আনসার সদস্যদের আন্দোলনের কারণে সাড়ে ১০ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকা থেকে মুক্ত হয়েছেন সচিবালয়ে কর্মরত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ সময় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েকজন সমন্বয়কারীকেও ছেড়ে দেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ১০টায় সচিবালয়ের ৩ নম্বর গেট খুলে দেওয়া হয়। এরপর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেরিয়ে আসতে থাকেন।
এর আগে সকাল থেকে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন শত শত আনসার সদস্য। একপর্যায়ে দুপুর ১২টা থেকে সচিবালয় অবরোধ করেন তারা। সব গেট বন্ধ করে দেয়া হয়। বিকাল ৫টায় অফিস বন্ধ হলেও রাত সাড়ে ১০টার আগে বের হতে পারেননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সচিবালয়ে আনসারের একদল সদস্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেককে আটকে রেখেছেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলসহ টিএসসিতে থাকা অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন। আনসার সদস্যদের প্রতিহত করতে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকায় যান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে করে প্রাথমিকভাবে সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া খেয়ে আনসার সদস্যরা সচিবালয় ছেড়ে পালিয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্ররা সচিবালয়ের দিকে যাওয়ার সময় আনসার সদস্যরা তাদের ধাওয়া দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা লাঠিসোটা নিয়ে প্রেসক্লাবের দিক থেকে আনসারদের ধাওয়া করে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আনসার সদস্যরা মারধর করে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে আনসার সদস্যরা পিছু হটে। অনেক আনসার সদস্যকে পোশাক খুলে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল করে সচিবালয়ের দিকে এলে আনসার সদস্যরা তাদের ওপর ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। এক পর্যায়ে আনসার সদস্যরা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। শিক্ষার্থীদের ওপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়ার অভিযোগও করেছেন শিক্ষার্থীরা। সংঘর্ষে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর শাহবাগ ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে গত দুদিন ধরে আন্দোলনে রয়েছেন আনসার সদস্যরা। রোববার বিকেলে বন্যার্ত মানুষের জন্য ত্রাণবহনকারী কয়েকটি ট্রাকও আটকে দেন তারা। একপর্যায়ে তাদের একাংশ বাংলাদেশ সচিবালয়ে ঢুকে সেখানে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
পরে বিকেলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা তাদের ‘রেস্ট প্রথা’ বাতিল করে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। তবুও আনসাররা চাকরি জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে অনড় থাকেন এবং সচিবালয়ের ভেতরে কয়েকজন উপদেষ্টা ও সচিবসহ বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আটকে রাখেন। পরে এ খবর পেয়েই শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের দিকে রওনা হয়।

previous post