এ. এন. রাশেদা, সাবেক অধ্যাপক, নটর ডেম কলেজ এবং সম্পাদক শিক্ষাবার্তা
বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে অকালে অকাতরে যাঁরা জীবনের মায়া সাঙ্গ করে চলে গেলেন, যাঁরা নানাভাবে পঙ্গু হলেন- তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বৈষম্যহীন শিক্ষাব্যবস্থার লক্ষ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ের সামান্য কিছু প্রাথমিক প্রস্তাবনা।
প্রথমত শিক্ষাখাতে জাতীয় বাজেটের ৩০% বরাদ্দ দিতে হবে। আর অতি দ্রুত সময়ে ইউনেস্কোর সুপারিশ মতে জাতীয় আয়ের ৪% থেকে ৬%-এ উন্নীত করতে হবে। সবাইকে শিক্ষার আওতায় আনতে হবে। পথশিশু বলে যেন কেউ না থাকে- সেই লক্ষ্যে এগোতে হবে।
১. যেহেতু গ্রামাঞ্চলের প্রায় সকল শিক্ষার্থী সুবিধাবঞ্চিত নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান এবং ঝরে পড়ার হার সেখানে খুব বেশি- তাই এই হার কমাতে ১ম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তাদের উপবৃত্তি (ঝঃরঢ়বহফ) দিতে হবে। পিতামাতার দুইয়ের অধিক সন্তান এ-সুযোগ পাবেনা। দু-জন পাবে। পিতা মাদকাসক্ত বা জুয়াড়– হলে পাবেনা। ঠিকানা বিহীন বা পিতৃ-মাতৃহীন শিশু-কিশোরদের জন্য সব উপজেলায় স্কুল সংলগ্ন আবাসন গড়ে তুলতে হবে খাওয়া-দাওয়ার সুবন্দোবস্তসহ। শিশু যখন বেড়ে ওঠবে, সুযোগ সুবিধা পাবে তখন সে অবহেলিত থাকবে না। এতিম বলে যাদের দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল, আত্মীয় স্বজনরা তার অভিভাবকত্ব নেয়ার জন্য এগিয়ে আসবে। রাস্তা-ঘাটে, স্টেশনে যে-সব শিশু পড়ে থাকে- তখন তাদের ঠিকানা জুটে যাবে। কারণ তাদের হাতে শুধু বই খাতা থাকবে না, থাকবে সকল নিশ্চয়তা, যারা বাসা থেকে আসবে তাদেরও থাকবে স্কুলে দুপুরে পেট ভরে খাবার নিশ্চয়তা। আর ২০১৫ সাল থেকে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য যে-সব বিদ্যালয় শুভানুধ্যায়ীদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল এবং যেসব বিদ্যালয় সরকারের প্রতিশ্রুতিতে স্বীকৃতি ও এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করেছিল- সেইসব প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতিবন্ধী শিশুদের পাশে দাঁড়াতে হবে।
২. একটি শিশুও যেন শিক্ষাধারার বাইরে না-থাকে প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলকভাবে। আর এর জন্য পঞ্চম শ্রেণির সব স্কুলে ভবন নির্মাণ করার দরকার নেই। এই মুহূর্তে যে-সব স্কুলে সুবিধা আছে সেখানেই পড়বে; সে-সব স্কুলে প্রয়োজন হবে হয়ত দুই শিফটে ক্লাস পরিচালনার; যেহেতু প্রাইমারি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াবার শিক্ষক এবং ক্লাস রুম নেই। প্রাইমারী স্কুলে অফিস সহকারী নেই। নিয়োগ দেওয়া দরকার।
৩. অষ্টম শ্রেণি শেষে সম্মিলিত পরীক্ষা হবে শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবং এর ফলাফলের ভিত্তিতেই বৃত্তি দেওয়া যাবে- আলাদা করে ‘বৃত্তি পরীক্ষা’ নেওয়ার দরকার নেই। এসএসসি (ঝঝঈ) মানে ঝবপড়হফধৎু ংপযড়ড়ষ ঈবৎঃরভরপধঃব-তাই এই পরীক্ষা বোর্ডের অধীনে নেয়ার দরকার কী? স্কুলই দেবে সার্টিফিকেট আর ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা হবে শিক্ষাবোর্ডের অধীনে। ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ভর্তি জটিলতা থেকে বেরিয়ে কাছের কলেজে যেন ভর্তি হতে পারে শিক্ষার্থীরা। সব কলেজে প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষক থাকবে এবং দ্রুত তা নিয়োগ দিতে হবে। মনে রাখতে হবে শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে দেশের সকল উন্নয়ন জড়িত।
৪. স্কুল পর্যায়ে নতুন যে কারিকুলাম হঠাৎ করে ২০২৩ থেকে শুরু হয়েছে, তাদের বই লেখার ধরণ হুবহু অন্য দেশের নকল হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য সুখ্যপাঠ্য বলে কোনো কোনো শিক্ষার্থী বলেছে। তাই সেইসব বই পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কি নেই-তা নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন। তবে নবম ও দশম শ্রেণিতে যে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও কলা শাখা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে যা চলছিল ১৯৬৩ সাল থেকে- অথচ যারা ছোট বেলা থেকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে আগ্রহী ছিল- তারা মর্মাহত হয়েছে; তাই পুনরায় তা চালু করতে হবে। আর এটি উঠিয়ে দেওয়ার কারণ বলে আমার মনে হয়, তা হলো বিজ্ঞানের শিক্ষক, গণিতের শিক্ষক এমনকি প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইংরেজি শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া হয়নি প্রায় ৪০/৪৫ বছর ধরে এবং এভাবে এই ধারাকে ক্ষীণ করে ফেলা হয়েছে। ফলস্বরূপ শিক্ষা কার্যক্রম ধসে পড়েছে। সেখান থেকে পরিত্রাণের জন্যই বিজ্ঞান শাখা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে যা মাথা ব্যাথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মত অবস্থা। অথচ যারা ঙ-খবাবষ দিবে তারা বিজ্ঞানের বিষয়সমূহ ইচ্ছেমত নিতে পারবে। তাই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডাবল বৈষম্য সৃষ্টি হবে।
৫. আর একদিকে স্কুলে শিক্ষক পেতে হলে যে, প্রয়োজন শিক্ষকের সম্মানজনক বেতন-ভাতাদি- এই সত্যকে কোনো সরকারই মেনে নেয়নি। তাই এখন স্কুল-কলেজ সর্বত্র শিক্ষক স্বল্পতা। এখন ঘোষিত হয়েছে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য- যার জন্য জীবন দিল নাম জানা-অজানা এবং আহত হলো কয়েক হাজার। তাই পৃথিবী যেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তখন শিক্ষাকে সেভাবে এগিয়ে নিতে হবে।
৬. স্কুলে এবং কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকদের ল্যাব এ্যালাউন্স বেতনের ৩ বা ৪ ভাগের এক ভাগ দিতে হবে। এতে বিজ্ঞান শিক্ষায় একদিকে যেমন শিক্ষার্থীরা আকৃষ্ট হবে তেমনি পরবর্তীতে তারা শিক্ষকতায় আসবে। সরকারি-বেসরকারি সকল স্কুল ও কলেজে পদোন্নতির জটিলতা কাটিয়ে ওঠার ব্যবস্থা করতে হবে। অর্থাৎ চাকরিতে পদোন্নতি থাকতে হবে।
৭. প্রত্যেক স্কুলে যথার্থ অর্থে বিজ্ঞানের ল্যাবরেটরি থাকতে হবে। থাকতে হবে ডেমনস্ট্রেটর, লাইব্রেরি এবং লাইব্রেরিয়ান- থাকবে পাঠ ও বই নেয়ার সুযোগ।
৮. আর প্রাথমিক স্কুলে গ্রামীণ পরিবেশে দুপুরের খাবার পরিবেশনের দায়িত্ব আশে পাশের বাড়িতে যারা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল তাদের দেয়া দরকার। এর ফলে তারাও অর্থনৈতিকভাবে কিছুটা সাবলম্বী হবে এবং শিক্ষার্থীরাও গরম খাবার খেতে পারবে। সব ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের পুষ্টির দিকে নজর রাখতে হবে। মেধাবিকাশে পুষ্টিকর খাদ্যের বিকল্প নেই। শহরাঞ্চলে সব স্কুলে দুপুরে পেট পুরে খাবার দেবার হয়ত প্রয়োজন পড়বেনা।
৯. শহরাঞ্চলে এলাকার শিক্ষার্থীরা এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করবে। মিরপুরের শিক্ষার্থীদের কষ্ট করে ভিকারুন্নিসায় আসতে হবে না- যদি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ্য ও প্রয়োজনীয় শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার যথার্থ পরিবেশ তৈরি করা যায়। এতে গাড়ির জ্যাম কমবে, জ্বালানি সাশ্রয় হবে, পরিবেশ নির্মল থাকবে, শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে স্কুলে আসা-যাওয়া করবে যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকার হবে- অর্থাৎ শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের সাথে দেশের সকল উন্নয়ন জড়িত। গ্রামাঞ্চলেও একই পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাবে। জাপানে গাড়ি নিয়ে কেউ স্কুলে যেতে পারে না। অথচ ১০০টি স্কুল বাস কিনে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় করা হয়েছিল একবার ২০১৫ সালে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রীর হঠাৎ নির্দেশে যা এখনও পড়ে আছে।
১০. আর হাওড়-বাওড়, আদিবাসী ও উপক‚লীয় অঞ্চলের জন্য পৃথকভাবে ভাবতে হবে এবং সুবিধা সৃষ্টি করতে হবে-এ-খাতে পৃথকভাবে নজর দিতে হবে- যেহেতু তারা অধিকহারে সুবিধাবঞ্চিত।
১১. যারা বিএসসি বা বিএ পড়ে এবং বিএড বা এম এড ডিগ্রি নিয়ে স্কুল-শিক্ষকতা পেশায় আসেন তাদের শিক্ষাকালীন শিক্ষা-প্রণোদনা দিতে হবে। ইন্টারমিডিয়েটে তাদের জিপিএ-৪ থাকতে হবে এবং গ্রাজুয়েশন কোর্সেও এডুকেশন-এর ওপর ১টি অতিরিক্ত পেপার (বিশেষ করে শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষা-দর্শন ও শিক্ষানীতি) পড়তে হবে। আর এ-পেশার মানোন্নয়নে পৃথক বেতন স্কেল থাকতে হবে। শিক্ষককে তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া- জাতির জন্য কলঙ্ক। ভুটান, নেপাল ও ভারতসহ পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশে শিক্ষকরা উন্নতমানের বেতন ভাতাদি পান- সে কথাটি সরকারকে মনে রাখতে হবে।
প্রমাণ হিসেবে সার্কভুক্ত ৮টি দেশের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর দিকে নজর দেয়া যেতে পারে। যেখানে কিছুদিন আগেও :
১। শ্রীলংকা- ৭৫,০০০.০০ টাকা
২। ভারত- ৬৫,০০০.০০ টাকা
৩। মালদ্বীপ- ৫৮,০০০.০০ টাকা
৪। পাকিস্তান- ৫২,০০০.০০ টাকা
৫। ভুটান- ৪৮,০০০.০০ টাকা
৬। আফগানিস্তান- ৪৭,০০০.০০ টাকা
৭। নেপাল- ৩৮,০০০.০০ টাকা
৮। বাংলাদেশ- ১৬,০০০.০০ টাকা
১২. যারা অনার্সে ভর্তি হবে তাদের মেধাবৃত্তি দিতে হবে। স্বল্প আয়ের পিতামাতার সন্তানরা মেধাবৃত্তি না পেলে উপবৃত্তি (ঝঃরঢ়বহফ) দিতে হবে। ষাটের দশকে মেধাবৃত্তি ছিল ৭০ টাকা। ১০০ টাকায় বুয়েট, মেডিকেলসহ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে চলতে পারত সকালে ডিম পরাটা নাস্তা খেয়ে।
১৩. যারা দ্বাদশ-এর গ্রেড ৩.৫ বা তার বেশি পেয়ে ভোকেশনালের বিভিন্ন শাখায় যেমন প্রোকৌশল, মেডিকেল, টেকনিক্যাল, কৃষি বা যে-কোনো দিকে যাবে- তাদেরও উপবৃত্তি বা প্রণোদনা ভাতা দিতে হবে।
১৪. মাস্টার্স-এর পর যারা গবেষণা করতে চাইবে তাদের প্রভাষকের মর্যাদা দিতে হবে এবং কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাজ করতে পারবে। তবে তার স্থায়িত্ব নির্ভর করবে কাজের অগ্রগতির ওপর। এই গবেষণাগুলো দেশের প্রয়োজনে বিভিন্ন শিল্পের চাহিদামাফিক ঐ সব শিল্প প্রতিষ্ঠানের স্কলারশিপের মাধ্যমে হতে পারে।
১৫. সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যান্টিন, পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। আর নোংরা পরিবেশ থেকে উত্তরণের জন্য বরাদ্দ থাকতে হবে। এখানে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করতে হবে এবং কেউ এলে তাকে স্কুলে পাঠাতে হবে।
সরকারি-বেসরকারি সকল স্কুল ও কলেজে পদোন্নতির জটিলতা কাটিয়ে ওঠার সকল ব্যবস্থা রাখতে হবে। চাকরি জীবন পেরিয়ে গেলেও পদোন্নতির দেখা মেলেনা-এ অভিশাপ থেকে শিক্ষক সমাজকে মুক্তি দিতে হবে। বঞ্চনাময় ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটাতে হবে। স্কুল পর্যায়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে বেশির ভাগ শিক্ষককে সহকারি শিক্ষক হিসেবেই চাকরি জীবন শেষ করতে হয়-পদোন্নতি না থাকা কোনো পেশার জন্যই মঙ্গলজনক নয়। তাই এখানেও কিছু পদবী থাকা দরকার। হতে পারে তা-সহকারী শিক্ষক, সহযোগী শিক্ষক, শিক্ষক এবং প্রধান শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক, অধ্যাপক তেমনি।
১৬. কলেজ বা বিশ্ববদ্যালয় পর্যায়ে যারা শিক্ষকতা-পেশায় আসতে চান- শুধু তারাই মাস্টার্স করার অগ্রাধিকার পাবেন এবং যাদের ফলাফল সবসময়ের জন্যই সর্বোচ্চ। যারা অন্য কোনো পেশায় যেতে আগ্রহী তাদের ৩ বছরের পাসকোর্স বা ৪ বছরের অনার্স কোর্সই শিক্ষা জীবনের শেষ ধাপ বলে বিবেচিত হবে। মাস্টার্সের প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববদ্যালয়ে ৪ বছরের কোর্স- সেখানে ৭৫% মার্কস পেলে অনার্স দেওয়া হয়, বাকীরা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার। ভালো মার্কস পেলে মাস্টার্স করা যায়, যারা শিক্ষকতায় আসেন- সবার জন্য মাস্টার্স ডিগ্রি নয়। তবে ভিন্ন ভিন্ন পেশায় দক্ষতার জন্য বিভিন্ন ডিগ্রির ব্যবস্থা থাকতে পারে।
১৭. আর বিষ ফোঁড়ার মতো যে-শিক্ষক সংকট রয়েছে মাউশির তথ্যানুযায়ী সারাদেশে সরকারি কলেজে কিছুদিন আগের তথ্য অনুযায়ী শূন্য প্রায় ৩ হাজার ৬ শতাধিক পদ এবং প্রয়োজন কমপক্ষে ১২ হাজার শিক্ষক- কয়েক দফা করে হলেও পদগুলো পূরণ করতে হবে। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও সরকারি স্কুলেও প্রয়োজনীয় ও যোগ্য শিক্ষক যত দ্রুত সম্ভব নিয়োগ দিতে হবে। এমপিওভুক্তিতে শিক্ষক নিয়োগ না। প্রকৃত বেতন কাঠামো দিয়ে দিতে হবে। কাছের এলাকায় নিয়োগ দিতে হবে। বর্তমানে প্রয়োজনে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে বদলি সমস্যার সমাধান হতে পারে। ভবিষ্যতে যাতে এ সমস্যা আর না হয়। শিক্ষকদের নিয়োগ যতসম্ভব কাছের এলাকায় দিতে হবে তাহলে বদলী সমস্যার সমাধান হবে। অবসরে কোনো ভিক্ষা নয়, চালু করতে হবে সম্মানজনক পেনশন প্রথা। নিয়োগ দিতে হবে সঙ্গীত, অংকন, ললিত কলার শিক্ষক প্রতি স্কুলে। সমাজে সুস্থ্য সাংস্কৃতিক আবহ সৃষ্টি ছাড়া সমাজ অগ্রগতির পথে যেতে পারে না। শিক্ষার সার্বিক ব্যয়ভার রাষ্ট্র বহন করলে সমাজ অতি দ্রুত তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।
১৮. সবশেষে বলতে চাই- সবাইকে শিক্ষার আওতায় আনতে হলে পাঠ্যবই ১০০ কোটি বা তারও বেশি প্রয়োজন হবে। বিদেশ থেকে বা শুধু ঢাকা থেকে ছাপানো নয়- আধুনিক টেকনোলজিতে সব জেলা শহরে বই ছাপানোর দায়িত্ব দিয়ে প্রায় সব অঞ্চলকে কর্মক্ষম রাখতে হবে; এর মধ্য দিয়ে দেশের সর্বত্র প্রকাশনা সংস্থার বিকাশসহ বহু কর্মসংস্থানও ঘটবে এবং প্রতিবছর তা বাড়বে। এ-তো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র না যে ফাঁস হলে সমস্যা হয়ে যাবে। তাই দুই একজনকে বিলিয়নিয়ার বানানোর চিন্তা করার দরকার নেই। কাজ জেলা ওয়ারী ভাগ করে এবং যোগ্য ব্যক্তিকে সিস্টেম অনুযায়ী দিতে হবে। শিক্ষায় জাতীয় বাজেটে ২৫% বা ৩০% বিনিয়োগে প্রথম বছরেই আশ্চর্যজনক ফল পাওয়া যাবে- জনগণের সম্পদ জনগণের সমৃদ্ধির জন্যই বিনিয়োগ হবে। শিক্ষামন্ত্রণালয়কে ‘মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়’ বলে অভিহিত করতে হবে।
শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষামন্ত্রণালয়, ইউএনও অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সকল পর্যায়ের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের যে-সব মন্ত্রী, আমলা, কর্মকর্তা নানাভাবে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত ছিল- তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।