আলি শরিয়তি
৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন সাংবাদিক সম্মেলনে দাবি করেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিতর্কিত-দলবাজ বিচারপতিদের দ্রুত পদত্যাগ করতে হবে।‘ ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতিসহ ৬জন বিচারপতি পদত্যাগ করেন। পরে ৪ সেপ্টেম্বর মাহবুব উদ্দিন খোকন কথা ঘুরিয়ে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময়ের সবাই খারাপ না, ভালো বিচারপতিও আছেন।‘ এই কথা ঘুরানোর পিছনের রহস্য কি?
মজার তথ্য, এটর্নি জেনারেল ৭ আগস্টেই পদত্যাগ করেন। ক্রমান্বয়ে অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল, ডেপুটি ও সহকারীদের প্রায় সবাই পদত্যাগ করলেও কয়েকজন চুপ থাকেন। তারা পদত্যাগ না করে তাঁদের অতীতে ছাত্রশিবির করার দলিল হাজির করে বলেন, আমরা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী। টাকা দিয়ে আগে নিয়োগ পেয়েছিলাম। কেউ কেউ জামায়াতে ইসলামীর প্রত্যায়ন পত্রও সংগ্রহ করে জমা দিয়ে প্রমাণ করেন তারা সত্যিই জামায়াতের লোক। এ-এক আজব ঘটনার চিত্র পাওয়া গেলো! আওয়ামী লীগ কি এখান থেকে শিক্ষা নেবে?
সরকার বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামানকে এটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেন। ভালো আইনজীবী হিসেবে পরিচিত আসাদুজ্জামান ২১ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি ও আইন উপদেষ্টার উপস্থিতিতে এক সভায় বলেন, ‘৫ আগস্টের পর কেউ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়নি।‘ এতে আসাদুজ্জামানের ভালো আইনজীবী ও নৈতিকতার স্বরুপ বেরিয়ে আসে। তাঁর এই মন্তব্যে সারাদেশে হাস্যরোলের উৎসব বয়ে যায়। এই আসাদুজ্জামান সাহেব ৫ আগস্টের পরপরই আইন ও সালিশ কেন্দ্র(আসক) দখল করেছিল, তখনও ইউনূস সাহেব শপথ নেননি। এই হলো এটর্নি জেনারেলের আরেক রুপ!
এসবের মধ্যেই সরকার প্রায় দুই শতাধিক ডেপুটি ও সহকারী এটর্নি জেনারেল নিয়োগ দেয়। নিয়োগ নিয়ে ঘটে অবিশ্বাস্য ঘটনা, প্রকাশ্য লেনদেন। তাও মাহবুব উদ্দিন খোকন, গাজী কামরুল ইসলাম সজল, রুহুল কুদ্দুস কাজল, কায়সার কামাল প্রমুখের নেতৃত্বাধীন বিএনপির কয়েকটি গ্রুপকে আলাদা আলাদা ম্যানেজ করতে হয়। এতেও কেউ কেউ বাদ পরেন। এবার বিচারপতি হয়ে তাঁদের কপাল খোলেছে বলে মনে হয়। যাহোক, এদিকে প্রথম যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, সেদিন রাতেই তা স্থগিত করা হয়। কারণ প্রধান উপদেষ্টা দাবি করে বসেন, আপনারা সবাই ভাগ নিলেন, আমার ভাগ কই? অর্থাৎ, ছাত্র সমন্বয়কদের পছন্দের লোকদের নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেন। পরে সংশোধিত তালিকা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়। এবার ডেপুটি এটর্নি জেনারেল থেকে বিচারপতি হলেন ৭জন। ডেপুটি এটর্নি জেনারেলের শূন্য পদে নিয়োগ পেতে হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে তদবিরকারী ও ঘুষখোরদের স্ফূর্তি শুরু হয়েছে। কী আনন্দ আকাশে বাতাসে!
এদিকে মাহবুব উদ্দিন খোকন কর্মরত বিচারপতিদের পক্ষাবলম্বন করেন বিভিন্ন সমঝোতার ভিত্তিতে। তাঁর সঙ্গে যোগ দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতা ও এককালের অভি গ্রুপের দুর্ধর্ষ ক্যাডার অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল। পল্টন ও লন্ডনেও এর ভাগভাটোয়ারা পৌঁছেছে কিনা তা তদন্তের বিষয়।
এই গোপন খবর ফাঁস হয়ে যাওয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেন বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। যিনি ইতিপূর্বে পরকীয়া সংশ্লিষ্টতায় বিতর্কিত। তাঁর সম্পর্কে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছিলেন, ‘একজন আইনজীবীর স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া করে ধরা খাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নেওয়ার সময় ভবিষ্যতে এমন অপরাধ আর কখনও করবেন না, বলে আন্ডারটেকেন দিয়েছিলেন কায়সার কামাল। পরে সেই নারীকে কাবিন ছাড়াই বিয়ে করেছেন তিনি।‘ সুত্রঃ বাংলা ট্রিবিউন, ২২ এপ্রিল ২০২৪। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ব্যারিস্টার আতিকুর রহমানের স্ত্রীর সঙ্গে ব্যারিস্টার কায়সার কামালের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ে ওঠায় ব্যারিস্টার আতিক বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। এই কারণেই খোকনের উপরের মন্তব্য। যাহোক, কায়সার কামাল সাহেব খোকন-সজলের কাছ থেকে ভাগ না পেয়ে নিজেই দোকান খুলে বসেন। বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিবেন বলে তালিকা ও লেনদেন শুরু করেন।
কতজনকে নিয়োগ দিতে পারলেন কায়সার কামাল? খোকন, সজল, কাজলের ভাগে কতজন? জামায়াতে ইসলামী ও আসিফ নজরুলের কোটায় কয়জন? আর ছাত্র সমন্বয়ক, চট্টগ্রাম ইত্যাদি কোটায় কতজন? এসব জানতে পরবর্তী লেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
#আলিশরিয়তি