এই প্রতিবেদন অনুযায়ী আইআরআই ২০১৮ সাল থেকেই এই চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিএনপিকে দিয়ে কাজ হবে না বুঝতে পেরে তরুণদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। শিল্পী এমনকি এলজিটিবিটিকিউদেরও ব্যবহার করা হয়।
এনওয়াই বাংলা স্পেশাল
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটাতে অ্যামেরিকা সরকারের বহু বছরের প্রচেষ্টা ও পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে দেশটির একটি অনলাইন সংবাদপত্র। বেশ কিছু গোপন নথি তারা তুলে ধরেছে, যাতে দেখা যায় ২০১৮ সাল থেকেই এই চেষ্টা শুরু করে অ্যামেরিকা সরকার।
দ্য গ্রে জোন নামে সেই নিউজ ও ব্লগসাইটে লেখা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে অপসারণের আগে অ্যামেরিকার সরকারের অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) একটি বিশাল কর্মী বাহিনী প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, যার মধ্যে র্যাপার এবং ‘এলজিবিটিকিউআই’সহ বিভিন্ন শ্রেণির কর্মীরা অন্তর্ভুক্ত ছিল।
‘ক্ষমতার পরিবর্তন’ এর বিষয়টি মাথায় রেখে তারা ‘হিজড়াদের নাচের পারফরম্যান্স’ এর মত কর্মসূচিরও আয়োজন করে।
আইআরআই বাংলাদেশের রাজনীতিকে ক্রমাগত অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করেছে এবং এর সুফল শেষ পর্যন্ত ঘরে তুলেছে।
এসব নথিপত্র অনুযায়ী অ্যামেরিকা সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল বিএনপি। তবে তারা দেখতে পেয়েছে দলটির জনসমর্থন ব্যাপক ছিল না, তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে দোদুল্যমান, অন্যদিকে আওয়ামী লীগ ছিল শক্তিশালী অবস্থানে।
পরে অ্যামেরিকা সরকার তাদের কৌশল পরিবর্তন করে। তারা তরুণদেরকে লুফে নেয়, তাদেরকে সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। সেই সঙ্গে সরকারবিরোধী জনমত গঠনে শিল্পীদেরকেও ব্যবহার করে।
সাংবাদিক ম্যাক্স ব্লুমেনথাল এই সংবাদ মাধ্যমটির প্রতিষ্ঠাতা। এটি প্রথমে ‘দ্য গ্রে জোন প্রজেক্ট’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৮ সালের পর থেকে এটি স্বাধীনভাবে কার্যক্রম শুরু করে।
নিউজ ওয়েবসাইটটি মূলত অ্যামেরিকার পররাষ্ট্রনীতির সমালোচনা করে থাকে। রাশিয়া, চীন ও সিরিয়ার সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল সংবাদ প্রচারের জন্যও এটি পরিচিত।
ম্যাক্স ব্লুমেনথাল একইসঙ্গে সাংবাদিক, লেখক, ব্লগার ও চলচ্চিত্র পরিচালক। দ্য ন্যাশন, অলটারনেট, দ্য ডেইলি বিস্ট, আল আকবার নামে বইও লিখেছেন তিনি। কন্ট্রিবিউটর হিসেবে কাজ করেছেন আল জাজিরা ইংলিশ, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস। রাশিয়ার স্পুৎনিক ও রাশিয়া টুডেতেও কাজ করেছেন তিনি।
তার সাইটে লেখা হয়, ৫ আগস্ট মাসে কয়েক মাসের সহিংস রাস্তার বিক্ষোভের পর অবশেষে বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপসারিত হন। যখন সামরিক বাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং তথাকথিত ‘অন্তর্বর্তী প্রশাসন’ চালু করার ঘোষণা দেয়, তখন ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় যে হাসিনা হেলিকপ্টারযোগে ভারতে চলে যাচ্ছেন।
বিশাল সংখ্যক ছাত্র বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ঢুকে পড়ার পর পশ্চিমা গণমাধ্যম এবং তাদের অনেক প্রগতিশীল সমর্থক এই বিদ্রোহকে স্বাগত জানায়। এটিকে তারা ‘ফ্যাসিবাদের’ পরাজয় এবং গণতান্ত্রিক শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হিসেবে তুলে ধরে।
হাসিনার স্থলাভিষিক্ত হওয়া মুহাম্মদ ইউনুস অ্যামেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের সদস্য এবং তিনি ক্ষুদ্র ঋণের প্রয়োগের জন্য নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
ইউনুস নিজে সেই বিক্ষোভ আন্দোলনকে ‘সুপরিকল্পিত’ বলে প্রশংসা করেছেন।
ভারত থেকে শেখ হাসিনার নামে একটি বার্তা প্রচার হয় যে, যেখানে বলা হয়েছে, তিনি বাংলাদেশের ভূখণ্ডে অ্যামেরিকার সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দিতে রাজি না হওয়ায় তাকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করা হয়েছে। অ্যামেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তর এই অভিযোগকে অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল সাংবাদিকদের বলেছেন, “শেখ হাসিনার পদত্যাগে অ্যামেরিকার কোনো ভূমিকা ছিল—এমন কোনো অভিযোগই সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
তবে দ্য গ্রেজোন পর্যালোচিত ফাঁস হওয়া নথিগুলি নিশ্চিত করেছে যে, আইআরআই বাংলাদেশের রাজনীতিকে ‘অস্থিতিশীল’ করার একটি স্পষ্ট মিশন নিয়ে কাজ করেছিল। তাদের সেই লক্ষ্য এবং কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অ্যামেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তরকে নিয়মিত অবহিতও করা হয়েছিল।
নথিগুলি ‘গোপনীয় এবং/অথবা সংরক্ষিত’ হিসাবে চিহ্নিত ছিল।
আইআরআই হল রিপাবলিকান পার্টি পরিচালিত জাতীয় এনডাওমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির (এনইডি) অধীন প্রতিষ্ঠান, যা গত ৪০ বছর ধরে সিআইএর অধীনে কাজ করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ক্ষমতা পরিবর্তনে কাজ করেছে সংস্থাটি।
ফাঁস হওয়া নথিগুলি থেকে জানা যায় যে, আইআরআই শেখ হাসিনার অপসারণের আগে লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিরোধীদলগুলোকে গোপনে প্রশিক্ষণ দিয়েছিল। পরে দেশের শহুরে যুবকদের মধ্যে একটি শাসন পরিবর্তনের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল।
রিপাবলিকান পার্টি পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানটি যাদেরকে অর্থায়ন ও প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, তাদের মধ্যে র্যাপার, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতা এবং অ্যামেরিকাদূতাবাসের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ‘হিজড়াদের নাচের পারফরম্যান্স’ আয়োজনকারী এলজিবিটি কর্মীরাও ছিল।
শুরু ২০১৮ সালে?
যে বিক্ষোভগুলো হাসিনার পতনের দিকে নিয়ে গেছে, তার সূত্রপাত ২০১৮ সালে। সেই গ্রীষ্মে, হাজার হাজার তরুণ ঢাকার রাস্তায় নামে নিরাপদ সড়কের দাবিতে, যখন একজন লাইসেন্সহীন বাস চালক দুইজন স্কুল শিক্ষার্থীকে চাপা দিয়েছিল।
সেই বিক্ষোভের পর হাসিনা প্রশাসনকে অবহেলাজনিত গাড়ি চালানোর বিরুদ্ধে আরও কঠোর আইন করতে বাধ্য করে।
সে সময় বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি ধারাবাহিকভাবে রাস্তায় বিক্ষোভ করেছে, যা প্রায়ই সংঘাতে পরিণত হতো। বিক্ষোভকারী এবং হাসিনার সরকারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই লড়াই গত ৫ আগস্ট চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে, যখন সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করে।
ক্যু-এর পর, বিশ্লেষকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকার দিকে আঙুল তুলেছেন, যা সরকারবিরোধী মনোভাব জাগিয়ে তোলে এবং ঢাকার রাস্তায় অস্থিরতা তৈরি করে।
কাকতালীয়ভাবে, সম্প্রতি ফাঁস হওয়া আইআরআই ফাইলগুলোতেও দেখা যায়, রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটাতে তারা অনলাইন প্রশিক্ষণ এবং বার্তার শৃঙ্খলার গুরুত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
আইআরআই সব সময় ‘ক্ষমতার পরিবর্তন’ চেয়েছে
আইআরআই ২০০৩ সাল থেকে ঢাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।নথিগুলি থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, আইআরআই এনজিও, কর্মী গোষ্ঠী, রাজনীতিবিদ এবং এমনকি সঙ্গীত এবং ভিজ্যুয়াল শিল্পীদের নিয়ে একটি ছায়া রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলে, যা বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি করতে ব্যবহার করা যায়।
২০১৮ সালের ছাত্র আন্দোলন এবং একই বছরের ডিসেম্বরে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের বিপুল নির্বাচনি বিজয়ের পর ক্ষমতা পরিবর্তনে আইআরআই-এর আশঙ্কাকে আরও উসকে দেয়।
২০১৯ সালে, ইনস্টিটিউটটি একটি গবেষণা শুরু করে। এতে যার মধ্যে ছিল ৪৮টি গ্রুপ ডিসকাসন এবং ১৩টি ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়, যেখানে ৩০৪ জন তথ্য প্রদানকারী ছিলেন।
গবেষণার ফলাফল অ্যামেরিকার পররাষ্ট্র দপ্তরে জমা দেওয়া হয়েছিল। আইআরআই কর্মীরা ১৭০ জনেরও বেশি গণতান্ত্রিক কর্মীকে চিহ্নিত করে যারা বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করতে আইআরআইকে সহযোগিতা করেছে।
আইআরআই তখন সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে বিএনপি বিরোধী দল তাদের সমর্থকদের সফলভাবে সংগঠিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, দলটির ‘রাস্তার আন্দোলন উসকে দেওয়ার চেষ্টা’ ভেস্তে গেছে এবং তারা ‘প্রান্তিক’ রয়ে গেছে। তবুও আইআরআই বিএনপিকেই ‘ভবিষ্যতে ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটানোর সবচেয়ে সম্ভাব্য দল’ বলে বিবেচনা করেছিল।
তবে পরিবর্তনটি ব্যালটের মাধ্যমে হবে, এ সম্ভাবনা সব সময় ছিল ক্ষীণ। অ্যামেরিকার মতে বিএনপি ‘খুব বেশি সহিংস, অন্তর্মুখী, কঠোর এবং শ্রেণিবদ্ধ’ হওয়ায় তাদের নির্বাচনে জেতার সম্ভাবনা ছিল না। তাই আইআরআই একটি ‘বিস্তৃত সামাজিক ক্ষমতায়ন প্রকল্প’ প্রস্তাব করে, যা নাগরিক কেন্দ্রিক, স্থানীয় এবং অপ্রচলিত রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ফোরামগুলো তৈরি এবং সম্প্রসারিত করবে। অর্থাৎ রাস্তায় আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তন আনার কথা বলা হয়।
আইআরআই-এর রাস্তার বিক্ষোভ এবং অনলাইন যোগাযোগের প্রতি আগ্রহের অনেক কিছুই একটি আলাদা অভ্যন্তরীণ প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এর শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশের ডিজিটাল যুগে সামাজিক মাধ্যম, প্রতিবাদ এবং সংস্কার’।
যেখানে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ‘আবারও দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিবাদ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, এবং তারা এমন একটি হাতিয়ার ব্যবহার করেছে যা তাদের পূর্বসূরিদের ছিল না। সেটি হল ইন্টারনেট।’
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘আইআরআই ভবিষ্যতে দেশের কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।’
নথিতে ব্যাখ্যা করা হয় যে, বাংলাদেশি বিক্ষোভকারীরা সফলভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে ভিডিও এবং তাদের কর্মকাণ্ডের ‘সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্যচিত্র’ প্রচার করেছে। পরে তা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে আন্দোলনের কভারেজ দিতে বাধ্য করেছে।
আইআরআই কর্মীরা উল্লেখ করেছে যে তারা সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে যাতে বাংলাদেশের যুবসমাজ অনলাইন এবং অফলাইন পরিবর্তনের হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করার জন্য জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করে।
আইআরআই বিভিন্ন ‘সামাজিকভাবে সচেতন শিল্পীদের’ও সমর্থন করেছিল, যাদের তারা শাসন পরিবর্তনের কাজে একটি গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে।
আইআরআই উল্লেখ করে যে, “যখন প্রচলিত নাগরিক সমাজ সংগঠনগুলো ক্রমাগত চাপের মুখে থাকে, তখন ব্যক্তিগত শিল্পী এবং কর্মীদের দমন করা কঠিন হয় এবং তারা প্রায়শই তাদের গণতান্ত্রিক ও সংস্কারমূলক বার্তাগুলো দিয়ে বৃহত্তর জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারে।”
তবে ওয়াশিংটনের প্রচারণা প্রচেষ্টা কেবল ব্যক্তিগত শিল্পীদের উপরই নির্ভর ছিল না।
আইআরআই আরও লিখেছিল যে, তারা তিনটি ‘প্রান্তিক সম্প্রদায়’ চিহ্নিত করেছে, যারা বিতর্কমূলক বিষয়ে ‘শক সেনা’ হিসেবে কাজ করবে। এরা হলো: বিহারি, সমতলভূমির জাতিগত গোষ্ঠী এবং এলজিবিটিআই মানুষ।
২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে, আইআরআই শিল্পী, সংগীতশিল্পী, পারফর্মার বা সংগঠনগুলোকে মোট ১১টি অ্যাডভোকেসি অনুদান দিয়েছিল। তারা রাজনৈতিক এবং সামাজিক বিষয়াবলি নিয়ে ২২৫টি শিল্পকর্ম তৈরি করে।
২০২০ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে, আইআরআই দেশে তিনটি ‘হিজড়া নৃত্য প্রদর্শনী’র আয়োজন করেছিল।
প্রতিবেদন অনুসারে, “এই পারফরম্যান্সের লক্ষ্য ছিল হিজড়া সম্প্রদায়ের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি এবং স্থানীয় সম্প্রদায় ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে হিজড়াদের বিষয়গুলো নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।”
ঢাকায় অনুষ্ঠিত শেষ পারফরম্যান্সে, অ্যামেরিকাদূতাবাস তাদের ডেপুটি কনসাল জেনারেল এবং অ্যামেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার অর্থায়নে থাকা বাংলাদেশি র্যাপাররাও অংশ নেয়।
এই বছরের জুলাই মাসে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে কাজ করা একজন ব্যারিস্টার ও শিল্পী বিক্ষোভকারীদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
আইআরআই-এর নথিপত্রে প্রকাশ পায় যে সেই ব্যারিস্টার ও শিল্পীকে অ্যামেরিকা সরকার আর্থিক সহায়তা করেছে। ইনস্টিটিউটের ফাইল অনুযায়ী, ‘আইআরআই-এর ক্ষুদ্র অনুদান প্রোগ্রামের’ অধীনে ২০২০ সালে দুটি মিউজিক ভিডিওর মধ্যে ‘তুই পারিস’ নামে প্রথমটি মুক্তি দেন।
গানটি স্পষ্টভাবে ‘যুবসমাজকে কঠিন সময়ে অধ্যবসায়ের বার্তা’ প্রদান করে এবং তাদেরকে বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে যে কোনো উপায়ে বিক্ষোভ এবং রাস্তার আন্দোলনে উৎসাহী করে।
দ্বিতীয় মিউজিক ভিডিওটির গানের কথা ছিল ধর্ষণ, দারিদ্র্য এবং শ্রমিকদের অধিকারসহ বিভিন্ন সামাজিক বিষয়কে ঘিরে। এটি সামাজিক সমস্যাগুলো প্রকাশ করে সরকারের প্রতি হতাশা ও ভিন্নমত তৈরি করার জন্য ডিজাইন করা হয়, যাতে সামাজিক ও রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি করা যায়।
‘রক্তের লালের মধ্যেই শক্তি রয়েছে’ নামে একটি হিপ-হপ গানকেও অ্যামেরিকার সরকার স্পন্সর করে।
এভাবে স্থানীয় হিপ-হপ শিল্পীদের অর্থায়ন করে, আইআরআই একটি অনন্য আমেরিকান শিল্প রূপ প্রচার করেছে’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে।
অ্যামেরিকা এভাবে দীর্ঘদিন ধরে ‘নরম শক্তি’ হিসাবে সংগীতকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে আসছে।
এআরআই লিখেছে, বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক কর্মী হয়ত সরাসরি নীতি পরিবর্তন এবং প্রাতিষ্ঠানিক আচরণে পরিবর্তন আনতে পারে না। তবে এটি অবশ্যই রাজনৈতিক বিতর্ককে চাঙা করতে এবং সামাজিক সংলাপকে এগিয়ে নিতে এবং জনসচেতনতা বাড়াতে পারে।
‘বিএনপি অজনপ্রিয় ও লক্ষ্যহীন’
আইআরআই-এর অভ্যন্তরীণ নথিপত্রে লেখা হয় যে, বিএনপির জনপ্রিয়তার অভাব বাংলাদেশে নাগরিক সমাজে অ্যামেরিকা সরকারের অনুপ্রবেশকে অবশ্যম্ভাবী করেছে।
আইআরআই একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, বহু মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন ছাড়া বিএনপি ‘সহিংসতা, বয়কট এবং অংশগ্রহণের মধ্যে দোদুল্যমান’ অবস্থায় আটকে থাকবে এবং ভোটারদের দ্বারা প্রায় সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যাত থাকবে।
আইআরআই-এর ২০২০ সালের চূড়ান্ত রিপোর্টটি আরও স্পষ্টভাবে বলে, বিএনপি ‘সফলভাবে বিরোধী দলকে সংগঠিত করতেও ব্যর্থ হয়েছে।’ তারা ২০১৮ সালের নির্বাচন বর্জন থেকে সরে এসে তাতে অংশ নিয়েছে। এই কৌশলগুলো কোনোভাবেই কাজ করেনি।
বিএনপিতে তখনও ‘প্রান্তিক অবস্থায়’ থাকার কথা বলা হলেও ভবিষ্যতে ক্ষমতার পরিবর্তন আনার জন্য তাদেরকেই সবচেয়ে সম্ভাবনাময় দল হিসেবে তুলে ধরা হয়।
কেবল আইআরআই নয়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজিসের সিনিয়র ডিরেক্টরও বিএনপির সঙ্গে বৈঠক করে।