সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিবছর ৮৮ বিলিয়ন ডলার খরচ হবে। এই পরিমাণ অর্থ আইস (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট)-এর বর্তমান বার্ষিক বাজেটের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি।
সাবেক বর্ডার পেট্রোল প্রধান এবং আইসের ডিরেক্টর রোনাল্ড ভিটএলোর মতে, ট্রাম্পের পরিকল্পিত গণহারে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের জন্য বিশাল সংখ্যক বর্ডার এজেন্ট নিয়োগ দিতে হবে এবং এই প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে।
এত বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য প্রচুর মানবসম্পদ, অবকাঠামো এবং প্রশাসনিক সুবিধার প্রয়োজন, যা সহজ কাজ নয় এবং এটি ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে বলে তিনি মনে করেন।
অধিকারকর্মীরা এই পরিকল্পনার সমালোচনা করে বলছেন, ঢালাভাবে শরণার্থী বিতাড়ন করতে গেলে পরিবারগুলোর অনেক সদস্য বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারেন, যা মানবিক সংকট তৈরি করবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, ক্ষমতায় ফিরে এসে তিনি দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন অভিযান পরিচালনা করবেন। আসন্ন নির্বাচনে তিনি এই প্রতিশ্রুতি আরও জোরেশোরে দিচ্ছেন। তবে সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের সময়ে অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের সংখ্যা এতটা উল্লেখযোগ্য ছিল না, যতটা ট্রাম্প প্রচার করেন।
বারাক ওবামার প্রশাসনের অধীনে, ২০১৩ সালে সর্বোচ্চ ৪৩২,০০০ অবৈধ অভিবাসী বিতাড়িত হয়েছিলেন, যা এক বছরের মধ্যে মার্কিন ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ট্রাম্পের সময়কালে এই সংখ্যা কখনও ৩৫০,০০০-এর বেশি হয়নি। যদিও ট্রাম্প কঠোর অভিবাসন নীতির পক্ষে ছিলেন, তার প্রশাসনের অধীনে শরণার্থী বিতাড়নের পরিসংখ্যান ওবামার সময়ের তুলনায় কম ছিল।
ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার তার পরিকল্পিত অভিবাসী বিতাড়ন অভিযানের জন্য যুদ্ধকালীন ক্ষমতা ব্যবহার করতে চান এবং সেসঙ্গে তার অনুসারী রিপাবলিকান স্টেট গভর্নরদের সহায়তা নিতে প্রস্তুত রয়েছেন। যদিও এই ব্যাপারে তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে তিনি বিভিন্ন র্যালিতে কিছু সম্ভাব্য পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেছেন।
সম্প্রতি অ্যারিজোনার এক র্যালিতে ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, তিনি নতুন করে ১০,০০০ বর্ডার এজেন্ট নিয়োগ দিতে চান, যা তার অভিবাসন নীতি কার্যকর করতে সহায়ক হবে। এর পাশাপাশি, তিনি স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তাও নিতে চান, যাতে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে যৌথভাবে এই অভিবাসন নীতি বাস্তবায়ন করা যায়।
পুলিশ কর্মকর্তারা মনে করছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পিতভাবে যুদ্ধকালীন ক্ষমতা ব্যবহার করে কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের গণহারে বিতাড়ন বাস্তবে অত্যন্ত কঠিন হবে। যদিও ট্রাম্প ২০১৬ সালেও এই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কিন্তু তার প্রথম মেয়াদে এই প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।
টাইম ম্যাগাজিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে অভিবাসী বিতড়ানে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়ার কথাও জানিয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট। কিন্তু দেশের সংবিধান তাকে সেই সুযোগ দেবে না। প্রয়োজনে আইনের সংস্কার করতে চান ট্রাম্প। তিনি বলছেন যেভাবেই হোক অপরাধীদের তাড়াবেন। তবে এনবিসি নিউজের পরিসংখ্যান বলছে, যেসব শহরে অভিবাসীর বেশি সমাগম ঘটেছে সেসব জায়গায় অপরাধপ্রবণতা কমে আসছে।
previous post