দেশে সংঘটিত গণহত্যার বিচার শুরু করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ট্রাইব্যুনালে সদস্য হিসেবে আছেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, পর্যাপ্ত বিচারপতির অভাবের কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ দিতে দেরি হয়েছে। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে হাইকোর্টের দুজন বিচারপতি এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজকে নিয়ে মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যা করার ছিল, তা সম্পন্ন করা হয়েছে।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, পর্যাপ্ত বিচারপতির অভাবের কারণে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারক নিয়োগ দিতে দেরি হয়েছে। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে হাইকোর্টের দুজন বিচারপতি এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজকে নিয়ে মানবতাবিরোধী ট্রাইব্যুনাল গঠনের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে যা করার ছিল, তা সম্পন্ন করা হয়েছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
আসিফ নজরুল বলেন, ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানকালে নির্মম গণহত্যা ঘটেছে, এক হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার ছাত্র-জনতাকে আহত করা হয়েছে। এই অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দু-এক দিনের মধ্যে সক্রিয় হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করেন।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান গোলাম মর্তূজা মজুমদার ও সদস্য শফিউল আলম মাহমুদ হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারক হিসেবে ৮ অক্টোবর নিয়োগ পেয়েছেন।
আইন সংশোধন হচ্ছে, তবে বিচার আটকে থাকবে না
অধ্যাপক আসিফ নজরুল জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন এ মাসেই চূড়ান্ত হতে পারে। তবে তিনি উল্লেখ করেন যে, এই সংশোধনীর জন্য বিচার প্রক্রিয়া আটকে থাকবে না।
১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন করা হয়। ১৯৭৩ সালে প্রণীত এ আইনে এখন পর্যন্ত কয়েকবার সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ সালে প্রথমবারের মতো এ আইনে সংশোধনী এনে আইনটি মূলত হালনাগাদ করা হয়।
এরপর ২০১২ সালে দ্বিতীয় সংশোধনী আনা হয়, যার মাধ্যমে আসামির অনুপস্থিতিতে তাকে পলাতক ঘোষণা করে বিচার এবং এক ট্রাইব্যুনাল থেকে অন্য ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তরের বিধান যুক্ত করা হয়।
সর্বশেষ ২০১৩ সালে সংশোধনী আনা হয়, যার ফলে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিলের সমান সুযোগের বিধান যুক্ত হয়।
মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে অন্তত ৫৫টি মামলার রায় এসেছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর শীর্ষ পর্যায়ের ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া আসামিদের মধ্যে পাঁচজন জামায়াতে ইসলামীর এবং একজন বিএনপির তৎকালীন শীর্ষস্থানীয় নেতা রয়েছেন।
শেখ হাসিনা দোষী সাব্যস্ত হলে ফেরত চাওয়া হবে
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় যাঁরা দায়ী ছিলেন বলে আমাদের বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ আছে, যাঁরা প্রকাশ্যে গুলি করার হুমকি দিয়েছেন ছাত্র-জনতাকে প্রতিরোধ করার, এমনকি গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন, তাঁদের অনেকেই গ্রেপ্তার হননি, আত্মগোপনে আছেন, পালিয়ে গেছেন। যাঁরা গ্রেপ্তার আছেন, তাঁদের বিচারে সমস্যার কথা না। আর যাঁরা পালিয়ে গেছেন, পলাতকদের বিচার করার বিধান এই আইনে রয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে, কেউ যদি সেই দেশে থাকেন, তাহলে চুক্তি অনুযায়ী ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। যাদের সঙ্গে চুক্তি নেই, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা অনুযায়ী ফিরিয়ে আনতে যতটুকু চেষ্টা করার তা করব।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, সাধারণত যখন কেউ দোষী সাব্যস্ত হন, তখন প্রত্যর্পণের বিষয়টি সামনে আসে।
তিনি উল্লেখ করেন, যদি শেখ হাসিনা ভারতে থাকেন এবং সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকে, তাহলে তাঁকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া সহজ হবে। তবে, তিনি এও জানান যে, যদি শেখ হাসিনা দোষী সাব্যস্ত হন, তাহলে প্রত্যর্পণের জন্য চাওয়া হবে।

previous post