আলি শরিয়তি, লেখক
(প্রথম পর্ব)
না, বিখ্যাত মার্কিন কমেডি সিনেমার কথা বা আনিসুল হকের ‘জেনারেল ও নারীরা’ উপন্যাসের কথাও লিখবো না। Stooges শব্দের কোন অর্থটি লেখায় ব্যবহৃত হয়েছে তা বুঝতে লেখাটা পড়তে হবে।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তথা সামরিক বাহিনী ক্রমশ একটা অথর্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। কয়েক বছর ধরেই গোপনীয় অনেক তথ্য বাইরে চলে যাচ্ছে। বিদেশে বসে কয়েকজন ব্লগার, ইউটিউবার ও ফেইসবুকার এসব দিব্যি ফেইসবুক টুইটারে প্রকাশ করছে। অথচ সামরিক বাহিনি এটা বন্ধ করতে পারেনি। এসব তথ্য নিশ্চয়ই সিভিলিয়ান বা সামরিক বাহিনীর বাইরের কেউই সরবরাহ করেনা।
এমনকি সৈনিক বা ননকমিশন্ড কারও পক্ষেও সম্ভব না। ভেতরের বড় বড় অফিসাররাই সরবরাহ করে। ফলে এটা বলা অন্যায় হবেনা যে, তথ্যপাচারকারী অফিসাররা সামরিক বাহিনীকে ভালোবাসে না, দেশপ্রেমিক হবার প্রশ্নই আসেনা। চাকরির ট্রেনিং ও আইনের লঙ্গন নিয়মিতভাবে ঘটছে আর কয়েকজনের ফেইসবুকে সেসব দেখে মানুষ অবাক হচ্ছে।
এমন একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের ভেতরের খবর বাইরে চলে যাওয়ার প্রেক্ষিতেই অথর্ব শব্দের ব্যবহার নিশ্চয়ই অযৌক্তিক হয়নি।
৫ আগস্ট দেশে একটি ছাত্র-গণ ও সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেছে। সেদিন টেলিভিশনে দেয়া ভাষণে পরবর্তী সরকার গঠনের আগ পর্যন্ত দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করে জেনারেল ওয়াকারুজ্জামান প্রমাণ করেছেন, এই অভ্যুত্থানের তিনিই প্রধান নেতা, মাস্টারমাইন্ড না হলেও তিনিই একমাত্র নায়ক।
৫ তারিখের পর থেকেই সেনাবাহিনীতে শুরু হয় অস্বাভাবিক বদলি, প্রমোশন ও চাকরিচ্যুতি।
প্রমোশন ও নতুন পদায়নের প্রথম সুবিধাভোগী হলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসান। তাঁকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার(পিএসও) পদে বসানো হয়। জানা গেছে ২১তম বিএমএ লং কোর্সের এই কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর সিদ্ধাত ৫ তারিখ বিকালেই গৃহীত হয়। সেদিন সেনাপ্রধানের সাথে অনুষ্ঠিত জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামের বৈঠকেই তা হয়। পাঠক যা বোঝার বুঝে নিন।
পদায়নের ধারাবাহিকতায় মেজর জেনারেল মোঃ মাসুদুর রহমানকে সেনা সদরের অ্যাডজুটেন্ট জেনারেল (এজি) পদে, মেজর জেনারেল মীর মুশফিকুর রহমানকে সেনা সদরের সামরিক সচিব (এমএস) পদে বসানো হয়। এসব পদে দায়িত্বরত পূর্ববর্তী কর্মকর্তাদের নির্ধারিত সময়ের আগেই বিদায় করে যথাক্রমে ২৫ ও ২৪তম বিএমএ লং কোর্সের এই দুজনকে বসানো হয়।
এখান থেকেই তৈরি হয় একটি আন-অফিশিয়াল ট্রায়ো বা ত্রয়ী সার্কেল। অবশ্য এই ট্রায়ো-রা আন্দোলনের সময়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন, যা ছাত্র সমন্বয়ক ও সংশ্লিষ্ট কূটকৌশলীরা জানেন। এভাবেই এই ট্রায়োর ক্ষমতা নিরঙ্কুশের বলির পাঁঠা হয়েছেন কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ মজিবুর রহমান ও মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের কথা বাদ দিলাম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহম্মদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল হামিদুল হকের বাধ্যতামূলক অবসর নিয়ে খোদ সেনাবাহিনীতে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিশেষ করে হামিদুল হকের মতো সৎ, দক্ষ ও পেশাদার অফিসারের অকালীন অবসরের ফলে জুনিয়র অফিসারেরা চরম অনিশ্চয়তায় ভুগছে। জুনিয়ররা কি সিনিয়র অফিসারের, তথা সরকারের নির্দেশে কাজ বা দায়িত্ব পালন করলেই পরবর্তীতে দোষী সাব্যস্ত হবেন ?
এভাবেই একটি সুশৃঙ্খল বাহিনীকে পঙ্গু করে দেয়া হচ্ছে। এই তিনজনের ইচ্ছার বাইরে সেনাছাউনিগুলোতে বর্তমানে গাছের পাতাও নড়ে না। সেনাপ্রধানের ওপরে তাঁদের বিপুল প্রভাব। সকল বদলি, প্রমোশন, পদায়ন সবকিছু করছে এই ট্রায়ো।
অথচ তারা সকলেই বিগত ১৫ বছরের সুবিধাভোগী। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তাদের প্রমোশনের কারণে কতজন অফিসার বঞ্চিত হয়েছেন, তা শুধু বঞ্চিতরাই জানেন। কিন্তু তারাই এখন সেনাবাহিনীতে বৈষম্য নিরসনের কারিগর সেজেছেন।
দ্বিতীয় পর্বে থাকবে আরও কিছু। সকল শ্রুত কথা বিশ্বাস করা ঠিক না। যাচাই করতে সময় লাগে। সেজন্য পাঠকদের কাছে সময় ও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
#আলিশরিয়তি