দুইজন সমন্বয়ক গোপন সূত্রে এই খবর পাওয়ার কথা জানিয়ে বক্তব্য রেখেছেন। তাদের দাবি, ত্রিপুরার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছেন, সেখানে শেখ হাসিনাও বক্তব্য রাখবেন।
এনওয়াই বাংলা স্পেশাল
ভারতের ত্রিপুরায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হচ্ছেন, এমন তথ্য পেয়ে হঠাৎ করেই বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বক্তব্য দিতে শুরু করছেন। তারা দাবি করছেন, শেখ হাসিনা ত্রিপুরায় গিয়ে জমায়েত করবেন বলে তথ্য আছে এবং সেখান থেকে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের ঘোষণা আসতে পারে, যেমনটি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলার সময় ঘোষণা করা হয়েছিল।
ছাত্র আন্দোলনের দুই জন সমন্বয়কের একই সুরে বক্তব্যের পর বিষয়টি দেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনা তৈরি করেছে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও নিজেদের ফেসবুক ও মেসেঞ্জার গ্রুপগুলোতে এ নিয়ে কথা বলছেন।
কিন্তু এই তথ্যের ভিত্তি আসলে কী? পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় অবস্থান করা আওয়ামী লীগের দুইজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে এনওয়াইবাংলা লাইফের। তারা এই তথ্য উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনা তো পদত্যাগ করে যাননি। সংবিধান ও আইন অনুযায়ী তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। পরিস্থিতি একটু গুছিয়ে যা করার তাই করবেন তিনি।
গত ৫ আগস্ট তুমুল গণআন্দোলনের মধ্যে শেখ হাসিনা ভারতে উড়ে যান। সেদিন বিকালে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণা দেন। পরে চাপের মুখে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনও একই কথা বলেন।
কিন্তু পরে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, তার মা পদত্যাগ করেননি। পরে শেখ হাসিনার যে দুটি ফোনালাপ ফেইসবুকে ফাঁস হয়েছে, তাতেও তিনি একই কথা বলেন।
তবে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ভারতে যাওয়ার পর তিনি প্রকাশ্যে আসেননি। তাকে নিয়ে নানা সময় নানা গুঞ্জন ছড়িয়েছে, একবার বলা হচ্ছে তিনি আরব আমিরাতে আছেন, পরে বলা হয় তিনি বেলারুশে চলে গেছেন। কিন্তু ভারত সরকারের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে, শেখ হাসিনা তার দেশেই আছেন।
এর মধ্যে শেখ হাসিনাকে ফাঁসাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটির শুনানি নিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাকে এক মাসের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে। এরপর ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তিনি ভারতেই আছেন, ভারতেই থাকবেন। অর্থাৎ তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না, সেই বার্তা দিয়ে রাখল দেশটির সরকার।
সমন্বয়কদের শঙ্কা কী
এর মধ্যে শনিবার হঠাৎ করেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুইজন সমন্বয়ক শেখ হাসিনার কথিত পরিকল্পনা নিয়ে বক্তব্য রেখেছেন।
নোয়াখালীতে ‘নজরুল সাহিত্যে বৈষম্যবিরোধী চেতনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, ‘কুমিল্লার একটি অংশে নোয়াখালী, কুমিল্লা, ফেনী অঞ্চলের আওয়ামী লীগ নেতারা মিটিং করার জন্য একত্র হচ্ছেন এবং ভারতের আগরতলায় তাঁরা একটি সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই সমাবেশ থেকে তাঁরা একটি প্রবাসী সরকারের ঘোষণা দিতে চায় এবং শেখ হাসিনা সেখানে নিজে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখতে পারেন বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য রয়েছে।’
কুমিল্লায় শহরের কান্দিরপাড় এলাকার টাউন হল মাঠে এক সমাবেশে গিয়ে আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহও ত্রিপুরায় কিছু একটা হচ্ছে বলে জানতে পাওয়ার কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন হওয়ার ষড়যন্ত্র কখনোই সফল হতে দেওয়া হবে না।’
কুমিল্লার সাবেক সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে ভেঙে দেওয়া সিটি করপোরেশনের মেয়র তাহনীস বাহার সূচনা ষড়যন্ত্র করছেন- এমন অভিযোগ এনে তিনি বলেছেন, ‘ভারতে বসে বাহার ও তাঁর কন্যা সূচনা এখনো ষড়যন্ত্র করছেন। আমি তাঁদের হুংকার দিয়ে বলতে চাই, শুধু কুমিল্লা কেন, বাংলার মাটিতে কোথাও তাঁদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’
আওয়ামী লীগ নেতারা কী বলছেন?
সমন্বয়কদের এসব বক্তব্যের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগ সরকারের একজন প্রতিমন্ত্রী ও দলের এক সাংগঠনিক সম্পাদক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বলেন, ‘প্রবাসী সরকার গঠন হলে তো আমরা জানতাম। এই ধরনের কোনো কিছুই আমাদেরকে বলা হয়নি।’
দলের পক্ষ থেকে কী নির্দেশনা- এই প্রশ্নে এই নেতা বলেন, ‘আপাতত চুপচাপ থাকতে বলা হয়েছে। কোনো কিছুই এখন করা যাবে না।’
একই প্রশ্নে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম সরাসরি কোনো বক্তব্য না দিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী এখনও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তো পদত্যাগ করেননি। একটি মহল বহু চেষ্টা করেছে বলার জন্য যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন, তারা কিন্তু এর কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।’
আপনি কি ত্রিপুরায় আছেন?- এই প্রশ্নে দুই নেতাই বললেন, তারা কলকাতায় অবস্থান করছেন।
এর আগেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দুইজনকে দায়িত্ব দেয়ার গুঞ্জন ছড়িয়েছিল সামাজিক মাধ্যমে। সেই গুঞ্জনও পরে অসত্য প্রমাণিত হয়।
ছড়ায় যে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে।
তবে এনওয়াইবাংলা লাইফ সে সময়ই আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে যে এই ধরনের কোনো পরিকল্পনা দলের নেই।
পরে গোপালগঞ্জ ছাত্রলীগের এক নেতার সঙ্গে শেখ হাসিনার যে ফোনালাপ ফাঁস হয়, তাতেও তিনি স্পষ্টতই জানান, এই মুহূর্তে নেতৃত্বে কাউকে আনার পরিকল্পনা নেই। কারণ, যাকেই দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাকেই গ্রেপ্তার করা হবে। ফলে তিনি কাউকে এই বিপদের মুখে ফেলতে চান না।
অবশ্য আপাতত চুপচাপ থাকার নির্দেশ থাকার পরেও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার খবরে প্রতিবাদ শুরু হয়ে গেছে। চট্টগ্রামে গভীর রাতে ছাত্রলীগের মিছিলের খবরে তোলপাড় আর অবিশ্বাস ছড়িয়েছে। এক বড় বিপর্যয়ের পরও আওয়ামী লীগের যে মনোবল ভেঙে যায়নি, সেই বিষয়টি সামনে এসেছে।
চট্টগ্রাম ছাড়াও এখানে সেখানেও মিছিল হচ্ছে। নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়েছেন সামাজিক মাধ্যমেও। আর জনমত যে দ্রুতই ঘুরছে, সেই আভাসও পাওয়া যাচ্ছে।