চট্টগ্রাম শহরে দুর্গাপূজার একটি মণ্ডপে ধমীয় সঙ্গীত গাওয়া নিয়ে দেশজুড়ে চলছে তুমুল সমালোচনা। বিষয়টি হিন্দু ও মুসলমান কেউই মানতে পারছেন না। এরই মধ্যে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। হয়েছে মামলাও। বিষয়টি নিয়ে কড়া বক্তব্য এসেছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র ইউং ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফেসবুকে একটি ভিডিওর কিছু অংশ ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায় একটি পূজামণ্ডপে ছয়জন যুবক ‘ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য’ প্রকাশ করে – এমন একটি গান গাইছেন। মোবাইলে ধারণ করা প্রায় এক মিনিটের ভিডিওটিতে দেখা যায়, কোনো বাদ্যযন্ত্র ছাড়া মাইক হাতে নিয়ে ঐ ছয় যুবক পূজার স্টেজে গান গাইছেন। ভিডিওতে গানের যে কয়েকটি লাইন শুনতে পাওয়া যাচ্ছিল সেগুলো ছিল- এসো সেই ইসলাম বুঝি, সত্য ন্যায়ের পথ খুঁজি, বিশ্ব মানুষের মুক্তির শেষ পথ, বিপ্লব ইসলামী বিপ্লব।
পূজামণ্ডপটি চট্টগ্রাম শহরের রহমতগঞ্জ এলাকার জেএম সেন হলের মাঠে। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি এই পূজার আয়োজন করে বলে এটিকেই চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ হওয়ার পরপরই তা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। এ ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
অনেকে দাবি করছেন, পূজামণ্ডবে ইসলামী গান গাওয়ার পেছনে ইসলামী ছাত্রশিবির জড়িত। তবে বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন- দায়িত্ব নিয়ে বলছি, এর সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। শিবির কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে, এমন কাজকে কখনোই সমর্থন করে না। নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে প্রকৃত সত্য সবার সামনে উঠে আসুক। কেউ দোষী হলে তাকে অবশ্যই আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তি দেওয়া হোক।
প্রতিক্রিয়া এসেছে বিএনপির তরফ থেকেও। শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটি বলেছে- চট্টগ্রামে শারদীয় দুর্গাপূজা মণ্ডপে ইসলামি সংগীত পরিবেশন নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। পূজামণ্ডপে গিয়ে এ ধরনের আচরণ অনাকাঙ্ক্ষিত এবং নিন্দনীয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা মনে করি, আমাদের প্রত্যেকের একে অপরের ব্যক্তিগত ও ধর্মীয় আচরণ এবং যার যার স্বতন্ত্র আচার উৎসবের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই জোরজবরদস্তি কিংবা চাপিয়ে দেওয়ার মতো কিছু যেন করা না হয়।
নেতৃবৃন্দ বলেন, জেএম সেন হলে যা ঘটেছে, তার জন্য কার দায় কতটুকু, এর পেছনে কোনও বিশেষ গোষ্ঠীর অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল কিনা, সেটি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তবে এটুকু নিঃসন্দেহে বলা যায়, যারা মঞ্চে উঠে গান করেছেন, তারা সুবিবেচনার পরিচয় দেননি। এটি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের নামান্তর। কিন্তু হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজার্থী ভক্তরা সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সংযম প্রদর্শন করেছেন, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই।
পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের দল বিএনপি, আমরা সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের নীতিতে বিশ্বাস করি। আমরা মনে করি, ধর্ম যার যার কিন্তু আমরা সবাই বাংলাদেশি। ভবিষ্যতে আমাদের মধ্যকার সম্প্রীতি বিনষ্ট হয়, দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়, এমন যেকোনও কর্মকাণ্ড রুখে দেওয়ার জন্য আমরা প্রশাসন ও জনসাধারণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।

previous post