বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় হেলিকপ্টার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি ছোড়ার অনেক অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু তা বেমালুম অস্বীকার করছে প্রতিটি বাহিনী। র্যাব থেকে সাফ জানানো হয়েছে, তারা হেলিকপ্টার থেকে কোনো গুলি ছোড়েনি। একই ভাষ্য পুলিশ ও বিজিবিরও। ফলে প্রশ্ন উঠছে, আন্দোলনের সময় হেলকপ্টার ব্যবহার করে আকাশ থেকে গুলি ছুড়েছিল কারা?
আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের সময় বাড়িতে, বাড়ির আঙিনায় ও পরিবারের সঙ্গে থাকা অবস্থায় গুলিতে নিহত ১০ শিশুর প্রত্যেকের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট হয়। রিট আবেদনের শুনানিতে হেলিকপ্টারের প্রসঙ্গটি আসে। আন্দোলন চলাকালেই গত ৩১ জুলাই রিট আবেদনটি করেন এক সময়ের বিএনপি নেতা, আইনজীবী তৈমূর আলম খন্দকার। সরকার পতনের পর গত ১৪ আগস্ট শুনানিতে ‘হেলিকপ্টার দেখতে এসে লুটিয়ে পড়েন সুমাইয়া’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন তৈমুর আলম।
কিন্তু সব বাহিনীই হেলকপ্টার থেকে গুলি করার অভিযোগ নাকচ করছে। আন্দোলন চলাকালেই গত ২৬ জুলাই র্যাব এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছিল, যারা রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল, তাদের ছত্রভঙ্গ করতে হেলিকপ্টার থেকে শুধু কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল। গত ১৮ জুলাই বাড্ডায় কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদে আটকে পড়া পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করতে সেখানে হেলিকপ্টার গিয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তির ভাষ্য এখনো দিচ্ছে র্যাব।
গত বুধবার র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌসকে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে র্যাবের হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয়েছিল কি না? জবাবে তিনি বলেন, র্যাবের সদস্যরা ছাত্র-জনতার ওপর কোনো গুলি চালায়নি। আমরা হেলিকপ্টার থেকে কেবল টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছি। হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে, এরকম কোনো ভিডিও নেই। আপনাদের কারও কাছে যদি গুলি করার কোনো ভিডিও থাকে, আপনারা সেগুলো দিলে র্যাব তা যাচাই করবে। গত শনিবার আরেক সংবাদ সম্মেলনে মুনীম ফেরদৌস দাবি করেন, আন্দোলন চলাকালে র্যাব প্রাণঘাতী কোনো অস্ত্রই ব্যবহার করেনি।
আন্দোলনের সময় পুলিশ লেখা হেলিকপ্টারও উড়তে দেখা গিয়েছিল। সেবিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর সপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এআইজি ইনামুল হক সাগর একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পুলিশের নিজের ব্যবহারের হেলিকপ্টারই এখন নেই। পুলিশের দুটি হেলিকপ্টার কেনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে রাশিয়া থেকে। সেই দুটি হেলিকপ্টার এখনও দেশে আসেনি। বর্তমানে পুলিশের যে দুটো হেলিকপ্টার আছে, সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে র্যাবে। কারণ র্যাব পুলিশ বাহিনীরই একটি অংশ।
আন্দোলন দমনে বিজিবিও কোনো হেলিকপ্টার আকাশে ওড়েনি বলে দাবি করছেন বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আন্দোলন দমনে র্যাবের মতো বিজিবিকেও হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিজিবির হেলিকপ্টার একদিনের জন্যও ব্যবহার করা হয়নি।
previous post
next post