তসলিমা নাসরিন, লেখক
যারা খুব প্রেম করে, তাদের আমার ভাল লোক বলে মনে হয় বলে আসিফ নজরুল লোকটিকে আমি ভাবতাম ভাল। কিন্তু তাঁর কার্যকলাপ অনেকদিন থেকেই খুব বিদঘুটে ঠেকছে। বেশ ঢাক ঢোল পিটিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে একখানা লোক-দেখানো হজ্ব করে এলেন। স্ত্রীকে হিজাব পরিয়েছেন।
প্রতিভাময়ী স্ত্রীকে ঘরবন্দি করেছেন। জুলাই আগস্টের তথাকথিত স্বাধীনতা আন্দোলনের নীল নকশায়, তিনিও, যতদূর মনে হয়, অংশ নিয়েছেন। অংশ না নিলেও আন্দোলনের ফলে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে, তার সমস্ত সুফল এবং সুবিধে ১০০ ভাগ ভোগ করছেন।
আন্দোলনটি জামাতি-জিহাদি আর হেফাজতি-হিযবুতিদের আন্দোলন জেনেও এককালের শেখ মুজিব-ভক্ত এবং ঘাতক দালাল রাজাকার- বিরোধী আসিফ নজরুল একে সমর্থন নয় শুধু, শেখ মুজিবর রহমানের নাম চিরকালের জন্য নিশ্চিহ্ন করে, একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস সম্পূর্ণ মুছে ফেলে, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের ওপর কালি ঢেলে, ২ লক্ষ ধর্ষিতা নারীর মুখে থুতু ছিটিয়ে স্বাধীনতার শত্রুদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন শুধুই ব্যক্তিগত লোভ এবং লাভের জন্য, হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য। ছিঃ!
শিবির আর হিযবুতি জঙ্গি-জিহাদিরা দেশকে গণধর্ষণ করছে, আর তিনি পাহারা দিচ্ছেন তাদের। তাদের যেন কোনও ক্ষতি না হয়, তারা যেন ধরা না পড়ে, আইন যেন তাদের পক্ষে থাকে। তারা যেন ধর্ষক নয়, খুনী নয়, মহান হিসেবে চিহ্নিত হয়। ছিঃ!
হাজার হাজার পুলিশকে যে সন্ত্রাসীরা জবাই করে ফেলে রেখেছে, তাদের বিচার হবে না। নৃশংসতা আর বর্বরতার আরেক নাম এখন ‘’ দ্বিতীয় স্বাধীনতা’’। বটে। দেশ জুড়ে ১৫ জুলাই থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত যে ছাত্রদের খুন করা হয়েছে, সেও পরিকল্পিত হত্যা। এই হত্যাকাণ্ড, অনেকেরই ধারণা, যত না পুলিশ করেছে, তার চেয়ে বেশি করেছে শিবির আর হিযবুতি জঙ্গি জিহাদি। যত্র তত্র আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী আর সমর্থকদের খুন করা হয়েছে, সেও হিযবুতিদের ডিজাইন অনুযায়ী। এই হত্যাযজ্ঞকে বৈধতা দিচ্ছেন আলহাজ্ব আসিফ নজরুল। ছিঃ!
তিনি নাকি আইন পড়েছেন। আইন বিশেষজ্ঞ তিনি। নতুন করে আইন তৈরি করছেন সন্ত্রাসীদের রক্ষা করার জন্য। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর দেশের যে সর্বনাশ হলো স্বাধীনতার শত্রু রাজাকার আর ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের দ্বারা, এই সর্বনাশ যারা করেছে, সেই কুলাঙ্গারদের তালিকায় নাম লেখা থাকবে আসিফ নজরুলের। ছিঃ!
শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের রক্ষা করার জন্য একদা এমন একটি আইন তৈরি হয়েছিল। সেই আইনকে কিন্তু বাতিল করে দিয়ে হত্যাকারীদের বিচার হয়েছে। কুচক্রী আসিফ নজরুলের কুখ্যাত এই আইনও একদিন বাতিল হবে, এবং আশা করছি এমন দিন আসবে যেদিন হাজার হাজার নিরীহ মানুষের হত্যাকারী শিবির আর হিযবুতি সন্ত্রাসীরা রেহাই পাবে না।