বাংলাদেশের ধামরাইয়ে একটি কারখানার সামনে এই ঘটনা ঘটে। পরে অন্য নারী শ্রমিকরা দুই জনকে ছাড়িয়ে আনে। এই ঘটনায় এক সেনা কর্মকর্তা শ্রমিকদেরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ শ্রমিকদের।
এনওয়াই বাংলা স্পেশাল
ঢাকার অদূরে ধামরাই উপজেলায় একটি পানীয় উৎপাদন কারখানায় বিভিন্ন দাবিতে অসন্তোষ চলাকালে দুই শ্রমিককে হাঁটু মুড়ে বসিয়ে রোদের দিকে তাকিয়ে থাকার শাস্তি দিতে দেখা গেছে সেনা সদস্যদের। শ্রমিকদের অভিযোগ, সেনা সদস্যদেরকে দেখে হাসি দেওয়ায় এই সাজা দেওয় হয় তাদের।
বিষয়টি দেখে সঙ্গে সঙ্গে নারী শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেয়।
গত মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকার ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া গ্রামের আকিজ ফুড আ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেড কারখানার সামনে।

সাজা পাওয়া দুই যুবক আকিজ ফুড আ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের ডেইলি বেসিক শ্রমিক। তারা পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে শ্রমিকরা নয় দফা দাবিতে আন্দোলন করছিলেন। ওই সময় ওই দুই যুবকও সেখানে আন্দোলন করছিলেন। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলার সময় একজন সৈনিকের তা নজরে আসে। ওই সৈনিক তাদের দুইজনকে ধরে ফেলেন ও কারখানার সামনে তাদের হাঁটু মুড়ে বসিয়ে রোদের দিকে তাকিয়ে থাকার শাস্তি দেন। ওই সময় পাশেই শোভন নামে এক সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শাস্তির এক পর্যায়ে সেখানে অন্য শ্রমিকরাও জড়ো হন। এরপর সেখানে থাকা নারী শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানিয়ে ওই দুই যুবককে সেখান থেকে মুক্ত করে নেন। ওই সময় ওই সৈনিক তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। এছাড়া ক্যাপ্টেন শোভন তাকে মামলায় অভিযান চালিয়ে আটক করার হুমকি দেন ও বলেন, ’তুলে নিয়ে এমন জায়গায় রাখব, জীবনে আর আলো দেখতে পারবে না।’

ভুক্তভোগী এক শ্রমিক বলেন, ‘আমি কিছুই করি নাই। দুইজন কথা বলে হাসতেছিলাম। তখনই তারা ধরে মাঝখানে নিয়ে এই শাস্তি দেয়। জোর করে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রোদের দিকে তাকাতে বলে। তারপর মহিলারা ছুটায়া আনে।’
এদিকে একই দিন আরও অন্তত দুই শ্রমিককে সেনা সদস্যরা মারধর করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শ্রমিকরা কারখানার কাউকে বাইরে থেকে ভেতরে প্রবেশ ও ভেতর থেকে বাহির হতে বাধা দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে এক যুবক কারখানা গেটে তালা দিতে যান।
ওই সময় সেনাসদস্যরা তাদের ধাওয়া দেয়। প্রথম ধাওয়া দিয়ে এক শ্রমিককে আটকের পর তাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। তবে দেখা যায় সে তালা দেয়নি। পরে আরও একজনকে আটক করে আনে সেখানে থাকা এক পুলিশ সদস্য।
ওই যুবক কারখানার ডেইলি বেসিক শ্রমিক। তাকে সেনাবাহিনীর এক সদস্য বুটজুতো দিয়ে পায়ে পারা দেয়। এরপর তাকে ছেড়ে দেয়। এ সময় তাকে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখা যায়।
ওই দুই যুবকও পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা।
তবে এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
গত ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে আওয়ামী লীগ সরকার কারফিউ জারি করলে সারা দেশে সেনা মোতায়েন হয়। ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পেছনে আন্দোলনকারীদের প্রতি সেনা সদস্যদের সমর্থনের বিষয়টি সামনে এসেছে।
এখনও সেনাবাহিনী মোতায়েন আছে সারা দেশে। সরকার পতনের পর থানায় থানায় ভয়াবহ আক্রমণ, পুলিশ সদস্যদের হত্যা, অস্ত্র লুট, গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ায় ভেঙে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এই অবস্থায় সেনাবাহিনীই মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে।
এর মধ্যে গাজীপুর, সাভারের আশুলিয়া আর ধামরাই এলাকায় পোশাক থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারখানায় যে শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, সেখানেও মোতায়েন থাকছে সেনা সদস্যরা।
এরই মধ্যে শ্রমিক বিক্ষোভে পুলিশে একজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সেখানেও মোতায়েন ছিলেন সেনা সদস্যরা।