বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চল খাগড়াছড়িতে আবার সহিংসতা দেখা দিয়েছে। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সকালে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে খাগড়াছড়ি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করেছে আদিবাসী শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা।
এর জেরে জেলা শহরে বাঙালিদের সঙ্গে আদিবাসীদের সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খাগড়াছড়ি পৌরসভা এলাকা ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

খাগড়াছড়ি শহরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সতর্ক অবস্থান। সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন থমথমে। ছবি: সংগৃহীত
হামলায় আহতের পর ওই শিক্ষককে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রোজলিন শহীদ চৌধুরী। তিনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। সেখানে বিজিবি মোতায়েন রয়েছে এবং ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
কলেজটির অধ্যক্ষ আমান উল্লাহ আল হাসান বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে কলেজ ক্যাম্পাসে আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন শিক্ষক আবুল হাসনাত মোহাম্মদ সোহেল রানার ওপর হামলা করে। আহত অবস্থায় তাকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাকে কেন মারধর করা হয়েছে সেটা জানেন না বলে দাবি করেন অধ্যক্ষ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী উক্যনু মারমা নামের এক ব্যক্তি নির্ভরযোগ্য একটি সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সোহেল রানা সকাল ৯টার দিকে সপ্তম শ্রেণির এক ত্রিপুরা ছাত্রীকে তার কোয়ার্টারে ডেকে নিয়ে যান। এটা তার সহপাঠীরা দেখে ফেলে এবং আমাদের জানায়। আমরা বেশ কয়েকজন কলেজে উপস্থিত হয়ে অধ্যক্ষের কাছে যাই মেয়েটির খোঁজ নিতে। তিনি বলেন, ‘সেখানে পুলিশ ও প্রশাসন উপস্থিতিতে আমরা মেয়েটিকে ওই শিক্ষকের রুম থেকে উদ্ধার করি। মেয়েটি জানায় ওই শিক্ষক তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ করেছেন। তখন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের ওপর চড়াও হয় এবং তাকে মারধর করে। এই ঘটনার জের ধরে সেখানকার সেটলার বাঙালিরা আমাদের ওপর হামলা চালায়।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার পর ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। খাগড়াছড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা বেগম জানান, তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে রয়েছেন এবং এই মুহূর্তে কথা বলা সম্ভব না।
এর আগে ১৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়িতে গণপিটুনির শিকার হয়ে মামুন নামে এক যুবক নিহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি লারমা স্কয়ারের দিকে যাওয়ার সময় সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে লারমা স্কয়ারে দোকানপাট ও বসতবাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনার রেশ ধরে খাগড়াছড়ি জেলা সদর ও রাঙামাটিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পরে। এতে চারজনের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।