বাংলাদেশের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের ‘মনপুরা ৭০’ সিরিজের একটি চিত্রকর্ম নিলামে রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে। দাম শুনলে যে কারো চোখ কপালে উঠবে। একটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৪৮ ডলার মূল্যে, বাংলাদেশি মুদ্রায় এই অর্থ প্রায় ৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশি কোনো শিল্পীর চিত্রকর্ম এর আগে এত দামে বিক্রি হয়নি।

চিত্রকর্মটি জয়নুল আবেদিনের ‘মনপুরা ৭০’ সিরিজের একটি কাজ। জয়নুল আবেদিন এসব বিখ্যাত ছবি আঁকেন দক্ষিণাঞ্চলের চর মনপুরায় ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর। এ ঝড়ে প্রাণ হারান লক্ষাধিক মানুষ। এ ছাড়া ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে তাঁর আঁকা চিত্রকর্মগুলোও অনবদ্য।
চিত্রকর্মটি শিল্পী জয়নুল আবেদিনের পক্ষ থেকে চেদোমিল প্লাজেককে উপহার দেওয়া হয়েছিল। বর্ণনা অনুযায়ী, এটি কাগজের ওপর কালির আঁচড়ে আঁকা এবং নিচের ডানদিকে ‘জয়নুল/১৯৭০’ স্বাক্ষর ও তারিখযুক্ত। ২৬ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত নিলাম সংস্থা সদেবি’স চিত্রকর্মটি নিলামে তোলে। সেখানেই ছবিটি বিক্রি হয়।
সদেবি’স-এর তথ্য অনুযায়ী, প্লাজেক ছিলেন একজন হাইড্রোজোলজিস্ট এবং জাতিসংঘের জিওথেনিকা যুগোস্লাভিয়ার প্রতিনিধি। তিনি কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকতেন এবং বহু বছর ধরে জাতিসংঘের ভূগর্ভস্থ পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে থাকাকালীন জয়নুল আবেদিনের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়।
সদেবি’সে-এর নিলামের ফলাফল থেকে জানা যায়, জয়নুল আবেদিনের আরেকটি চিত্রকর্ম ‘নামহীন (মাল্টিপল ফিগার)’ রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে। এটিও শিল্পীর পক্ষ থেকে চেদোমিল প্লাজেককে উপহার দেওয়া হয়েছিল এবং ৪ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ডে (৬ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯০ ডলার) বিক্রি হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭.৬৯ কোটি টাকা।
রেকর্ড দামে বিক্রি হওয়া চিত্রকর্মটি তেল রঙে ক্যানভাসে আঁকা, নিচের ডানদিকে ‘জয়নুল ৭১’ স্বাক্ষর ও তারিখ রয়েছে এবং এটি ১৯৭১ সালে আঁকা হয়। আরেকটি চিত্রকর্ম ‘নামহীন (ফিগারস)’ ২ লাখ ১৬ হাজার পাউন্ডে (২ লাখ ৮৯ হাজার ৬৬৩ ডলার) বিক্রি হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ দশমিক ৪৬ কোটি টাকার সমান।
এর আগে গত মার্চে অ্যামেরিকার নিউইয়র্কে জয়নুল আবেদিনের আরও দুটি চিত্রকর্ম নিলামে তুলেছিল সদবি’স। সেগুলোর একটি ছিল তাঁর বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘সাঁওতাল দম্পতি’। ১৯৫১ সালে আঁকা ওই চিত্রকর্ম ৩ লাখ ৮১ হাজার ডলারে বিক্রি হয়েছিল। আর বসে থাকা নারীর আরেকটি চিত্রকর্ম বিক্রি হয়েছিল ২ লাখ ৭৯ হাজার ৪০০ ডলারে। সেটি জয়নুল এঁকেছিলেন ১৯৬৩ সালের দিকে।