রাখা হয়।
সমন্বয়কারীরা বলেন, তারা গুম, গ্রেফতার ও নির্যাতন থেকে নিরাপত্তা এবং নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন। মত প্রকাশের অধিকারের নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন কিন্তু অসংবিধানিক ও আইন বহির্ভূতভাবে তাদের ডিবি হেফাজতে আটকে রাখা হয়।
প্রথমে নিরাপত্তার কথা বললেও পরে আদালতের কথা বলা হয়। জানানো হয় আদালতের আদেশ ছাড়া তাদের মুক্তি মিলবে না।
আন্দোলন প্রত্যাহার করে ডিবি অফিস থেকে প্রচারিত ছয় সমন্বয়কের ভিডিও স্টেটমেন্টি তারা স্বেচ্ছায় দেননি বলে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোন ডিবি অফিস থেকে আসতে পারেনা।
সারা বাংলাদেশের সব সমন্বয়ক ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গৃহীত হবে না।
সমন্বয়করা জানান, ডিবি অফিসে জোর করে খাবার টেবিলে বসিয়ে ভিডিও করা হয়। তাদেরকে ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরিবারকে ডেকে ১৩ ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয় এবং মিডিয়ায় মিথ্যা স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা দেখা করতে আসলে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।
অন্যায় ভাবে সমন্বয়কদের আটক, সারাদেশে শিক্ষার্থীদের গ্রেফতার ও নির্যাতনের প্রতিবাদে গত ৩০ জুলাই রাত থেকে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের জিবি অফিসে আটক অবস্থায় অন্বেষণ করা শুরু করেন।
পরবর্তীতে সে খবর জানা মাত্র সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুলাহ ও নুসরাত তাবাসসুমও অনশন শুরু করেন।’
‘অনশনের কথা পরিবার ও মিডিয়া থেকে গোপন করা হয়। প্রায় ৩২ ঘণ্টারও অধিক সময় অনশনের পরে ডিবিপ্রধান ছয় সমন্বয়ককে মুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিলে অনশন ভাঙা হয়। আমাদেরকে ১ অগাস্ট দুপুর দেড়টায় পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। গত সাতদিন ডিবি অফিসে আমাদের ও আমাদের পরিবারের সঙ্গে নানা হয়রানি, নির্যাতন ও নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
আরও বলা হয়, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদের অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছিল। সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ছাত্র-নাগরিকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকার এখনো শিক্ষার্থীদের ওপর দমননীতি অব্যাহত রেখেছে এবং সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন করছে এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করছে।’
‘ছাত্র-নাগরিক হত্যার বিচার ও আটক নিরপরাধ ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। সারাবাংলাদেশে ছাত্র-নাগরিকদের প্রতি আহ্বান থাকবে সরকারের মিথ্যা প্রোপাগাণ্ডা ও দমন-পীড়নকে তোয়াক্কা না করে রাজপথে নেমে আশার আহ্বান জানান কোটা আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক।