কামালা হ্যারিস সম্প্রতি ফক্স নিউজের উপস্থাপক ব্রেট বেয়ারের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারে অভিবাসন এবং বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের অন্যান্য নীতির বিষয়ে কঠোর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হন। এটি হ্যারিসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ ছিল, কারণ এটি প্রথমবারের মতো তিনি রক্ষণশীল মিডিয়ায় এমন সরাসরি একটি প্ল্যাটফর্মে অংশ নেন।
সাক্ষাৎকারে অভিবাসন নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা হয়, যেখানে বেয়ার প্রশাসনের সীমান্ত নীতি এবং অবৈধ অভিবাসন সমস্যা সমাধানে তাদের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। হ্যারিসকে এসব বিষয়ে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে বাধ্য হতে হয় এবং তিনি প্রশাসনের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন, তবে উপস্থাপক তাকে বেশ কড়া ভাষায় চ্যালেঞ্জ করেন।
সীমান্ত সংকট, আবাসন সংকট এবং মূল্যস্ফীতি—এই তিনটি প্রধান ইস্যুতে ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস ফক্স নিউজের উপস্থাপক ব্রেট বেয়ারের কড়া প্রশ্নবানে পড়েন। বেয়ার বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের সীমান্ত নীতির দুর্বলতা, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের চ্যালেঞ্জ এবং মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন করেন। এই প্রশ্নগুলো বাইডেন প্রশাসনের প্রধান সমালোচনাগুলোর মধ্যে পড়ে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক মন্দা এবং আবাসন সংকট নিয়ে আমেরিকার জনগণের উদ্বেগের প্রেক্ষাপটে।
এক পর্যায়ে ইরান প্রসঙ্গে প্রশ্ন আসলে, হ্যারিস ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করেন।
কামালা হ্যারিস স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, যদি ক্ষমতায় আসেন, তবে জো বাইডেনের প্রেসিডেন্সির ধারাবাহিকতা সরাসরি অনুসরণ করবেন না। হ্যারিস বলেন, ক্ষমতায় গেলে তিনি প্রশাসনকে নিজের মতো করে ঢেলে সাজাবেন।
পেনসিলভেনিয়ার ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেটের একটি নির্বাচনি সমাবেশে ভাইস প্রেসিডেন্ট কামালা হ্যারিস বেশ উৎফুল্ল মেজাজে অংশ নেন, যেখানে তিনি “কান্ট্রি ওভার পার্টি” শীর্ষক প্রচারণা চালান। এই সমাবেশে শতাধিক সাবেক রিপাবলিকান কর্মকর্তার সমর্থন পাওয়া হ্যারিসের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক মাইলফলক হিসেবে দেখা হয়। তারা সবাই যুক্ত হয়ে, হ্যারিসের পক্ষে ভোট চেয়েছেন, বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেশের জন্য একটি হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে।
একইদিন মুদ্রার উল্টোপিঠও দেখলেন হ্যারিস। এই প্রথম ট্রাম্পের একনিষ্ঠ সমর্থক ফক্স নিউজে সাক্ষাৎকারের শুরুতেই বলা হয়, সেপ্টেম্বরে ৫০ শতাংশ জনসমর্থন পেয়ে এগিয়ে ছিলেন কামালা। ট্রাম্পের সমর্থনে ছিলো ৪৮ শতাংশ। অক্টোবের এসে টা উল্টে গেছে। তবে কি খেই হারিয়ে ফেলছেন হ্যারিস?
এরপর বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসনের সবচেয়ে দুর্বল জায়গা অভিবাসন সংকটরে দায় ভাইস প্রেসিডেন্টের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করেন ফক্স নিউজের উপস্থাপক ব্রেট বেয়ার। ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যাক্ট অফ টোয়েন্টি টোয়েন্টিওয়ান বিলের প্রসঙ্গ টেনে জবাব দেয়ার চেষ্টা করলে বারবার হ্যারিসকে থামিয়ে দেন ব্রেট।
সাক্ষাৎকারের সময়, কামালা হ্যারিস যখন অভিবাসন নীতি সম্পর্কে তার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন, তখন ফক্স নিউজের উপস্থাপক ব্রেট বেয়ারের কঠোর প্রশ্ন এবং ধারাবাহিকভাবে তাকে থামানোর কারণে পরিস্থিতি আরও চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে, হ্যারিস তার কথা বলার সুযোগ চেয়ে অনেকটা আবেগময়ভাবে আবেদন করেন।
এসময় বেয়ার অভিবাসন সংকটের ফলে সীমান্তে অবৈধ শরণার্থীদের দ্বারা সংঘটিত ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোর প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। বিশেষ করে, তিনি তরুণীদের ওপর হওয়া সহিংসতার উদাহরণ দিয়ে হ্যারিসের অভিবাসন নীতির যৌক্তিকতা নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন।
হ্যারিস যে কোনো ধরনের প্রাণহানি এবং সহিংসতাকে “দুঃখজনক” বলে উল্লেখ করে তার প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তবে বেয়ার তাকে এই ইস্যুতে কোনো ছাড় দেননি এবং তাকে দায়বদ্ধতার মধ্যে ফেলতে থাকেন। হ্যারিসকে প্রশাসনের নীতির পক্ষে শক্তিশালী অবস্থান নিতে হলেও, বেয়ারের কড়া প্রশ্নবাণে তিনি প্রায়শই বাধাপ্রাপ্ত হন।
নিজের অর্থনীতিক পরিকল্পনা খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ দ্বারা স্বীকৃত বলে দাবি করেন হ্যারিস। অন্যদিকে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় মন্দা আসন্ন বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
হ্যারিসের এমন দাবির পর প্রেক্ষাপটে ব্রেট জিজ্ঞাসা করেন, এরপরও কেন দেশের মানুষ অর্থনীতিক সংকট উত্তরণে ট্রাম্পের ওপরই বেশি আস্থা রাখছেন?
কামালা, সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সমালোচনা করতে গেলে, ব্রেট জরিপের তথ্য তুলে ধরে বলেন, ৭০ শতাংশের বেশি মানুষ বলছে দেশ ভুল পথে চলছে। সেক্ষেত্রে গত সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় থেকে কি করেছে বর্তমান প্রশাসন এমন প্রশ্নও ছুড়ে দেন ব্রেট বেয়ার।
তবে ভাইস প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন তার বসের যোগ্যতা তুলে ধরতে। সেইসঙ্গে দেশকে নতুন ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন।

next post