সঞ্জয় দে, লেখক
‘দ্য সাইকোলজি অব রেভ্যুলিউশন’ বইটি এ বছরের মার্চে বেরিয়েছে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে। বইটির লেখক অ্যামেরিকার জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক ফাতালি এম. মোগাদ্দাম, জন্ম ইরানে।
‘দ্য সাইকোলজি অব রেভ্যুলিউশন’ বইয়ে ফাতালি দেখিয়েছেন, বিশ্বে সফল হিসেবে স্বীকৃত বা পরিগণিত কোনো রেভ্যুলিউশন বা বিপ্লবই শেষপর্যন্ত জনমানুষের সাধারণ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। বরং উল্টো তা আরও বেশি বিপর্যয় ও নিপীড়নের জন্ম দিয়েছে।
এই বইয়ে ফাতালি মোট পাঁচটি বিপ্লব এবং বিপ্লবের আগে-পরের পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছেন। এসব ‘বিপ্লব’ সংগঠিত হয়েছিল ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন, ইরান ও কিউবায়। বিশ্বে ক্ল্যাসিক বিপ্লবের উদাহরণ হিসেবে এগুলোকেই সাধারণত সামনে আনা হয়। তবে ফাতালি মোগাদ্দাম বলছেন, মানুষের প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যই বিপ্লবের সাফল্য ও সম্ভাবনাকে শেষপর্যন্ত সীমাবদ্ধ, এমনকি ব্যর্থতায় পর্যুবসিত করেছে। বিপ্লব কোনোভাবেই মানুষের চরিত্রগত রূপান্তর ঘটাতে পারে না, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রে আরও অচলাবস্থা তৈরি করে।
ফাতালি দেখাচ্ছেন, বিপ্লবপরবর্তী পর্যায়ে উদার সমাজের প্রত্যাশা করা হলেও প্রতিটি ক্ষেত্রে এসেছে ‘চরমপন্থা’, ন্যায্যতার পরিবর্তে বেড়েছে দুর্নীতি, নেতার আধিপত্য জোরদার হওয়ার পাশাপাশি জনগণের জন্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে প্রশ্নহীন আনুগত্য। বিপ্লবীরা তাদের বিপ্লবী লক্ষ্যে পৌঁছাতে নাগরিকদের প্রয়োজনীয় আচরণগত পরিবর্তন ঘটাতে শুধু ব্যর্থই হননি, প্রতিটি ক্ষেত্রে ‘স্বৈরাচার’-এর জায়গায় প্রতিস্থাপন হয়েছে আরও কঠোর ‘স্বৈরাচার’।
বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে ফাতালি মোগাদ্দামের দেড় ঘণ্টার একটি বক্তৃতা রয়েছে ইউটিউবে। এতে বইটি লেখার পটভূমি ব্যাখ্যা করে ফাতামি বলছেন, ১৯৭৯ সালে বিপ্লবের পর ‘নতুন দেশ’-এর স্বপ্নে বিভোর লাখো ইরানির মতো তিনিও পশ্চিমা দেশ (যুক্তরাজ্য) থেকে ছুটে গিয়েছিলেন ইরানে। ফাতালির ভাষায়- ‘আমরা ছিলাম ভীষণ খুশি। সাদাসিধা, কিন্তু খুশি। তবে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে সেই আমরা সবাই তীব্র অধিকারহীনতায় ডুবে গেলাম। আমাদের মতো সব মানুষ এবং আমাদের সন্তানেরা হতবিহ্বল হয়ে শুধু দেখলো- কী হতে কী হয়ে গেল!’
‘কেন এমনটি ঘটল’- সেই প্রশ্নের জবাব এরপর থেকে খুঁজে বেরিয়েছেন ফাতালি। উদ্যোগ নিয়েছেন মনোবিজ্ঞানের দিক থেকে বিপ্লবকে বিশ্লেষণ করার। তিনি দেখেছেন, বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা অনুসরণ বা বাস্তবায়নের কোনো আগ্রহ বা সামর্থ্য মনোজাগতিকভাবে মানুষের নেই।
সাধারণ মানুষকে উদ্দীপ্ত করে বিপ্লবে যুক্ত করার পদ্ধতি বিশ্লেষণের চেয়ে ফাতালি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিপ্লবপরবর্তী পরিস্থিতি কেমন হয়ে থাকে তার ওপর। কারণ তিনি বিপ্লব সংগঠনের কৌশল বা পদ্ধতির চেয়ে এর ফলটিকে সুদূরপ্রসারী বলে মনে করেন। কার্ল মার্ক্সকে উদ্ধৃত করে তিনি বলছেন, ‘মানব ইতিহাস একটি ধারাবাহিক আচরণগত পরিবর্তন ছাড়া আর কিছুই নয়।‘ আর প্রতিটি বিপ্লবের ক্ষেত্রে বিপ্লবী নেতারা মানুষের এই ‘আচরণগত পরিবর্তনকে’জোরদার করার ওপরেই জোর দিয়ে থাকেন।
নেতারা বিপ্লবের সময়ে ঘোষিত কিছু সুনির্দিষ্ট আদর্শের দিকে মানুষের আচরণগত পরিবর্তনের অভিমুখটি নির্ধারণ করে দেন। তবে ফাতালির পর্যবেক্ষণ হলো, বাস্তবে বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে মানুষ এ ধরনের পূর্বনির্ধারিত কোনো পথে হাঁটতে আর আগ্রহী থাকে না। পাশাপাশি রেজিম পরিবর্তনের পর প্রকাশ্য হতে শুরু করে বিপ্লবে নেতৃত্ব দেয়া বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বার্থের সংঘাত। প্রাথমিক ধাপে অপেক্ষাকৃত উদার শক্তি ক্ষমতা পেলেও পরে তাদের হটিয়ে ক্ষমতায় আসে চরমপন্থিরা। জনগণ এরপর আগের চেয়েও বেশি কর্তৃত্বের জালে বন্দি হয়, ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকে জনতার মুক্তির স্বপ্ন।
বইটির শুরুতে ফাতালি আইরিশ কবি উইলিয়াম বাটলার ইয়েটসের একটি কবিতা তুলে ধরেছেন-
Hurrah for revolution and more cannon-shot!
A beggar upon horseback lashes a beggar on foot.
Hurrah for revolution and cannon come again!
The beggars have changed places, but the lash goes on.
এ কবিতা বলছে, ‘বিপ্লব’ কেবল ভিক্ষুকের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটায়, কিন্তু তাদের পিঠে চাবুক অপরিবর্তিতই থাকে। ফাতালি একে বলছেন ‘সিকলিকাল হিস্ট্রি’ বা ইতিহাসের চক্র। বিষয়টির ব্যাখ্যায় তিনি আরও তুলে ধরেছেন, ইতালিয়ান তাত্ত্বিক ভিলফ্রেদো পেরেতোর ‘এলিট থিওরিকে’।
পেরেতো বলছেন, বিপ্লব অবশ্যই সংগঠিত হতে পারে, তবে বিপ্লবটি ঘটুক বা না ঘটুক সবকালেই সব সমাজে শাসক হিসেবে টিকে থাকেন এলিট বা উচ্চবর্গীয়রা। এলিটরা থাকেন বিভিন্ন মুখোশের আড়ালে। কখনও তারা কমিউনিস্টের মুখোশ ধারণ করেন, কখনও ধর্মীয় নেতার, এমনকি কখনও মুখোশটি হয় স্যোশালিস্ট বা ক্যাপিটালিস্টের। জনগণের জন্য এই সব মুখোশ আসলে ‘মরীচীকা’। এর আড়ালে চিরকাল জনগণকে শাসন করে যায় এলিট গোষ্ঠী।
কী কী সীমাবদ্ধতায় বিপ্লবোত্তর পর্যায়ে গণতন্ত্রে উত্তোরণ কঠিন হয়ে পড়ে তা বিশ্লেষণ করেছেন ফাতালি মোগাদ্দাম। এখানে তিনি দুটি ‘ধারণা’ উত্থাপন করেন। প্রথমটি হলো- পলিটিকাল প্লাস্টিসিটি বা রাজনৈতিক নমনীয়তা। অর্থাৎ মানুষের মনোজগতের গ্রহণ-শক্তি অনুসারে কোন পথে, কতটা এবং কত দ্রুত রাজনৈতিক পরিবর্তনটি ঘটানো সম্ভব অথবা সম্ভব নয়- সেটিই হলো মানব মনের পলিটিকাল প্লাস্টিসিটি। কোন ক্ষেত্রে মানব মনের পলিটিকাল প্লাস্টিসিটি উচ্চমাত্রার এবং কোন ক্ষেত্রে কম- সেটি বিবেচনায় রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন ফাতালি।
ফাতালির উত্থাপিত দ্বিতীয় ‘ধারণা’টি হলো ‘হার্ডওয়্যারিং’। তিনি বলছেন, একটি বিপ্লব কোনো ব্যক্তির মনোজাগতিক বৈশিষ্ট্যের রূপান্তর ঘটাতে মোটা দাগে অক্ষম। কারণ ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক অজস্র প্রপঞ্চের মাধ্যমে এসব বৈশিষ্ট্য অনেক আগে থেকেই নির্ধারিত।
এসব প্রপঞ্চকে ফাতালি বলছেন বাহ্যিক ‘হার্ডওয়্যার’। আমাদের ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য কেমন হবে সেটি নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু হয় আমাদের জন্মেরও আগে থেকে। আমাদের আশপাশে বিস্তৃত সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল এবং একে কেন্দ্র করে নির্মিত বিভিন্ন বয়ানই নির্ধারণ করে আমাদের আচরণগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তি। এসব ‘হার্ডওয়্যার’ কোনো না কোনোভাবে আমাদের সামগ্রিক আচরণকে আজীবন নিয়ন্ত্রণ করে চলে।
বিপ্লবের জন্য জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের অনুঘটক কাজ করতে পারে। ফাতালি বলছেন, এর মধ্যে রয়েছে ‘ভালো বিকল্পের’ প্রত্যাশা, বিদ্যমান ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ, এই অসন্তোষজনক ব্যবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী না ভাবা, বিদ্যমান শাসকগোষ্ঠীকে এই অসন্তোষের কারণ মনে করা, বিদ্যমান শাসকগোষ্ঠীকে ‘অবৈধ’ ভাবা এবং ভাবতে পারা যে- বিদ্যমান শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাত করা সম্ভব। বিদ্যমান শাসককে উৎখাত করে ‘ভালো’ শাসককে ক্ষমতায় আনার প্রত্যাশাও মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে বিপ্লবে।
বিপ্লবের মাধ্যমে একটি রেজিমের পরিবর্তন ঠিক কখন ঘটবে সে ব্যাপারে পূর্বানুমান অত্যন্ত কঠিন বলে মনে করেন ফাতালি। রুশ বিপ্লবের উদাহরণ টেনে তিনি বলছেন, এমনকি লেনিনও এই পূর্বানুমান করতে পারেননি। ফলে জারের পতনের ক্ষণে লেনিন ছিলেন অনেক দূরে সুইজারল্যান্ডে। চূড়ান্ত পর্যায়ের খবর পেয়ে তাড়াহুড়ো করে তিনি ফেরেন রাশিয়ায়। এরপর সুকৌশলে নিজেকে স্থাপন করেন বিপ্লবের চালকের আসনে।
বিপ্লবের পূর্বাবস্থায় এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন শক্তি নিজেদের মধ্যে বিভাজন এড়িয়ে একতাবদ্ধ থাকে। কারণ, তখন সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ কেবল বিদ্যমান রেজিম উৎখাতের দিকে। তবে বিপ্লবের পরপরই বদলে যায় এ চিত্র। বড় হয়ে সামনে আসে পলিটিকাল প্লাস্টিসিটির প্রশ্ন। শুরু হয় বিপ্লবে অংশ নেয়া শক্তিগুলোর ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য বাস্তবায়নের প্রতিযোগিতা। কারও লক্ষ্য গণতন্ত্রায়ন, আবার কারও লক্ষ্য স্রেফ ক্ষমতা দখল।
ফাতালির পর্যবেক্ষণ, বিপ্লবের পর প্রাথমিকভাবে ক্ষমতায় আসে মধ্যপন্থিরা। তবে এর পরেই আসে চরমপন্থি শক্তি। চীনে মাও সে তুংয়ের শাসন পরে তাই রূপ নিয়েছে রেড গার্ডের শাসনে। ইরানে বামপন্থি ও শিক্ষিত লাখো তরুণকে হটিয়ে কায়েম হয়েছে খামেনির ইসলামি শাসন। রাশিয়ায় লেনিনের জায়গায় আসেন কঠোর হৃদয় স্ট্যালিন।
বিপ্লবে অংশ নেয়া জনতা মনে করে, বিপ্লবোত্তর কালে সবার সম্মিলিত এবং ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তৈরি হবে ‘নতুন দেশ’। তবে বাস্তবে এটি ঘটে না। এমনকি স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ গড়ে তোলার পর্বেও ঘটেনি। এ নিয়ে বহু আক্ষেপ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কণ্ঠেও শোনা গেছে।
‘দ্য সাইকোলজি অব রেভ্যুলিউশন’ বইয়ে অধ্যাপক ফাতালি এম মোগাদ্দাম বলছেন, মানুষের ‘যৌথ প্রচেষ্টা’র ওপর বিপ্লবীরা জোর দিলেও মানুষের মনোজগত যূথবদ্ধ কাজের জন্য মোটেই তৈরি নয়। মনোবৈজ্ঞানিক পরীক্ষাতেও এটি প্রমাণিত।
বিষয়টিকে সামাজিক মনোবিদ্যায় ব্যাখ্যা করা হয় ‘স্যোশাল লোফিং’ হিসেবে। স্যোশাল লোফিং হলো এমন একটি মনোবৈশিষ্ট্য যেখানে একজন ব্যক্তি কোনো গ্রুপভিত্তিক কাজে অংশ নিলে নিজের সামর্থ্যের পুরোটা ব্যয় করেন না। বরং তিনি তখন গ্রুপের অন্যদের সামর্থ্যকে ব্যবহারের সুযোগ খুঁজতে থাকেন। ফাতালি বলছেন, গ্রুপভিত্তিক প্রচেষ্টায় কিছু মানুষ কোনো কাজই করেন না। কেউ কেউ কিছুটা কাজ করেন। ফলে শেষপর্যন্ত পুরো কাজের দায়িত্ব বর্তায় গ্রুপের দুই-একজনের ওপর।
এ ক্ষেত্রে একটি মজার উদাহরণ দিচ্ছেন তিনি। মনোবৈজ্ঞানিক একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের একটি কক্ষে নিয়ে বলা হয়- একটি রশিকে যতটা সম্ভব শক্তি দিয়ে টানতে হবে। এরপর অংশগ্রহণকারীদের চোখ বেঁধে দেয়া হয়। দেখা গেছে, রশিটি হাতে ধরিয়ে কাউকে যখন বলা হচ্ছে- তিনি একলাই কেবল সেটি টানছেন, তখন তিনি নিজের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করেন। আবার যখন তাকে বলা হচ্ছে, তার পিছনে আরও কয়েকজন রশিতে হাত লাগিয়েছেন (আসলে তখনও তার পেছনে কেউ নেই), তখন ওই ব্যক্তিই আগের তুলনায় কম শক্তি ব্যয় করেন!
তাই সমাজে মানুষের ‘যৌথ প্রচেষ্টা’র ধারণা একদম ইউটোপীয় চিন্তা। ফাতালি যে পাঁচটি ‘ক্ল্যাসিক বিপ্লব’ বিশ্লেষণ করেছেন তার কোনোটিতেই বিপ্লবপরবর্তী কালে মানুষের ‘যৌথ প্রচেষ্টা’ কার্যকর হয়নি। বিপ্লবোত্তর সোভিয়েত ইউনিয়নে বিপ্লবী নেতৃত্বের হাতে একচ্ছত্র ক্ষমতা থাকলেও ব্যর্থ হয় ‘যৌথতার উদ্যোগ’। উল্টো উৎপাদনশীলতা কমেছে মানুষের।
চীনে ক্ষমতা গ্রহণের পর মাও ঘোষণা দেন, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি অফিস এতদিন দুর্নীতিবাজ ছাড়া আর কিছুই জন্ম দেয়নি। এজন্য রেড গার্ডের মাধ্যমে ঘটাবেন নতুন সাংস্কৃতিক বিপ্লব। মাও আগের শিক্ষাপদ্ধতি ভেঙে দিয়ে নাগরিকদের নতুন শিক্ষায় শিক্ষিত করার পদক্ষেপও নেন। চালু করেন যৌথ খামার। তবে সেসব প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়, দেশটিতে নতুন ফরম্যাটে গৃহীত হয় পুঁজিবাদ।
ক্যাম্বোডিয়ায় খেমারুজরা ক্ষমতা গ্রহণের পরে শহরগুলোকে ‘দুর্নীতি ও পুঁজিবাদের আখড়া’ হিসেবে ঘোষণা করে। লাখো মানুষকে শহর থেকে গ্রামে তাড়িয়ে দিয়ে চালু করা হয় যৌথ কৃষিখামার। তবে অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটানো ছাড়া যৌথ কৃষিখামারগুলো কোনো কাজে আসেনি।
ফাতালির অভিমত- বিপ্লবের পর বিপ্লবী নেতৃত্ব পূর্ণ শক্তি নিয়ে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়। এরপরেও বিপ্লবের ‘নির্ধারিত আদর্শের’ পথে মানুষের মনোজাগতিক বৈশিষ্ট্যের রূপান্তর ঘটানোর সামর্থ্য কোথাও দেখা যায়নি। বিপ্লবের ৪০ বছর পার হলেও ইরানের শাসকগোষ্ঠী এখনও বিপ্লবের আদর্শে নাগরিকদের অনুগত রাখার প্রচেষ্টায় হিমশিম খাচ্ছে। ফাতালির বিশ্লেষণ- নিম্নমাত্রার পলিটিকাল প্লাস্টিসিটি এবং মানুষের মনোজাগতিক বৈশিষ্ট্যই এর মূল কারণ।
বিপ্লবপরবর্তী সময়ে উদার বা মধ্যপন্থি শক্তির ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ার বিপরীতে চরমপন্থিদের শক্তিশালী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ফাতালি বলছেন, প্রথম পর্যায়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত মধ্যপন্থি শক্তি ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণের চেষ্টা চালায়। তবে চরমপন্থিদের নীতি এর পুরোপুরি উল্টো। চীনে বিপ্লবের সমালোচনাকারীদের সরাসরি নির্মূলের নীতি গ্রহণ করে রেড গার্ড। ইরানে খামেনির বিরোধিতাকারীদের নিশ্চিহ্ন করতে নেয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ।
বিপ্লব পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ক্ষীণতর হয় উদার বা মধ্যপন্থি শক্তি। একপর্যায়ে এসব শক্তি চরমপন্থিদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা চালায়। ইরানে বিপ্লবপরবর্তী প্রথম প্রধানমন্ত্রী মেহদি বাজারগানের উদাহরণ দিয়ে ফাতালি বলছেন, ক্ষমতার প্রথম বছরে উদারপন্থি এই নেতা বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সমঝোতার বিস্তর চেষ্টা করেছিলেন। তবে তাকে পরোয়া করার ধৈর্য পর্যন্ত দেখায়নি চরমপন্থিরা। চরমপন্থিদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ক্ষমতা দখল। ঠিক একইভাবে রুশ বিপ্লবের পর যেকোনো উপায়ে ক্ষমতা চেয়েছে বলশেভিকরা। কিউবায় এটি করেছেন ফিদেল কাস্ত্রো।
বিপ্লবপরবর্তী প্রথম পর্যায়ে চরমপন্থি শক্তি নিজেদের সুনির্দিষ্ট চিন্তাপদ্ধতি কার্যকরে মরিয়া হয়ে ওঠে। ফাতালি বলছেন, এই চিন্তাপদ্ধতিটি খুবই সরল। চরমপন্থিরা প্রচার করে, একমাত্র তাদের আদর্শই ঠিক। এর বিপরীতে যারা তারা সবাই ‘ভুল’। আর এই বিপরীত চিন্তার মানুষ অবস্থান বদল না করলে নির্মূল করা হবে। এমন কঠোর অবস্থানের ফলে উত্তুঙ্গে পৌঁছায় চরমপন্থি-মধ্যপন্থি দ্বন্দ্ব এবং শেষপর্যন্ত নৃ*শংসতার কাছে পরাজয় ঘটে মধ্যপন্থার।
বিপ্লবী নেতার প্রতি প্রশ্নহীন আনুগত্য নিশ্চিতের পদক্ষেপ নেয় চরমপন্থি শক্তি। লেনিন প্রসঙ্গে একটি প্রতিবেদন উদ্ধৃত করে ফাতালি বলছেন, ‘পার্টির নেতা হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে লেনিন ছিলেন যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জের বাইরে। সবাই তাকে দেখতেন শীর্ষ নেতা হিসেবে। কেউ তাকে সমালোচনা করতে পারেন- এমন ধারণা করাও ছিল অবিশ্বাস্য। অনুসারীদের কাছে লেনিন ছিলেন একজন নবীর মতো। ১৯২০ সালের মধ্যে তিনি নিজেকে অনেকটা দার্শনিক-রাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। নিজস্ব হাইপোথিসিস নিয়ে বক্তব্য দিতে শুরু করেন দেশব্যাপী। এসব হাইপোথিসিকে স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে মেনে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না জনগণের।’
ফাতালির মতে, ঠিক কোন পদ্ধতিতে নেতাকে অনুসরণ করতে হবে সেটি আমরা মানসিকভাবে শিখতে থাকি একদম শৈশব থেকে। বিষয়টি এমন নয় যে, ২৫ বা ৩০ বছরে পৌঁছে এই পদ্ধতি আমাদের আত্মস্থ হয়। আবার অনুসরণের স্টাইলটিও অত্যন্ত জটিল এবং এতে পরিবর্তন ঘটে খুব খুব ধীরগতিতে।
নেতাকে অনুসরণের মনোজাগতিক ক্ষেত্রটিতে রাজনৈতিক নমনীয়তা বা পলিটিকাল প্লাস্টিসিটি খুব কম বলেই মনে করেন ফাতালি। তিনি বলছেন, পুরো বিষয়টির সঙ্গে ব্যক্তির পারিপার্শ্বিক সাংস্কৃতিক হার্ডওয়্যারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ফলে এতে রাতারাতি পরিবর্তন ঘটানো অসম্ভব। তবে প্রতিটি বিপ্লবের পর নতুন নেতা জনসাধারণের আনুগত্য নিশ্চিতে জোর খাটান, আর তা থেকেই জন্ম নেয় নতুন একনায়কতন্ত্রের।
এভাবেই ফরাসি বিপ্লবে রাজাকে উৎখাতের ধারাবাহিকতায় এসেছেন সম্রাট নেপোলিয়ন, রাশিয়ায় জারের পর আসেন লেনিন-স্ট্যালিন, চীনে সম্রাটের পতনে এসেছেন মাও, কিউবায় ক্যাস্ত্রো পরিবার, ইরানে শাহ শাসন বদলে দিয়ে জনগণ পেয়েছে খামেনির শাসন।
দুর্নীতির উচ্ছেদ বিপ্লবের অন্যতম একটি আকাঙ্ক্ষা। তবে ফাতালির পর্যবেক্ষণ, রেজিম পরিবর্তনের পর দুর্নীতি আরও প্রকট হতে পারে। বিপ্লবপরবর্তী সময়ে নতুন শাসক চান প্রশ্নহীন আনুগত্য, ফলে দুর্নীতি হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য। রাশিয়া, চীন, কিউবা, ইরানের মতো দেশ এখনও ভুগছে এ সংকটে। এসব দেশে দুর্নীতি শুধু শাসকগোষ্ঠীর ভেতরে আটকে থাকেনি, সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশ্বে ক্ল্যাসিক বিপ্লব হিসেবে পরিচিত পাঁচটির ক্ষেত্রেই বিপ্লবের পর জনমানুষের মনোজগতকে সুনির্দিষ্ট কিছু বিপ্লবী আদর্শের দিকে পরিচালিত করতে শক্তির আশ্রয় নিয়েছে চরমপন্থি শক্তি। ফাতালি এই প্রক্রিয়াকে তিনি দেখছেন, বিশাল আকারের একেকটি ‘সাইকোলজিকাল এক্সপেরিমেন্ট’ হিসেবে। তবে শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পারেনি- রাজনৈতিক অনেক বিষয়েই জনগণের মনোজগতে পলিটিকাল প্লাস্টিসিটির মাত্রা বেশ কম। চাইলেই এতে রাতারাতি পরিবতর্ন ঘটানো যায় না। এজন্য প্রতিটি বিপ্লবের পর শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে মনোজগতকে বদলানোর কৌশল ব্যর্থ হতে বাধ্য এবং বাস্তবে সেটাই ঘটেছে।
বিপ্লবোত্তর প্রেক্ষাপটে আগের রেজিম সংশ্লিষ্টদের ভুল স্বীকার করার ওপরেও জোর দেয় নতুন শাসকগোষ্ঠী। মানুষকে ধরেবেঁধে এনে বলানো হয়, এতদিন তারা যা করেছে তা ছিল ভয়াবহ অন্যায়। এ ধরনের অনেক ঘটনার নৃ*শংস ভিডিও দেখেছেন ফাতালি। তিনি বলছেন, তবে এই জোরজলুমেও বদলায় না মানুষ। চাপের মুখে একজন হয়ত স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য হন, তবে এর অর্থ এই নয় যে, পরদিন থেকে তিনি নিজেকে ‘শুধরে’ নিয়ে বিপ্লবের আদর্শে দীক্ষিত হবেন।
ফাতালির ভাষায়, বিপ্লবের পর মানুষের সাধারণ বৈশিষ্ট্যের বিপরীতে গিয়ে চরমপন্থি গোষ্ঠী সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগের নীতি গ্রহণ করায় পরিস্থিতি ক্রমশ অসহনীয় হয়ে ওঠে। বিপ্লবী শক্তি অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার মতো বৃহত্তর ক্ষেত্রে রাতারাতি পরিবর্তন ঘটানোর ঘোষণা দেয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দ্রুত হাতবদল ঘটে। যৌথ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক অনেক চিত্তাকর্ষক পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে ফাতালি বলছেন, রাতারাতি এসব পরিবর্তন কাগজপত্রে ঠিকঠাক দেখানো গেলেও মাইক্রো লেভেল বা ব্যক্তির আচরণগত পর্যায়ে এর প্রভাব পড়ে না।
বিপ্লবের ‘আদর্শ’ থেকে পিছু হটার জনমানসিকতা ঠেকানোর উপায় নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগেছেন খোদ ক্ল্যাসিক বিপ্লবের নেতারাও। এ কারণে চীনে মাও সে তুং জোর দিয়েছিলেন অবিরাম বিপ্লবী সংগ্রামের ওপর। তিনি বলতেন, ‘বিপ্লবের মাধ্যমে বাজে লোকজন হটিয়ে দিয়ে আমরা সুন্দর শাসন কায়েম করেছি। তবে মানুষ আবার সেই পুরোনোর দিকেই ঝুঁকছে। তাদের স্বভাব বদলানো যাচ্ছে না। তাই আমাদের বিপ্লবের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। খারাপ লোকজনকে দূরে রাখতে একের পর এক বিপ্লবের ঢেউ তুলতে হবে।’
ফাতালির পর্যবেক্ষণ- এভাবে বিপ্লবের ছাঁকুনি বারবার ব্যবহার করেও বিপ্লবী শাসকরা জনতাকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছেন। ইরানে ঘটেছে একই ঘটনা। তারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলতে চাইলেও বিভিন্ন সময়ে শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে সোচ্চার প্রতিবাদ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা থেকেই।
‘দ্য সাইকোলজি অব রেভ্যুলিউশন’ বইয়ের শেষ ভাগে ইলিউশন মটিভেশন মডেল অফ রেভ্যুলিউশন বা বিভ্রমজাত বিপ্লবী প্ররোচনা মডেল নিয়ে আলোচনা করেছেন ফাতালি এম মোগাদ্দাম। তিনি বলছেন, বিপ্লবের আগে দুই ধরনের বিভ্রম জনতাকে রেজিম পরিবর্তনে প্ররোচিত করে।
প্রথমটি হলো- সুপ্রিম রেভ্যুলিশনারি ইলিউশন বা উচ্চমাত্রার বিপ্লবী বিভ্রম। এক্ষেত্রে জনতা মনে করে, বিভিন্ন ধরনের স্বার্থ ও বিশ্বাস থাকার পরেও বিপ্লবের পর নির্বিশেষে সবার জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে। দ্বিতীয়টি হলো- ইলিউশন অফ ইউনিটি বা ঐক্যের বিভ্রম। জনতা মনে করে, নাগরিকদের মধ্যে গোষ্ঠী ও স্বার্থগত যত মতপার্থক্যই থাকুক না কেন, বিপ্লবের পর সব ঘুঁচে গিয়ে গড়ে উঠবে ঐক্যের দেশ। ফাতালি বলছেন, মধ্যপন্থিরাই এই দুটি বিভ্রমে আক্রান্ত হন। তবে বিপ্লবের পরপরই তা কেটে যেতে থাকে, কারণ অ*স্ত্রের মুখে ক্ষমতা নিতে মরিয়া চরমপন্থিরা এসবের কোনো ধার ধারে না।
বিপ্লবপরবর্তী সময়ে আরেক বিভ্রমে আক্রান্ত হন মধ্যপন্থিরা। ফাতালি একে বলছেন, ইলিউশন অফ র্যাশনালিটি বা যৌক্তিকতার বিভ্রম। ইরানে বিপ্লবের পর ক্ষমতাসীন প্রথম প্রধানমন্ত্রী মেহদি বাজারগান জনতার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী দেশ সংস্কারের চেষ্টা করেছিলেন। তবে তা কার্যকর হয়নি, কারণ ফাতালির ভাষায়- বিপ্লবপরবর্তী পরিস্থিতির মূল গতিপথ নির্ধারণ হয় ‘অযৌক্তিকতা’র ভিত্তিতে। মানুষের সীমাহীন আবেগ এবং নানান বঞ্চনাবোধ থেকেই উদ্ভব এসব অযৌক্তিকতা।
ফাতালি বলছেন, বিপ্লবের আগে জনগণকে শোনানো হয় অধিকার প্রতিষ্ঠার গালগল্প। তবে বিপ্লবের পর তাদের কাঁধে চেপে বসে কেবল কর্তব্য পালনের ভার। কারণ বিপ্লবের পর অধিকারের প্রশ্ন যত সামনে আসবে. নতুন শাসকের প্রতি তত বাড়তে থাকবে মানুষের অসন্তোষ। ফলে অধিকার প্রতিষ্ঠার চেয়ে বিপ্লবের আদর্শ রক্ষার দায়িত্ব জনগণের সামনে হাজির করায় মনোযোগী হয় নতুন শাসক।
বিপ্লবের পর চরমপন্থি শক্তিও দুটি বিভ্রমে আচ্ছন্ন হয়। প্রথমটি হলো- ইলিউশন অফ কন্ট্রোল বা নিয়ন্ত্রণের বিভ্রম। বিপ্লবের পর তারা মনে করতে থাকে, তারা মানুষের সব আচরণ নিয়ন্ত্রণে সক্ষম। আরেকটি হলো- ইলিউশন অফ পার্মানেন্স। চরমপন্থিরা ভাবতে শুরু করে, শাসনক্ষমতা চিরকাল তাদের দখলেই থাকবে। ফাতালির ভাষায়, এই দুই বিভ্রম চরম শক্তি প্রয়োগের দিকে টেনে নিয়ে যায় চরমপন্থিদের।
ফাতালি এম মোগাদ্দাম যেসব ক্ল্যাসিক বিপ্লব পর্যালোচনা করেছেন তার মধ্যে অ্যামেরিকান বিপ্লব কেন নেই- সে প্রশ্নের জবাব তিনি দিয়েছেন। অ্যামেরিকান বিপ্লবকে দুটি কারণে আলাদা বিবেচনা করছেন তিনি। প্রথমত ওই বিপ্লব ঘটেছে বর্হিশক্তি অর্থাৎ যুক্তরাজ্যের ঔপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে (ঠিক যেমনটি আলজেরিয়ায় ঘটেছে ফরাসিদের বিরুদ্ধে)। আর দ্বিতীয়ত বিপ্লবের পর অ্যামেরিকায় তাৎক্ষণিক বড় কোনো পরিবর্তন ঘটানোর চেষ্টা হয়নি।
ফাতালি বলছেন, অ্যামেরিকা স্বাধীন হওয়ার পর ভোটাধিকার পেয়েছিল শুধু ‘মুক্ত’ পুরুষেরা। নারীরা সেটি পায়নি, দাস জীবনে থাকা অশেতাঙ্গ পুরুষও পায়নি। নারীদের ভোটাধিকার পেতে সময় লেগেছে আরও প্রায় দেড় শ’ বছর। কৃষ্ণাঙ্গের অধিকার স্বীকৃত হয়েছে আরও অনেক পরে।
ফাতালি বলছেন, স্বাধীনতা লাভের পর ‘মুক্ত’ পুরুষ যে ভোটাধিকার অ্যামেরিকায় পেয়েছে তা আড়াই হাজার বছর আগে এথেন্সেও ছিল। তবে নারী বা দাসের সেই অধিকার ছিল না। আড়াই হাজার বছর পরের বিপ্লবপরবর্তী অ্যামেরিকাতেও এ ধরনের বিভিন্ন বিষয়ে হুট করে পরিবর্তন ঘটানো হয়নি। সেখানে পরিবর্তনটি এসেছে ধীরে ধীরে, যে কারণে এসব নিয়ে মানুষের কমমাত্রার পলিটিকাল প্লাস্টিসিটি বড় ধাক্কার মুখে পড়েনি।
ফাতালির অভিমত, প্রপাগান্ডার বাইরে গিয়ে বিপ্লবকে সামগ্রিকভাবে পর্যবেক্ষণ করলে আশাহত হওয়া ছাড়া বিশেষ কিছুই পাওয়া যায় না। আরব বসন্তের প্রসঙ্গও এসেছে তার বক্তৃতায়, সেখানেও পর্যবেক্ষণ অনেকটা একই।
ইউটিউবে বক্তৃতাটি আপলোডের তারিখ গত ২৭ জুন। এর ৩৯ দিন পর বাংলাদেশে পতন ঘটে হাসিনা রেজিমের। কেউ বলছেন এটাও বিপ্লব, কেউ বলছেন গণঅভ্যুত্থান। সমর্থকদের দাবি, ‘নতুন দেশ’-এ এখন চলবে সব নাগরিকের সম্মৃদ্ধি, অধিকার, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কাজ।
এবার অপার হয়ে বসে আছি ফাতালিকে মিথ্যা প্রমাণের আশায়…