দীর্ঘদিন ধরে তীব্র টানাপোড়েন চলছে প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে। সেই উত্তেজনার মধ্যে এবার কিছুটা হলেও স্বস্তির বার্তা পাওয়া গেল। সবাইকে অবাক করে দিয়ে পাকিস্তান সফরে গেলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। উপলক্ষ ভারতের সাংহাই কো অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলনে যোগ দেওয়া।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে পৌঁছেন জয়শঙ্কর। নূর খান বিমানঘাঁটিতে পাকিস্তানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা তাকে স্বাগত জানান। এসসিও সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধিদের স্বাগত জানাতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ নৈশভোজের আয়োজন করেছেন।সেখানে এসসিও-র সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে করমর্দন, সৌজন্য বিনিময় করবেন জয়শঙ্কর। তবে জয়শঙ্কর ২৪ ঘণ্টারও কম সময় পাকিস্তানে থাকবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এসসিও সম্মেলন প্রতি বছরই অনুষ্ঠিত হয়। এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে ১৫ ও ১৬ অক্টোবরে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সম্মেলনের বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর ভারতের প্রতিনিধিত্ব করবেন। সম্মেলন উপলক্ষে পুরো ইসলামাবাদ নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে।
এর আগে গতবছর ভারতে এসসিও পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একইরকম একটি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি ছিলেন ২০১১ সালের পর ভারত সফর করা প্রথম কোনও ঊর্ধ্বতন পাকিস্তানি রাজনীতিবিদ। তার সেই সফরের পর এবার জয়শঙ্কর পাকিস্তানে গেলেন।
পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে ঘোর শত্রুতা চলে আসছে। ১৯৪৭ সালে স্বাধীন দেশ হওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে। এর দুটিই ছিল কাশ্মীর নিয়ে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতায় বড় ভূমিকা আছে এসসিওর। মধ্য এশিয়ায় অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে এই ফোরামে আলোচনা হয়। ভারত-পাকিস্তান ছাড়াও এসসিও-র সদস্য দেশগুলো হল চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান এবং উজবেকিস্তান। গত বছর এসসিও সম্মেলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল ভারত। আর এবছর এ সম্মেলন আয়োজন করেছে পাকিস্তান।
২০০১ সালে এসসিও গঠিত হয় নেটোর মতো পশ্চিমা সামরিক জোটের প্রভাবের পাল্টা পদক্ষেপ হিসাবে। ২০০৫ সালে পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে এসসিও-তে যোগ দেয় ভারত। ২০১৭ সালে দেশটি এসসিও’র পূর্ণ সদস্য হয়। একই বছরেই এসসিও-র পূর্ণ সদস্য দেশ হয় পাকিস্তান।
ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক দশকের পর দশক ধরে বৈরিতাপূর্ণ। তবে ২০১৯ সালে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলোয়ামায় ভারতীয় সেনা সদস্যদের বহনকারী একটি গাড়িতে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বা হামলা চালালে অন্তত ৪০ জন সেনা প্রাণ হারায়। এরপর থেকে দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়।
সেই হামলার পর পাকিস্তানের বালাকোটে ঝটিকা অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় বিমানবাহিনী। ওই একই বছরের আগস্টে জম্মু-কাশ্মিরের সাংবিধানিক স্বায়ত্বশাসিত মর্যাদা বাতিল করে ভারত সরকার। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের এ পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানায় পাকিস্তান। কিন্তু ভারত তা আমলে না নেওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়।
