বাংলাদেশের রাজনীতির অঙ্গনে ‘অগ্নিকন্যা’ খ্যাত আওয়ামী লীগের কাণ্ডারী মতিয়া চৌধুরী আর নেই। ঢাকার একটি হাসপাতালে বুধবার (১৬ অক্টোবর) বেলা ১২টার পরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। মতিয়া চৌধুরী দীর্ঘ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃত্যুকালে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্যের বয়স হয়েছিল ৮২ বছর।
মতিয়া চৌধুরী ১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন। ছাত্র রাজনীতি শেষে তিনি ন্যাপে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯৭৯ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। দলটির কৃষি সম্পাদকসহ বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর মৃত্যুর পর একাদশ জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা নির্বাচিত হন মতিয়া চৌধুরী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদেও একই দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ২০০৯ ও ২০১৪ সালের শেখ হাসিনার সরকারে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন মতিয়া চৌধুরী। তার আগে ১৯৯৬ সালের সরকারেও একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাসে নারী হিসেবে প্রথম কোনো সংগঠনের সভাপতির দায়িত্বে আসা মতিয়া গত শতকের ষাটের দশকে ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে খ্যাত ছিলেন। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি তখন ডাকসুর জিএসের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। এক সময়ের বামপন্থী ছাত্রনেতা পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে রাজপথের লড়াইয়ে থাকেন সামনের কাতারে, হয়ে ওঠেন শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।
২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জরুরি অবস্থার সময় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা যখন শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে দলে ‘সংস্কারের’ দাবি তোলেন, তখন যে কজন তাঁর পাশে শক্তভাবে দাঁড়ান তাদের অন্যতম মতিয়া। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সংস্কারপন্থিদের দলের নীতি-নির্ধারণী পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।এরপর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে মতিয়া চৌধুরীর উপর আস্থা রেখেছেন শেখ হাসিনা।
ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর বিদ্রোহের পরপর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা সেনানিবাসে স্বজন ও সহকর্মী হারানো বিক্ষুব্ধ সেনা সদস্যদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তখন তার সঙ্গী ছিলেন রাজপথের সাহসী রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত মতিয়া। মতিয়া চৌধুরী শেরপুর-২ (নালিতাবাড়ী-নকলা) আসন থেকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। তার স্বামী খ্যাতিমান সাংবাদিক বজলুর রহমান ২০০৮ সালে মারা যান।
previous post
