এক যুগেও তদন্ত প্রতিবেদন দিতে না পারায় বাংলাদেশে আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব থেকে র্যাবকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠন করে এ তদন্ত কাজ সম্পন্ন করতে ছয় মাস বেঁধে দিয়েছে হাই কোর্ট।
সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত থেকে র্যাবকে সরানোর একটি আবেদনের শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের বেঞ্চে এ আদেশ দেয়। সবশেষ ৯ সেপ্টেম্বর র্যাবের প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। সেদিনও তারা পারেনি। ১১১ বারের মতো পেছানো হয় প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ।
র্যাবের কাছ থেকে তদন্তভাড় সরানোর আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী শিশির মনির। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অনীক আর হক। পরে সাংবাদিকদের শিশির মনির বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর র্যাব এ মামলার তদন্ত চালিয়েও প্রতিবেদন দিতে পারেনি। আদালত বলেছে, এটি দুর্ভাগ্যজনক। এখন এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার থেকে র্যাবকে সরিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি টাস্কফোর্স গঠন করে আগামী ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ জন্য আগামী বছরের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
শিশির মনির আরও বলেন, এ মামলার তদন্তে এখন আর র্যাব নেই। এই আদেশ পাওয়ার পর থেকে ছয় মাস হিসাব করা হবে। খুব শিগগির তারা আদেশ সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। এর আগে রোববার রুনির ভাই ও মামলার বাদী নওশের রোমান জানান, বাদীপক্ষে লড়তে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া করা বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর ও রুনি। তাদের একমাত্র ছেলে মাহির সারোয়ার মেঘ (৫) সেসময় বাসায় ছিল। সাগর সে সময় ঢাকাভিত্তিক বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
এ সাংবাদিক দম্পতি হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলী রোমান শেরেবাংলা থানায় মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর শেরেবাংলা নগর থানাকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিন দিন পর মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটি র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের রহস্য উন্মোচন করে তা জাতির সামনে প্রকাশ করা হবে; কিন্তু এক যুগেও সে রহস্য উন্মোচন আলোর মুখ দেখেনি।
তদন্ত প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা নিহত সাংবাদিক দম্পতির পরিবার এবং পেশাজীবীদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই মামলার দ্রুত ন্যায়বিচার পাওয়ার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এর আগে বিভিন্ন সময় সাবেক সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এই হত্যাকাণ্ডের কূলকিনারা করার আশা দিলেও সুফল মেলেনি। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার পতন হলে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এই হত্যার বিচারের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, এই বিচার করা না হলে তারা জাতির কাছে দায়ী থাকবেন।