দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের টেস্ট ম্যাচের আগের দিন ঢাকায় মিরপুর জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের পক্ষে–বিপক্ষে মিছিল হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া ও মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। ঘটনার সময় স্টেডিয়ামে চলছিল দক্ষিণ আফ্রিকা দলের অনুশীলন। অনুশীলন শেষে হোটেলে ফেরার সময় মিছিল–স্লোগান ও হট্টগোলের শব্দ কানে গেছে তাঁদের। দক্ষিণ আফ্রিকা দলের ক্রিকেটারদের কেউ কেউ ঘটনা সম্পর্কে খোঁজখবরও নিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
‘সাকিব আল হাসান ভয় নাই, মিরপুর ছাড়ি নাই’, ‘তুমি কে আমি কে, সাকিবিয়ান সাকিবিয়ান’ গলা ফাটিয়ে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন সাকিবের পক্ষে এক দল লোক, যারা সাকিবিয়ান নামে পরিচিত। আচমকা বাঁশ, লাঠি নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে আরেকটি পক্ষ। তারা সাকিব বিরোধী। একপর্যায়ে আক্রমণের শিকার লোকগুলো স্টেডিয়ামের দিকে দৌড়ে পালায়। সেখানে তাদের ওপর লাঠিচার্জ করেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। লোকের চিৎকার, ছুটাছুটি, সেনাবাহিনীর বাঁশির শব্দ মিলিয়ে আতঙ্কজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
মিরপুরে সাকিবের বিদায়ী টেস্ট খেলতে চাওয়া এবং শেষ পর্যন্ত তার দেশে আসতে না পারা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা কর্মসূচি চলছে গত কয়েক দিন ধরেই। টেস্ট শুরুর আগের দিন স্টেডিয়ামমুখী ‘সাকিবিয়ানদের লং মার্চ’ কর্মসূচি ডেকেছিলেন সাকিবের ভক্ত-সমর্থকরা। মিরপুর স্টেডিয়ামের পাশেপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে গত কয়েক দিন থেকেই।
রোববার দুপুর ২টা থেকে সাকিব ভক্তদের আনাগোণা দেখা যায় স্টেডিয়ামের সামনে। ‘লং মার্চ’ বলতে যেমন বোঝায়, তেমন বড় সংখ্যক কোনো উপস্থিতি সেখানে ছিল না। শ খানেক সাকিব ভক্তকে দেখা যায় মিছিল করতে, স্লোগান দিতে। অনেকের হাতেই ছিল ব্যানার। তাদের ঘিরে সংবাদকর্মী ছিলেন বিপুল সংখ্যক। অন্যান্য দিনের মতোই তাদের সবকিছু চলছিল। একটা সময় তাদেরকে মাঠে পাশ থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সাধারণ মানুষ ও উৎসাহী অনেককে আশেপাশের গলিতে পাঠিয়ে দেন তারা। হঠাৎই সাকিবের ভক্তদের ওপর হামলায় বদলে যায় পুরো চিত্র।
আইনশৃংঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাছাকাছি থাকলেও ওই সময়টায় তারা একরকম দর্শকের ভূমিকা পালন করেন। আক্রান্তদের রক্ষা করতে গিয়ে কয়েকজন সংবাদকর্মীও আঘাতের শিকার হন। হামলাকারীরা সাকিব-বিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে এক পর্যায়ে একটি গলি দিয়ে বের হয়ে যায়। হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পরও উত্তপ্ত অবস্থা ছিল আরও বেশ কিছুক্ষণ। সাকিবের ভক্তদের যারা তখনও ছিলেন, তাদেরকে এক পাশে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে সেনাবাহিনী। দুটি গাড়ীতে সেনাবাহিনীর আরও সদস্যকে স্টেডিয়ামের সামনে এসে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
এসব নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি পুলিশ, সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের কেউই। তবে এক নম্বর ফটকের কাছাকাছি জায়গা থেকে একজনকে আটক করতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেনাবাহিনীর এক সদস্য জানান, দেশ-বিরোধী স্লোগান দেওয়ায় ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের নিরাপত্তা ব্যাহত হতে পারে বলে শঙ্কা থাকায় তাকে আটক করা হয়েছে। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এসবের মধ্যেই কঠোর নিরাপত্তায় মাঠ ছেড়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা দল। বাসের ভেতর থেকে বাইরের নানা কিছু ভিডিও করতে দেখা যায় প্রোটিয়া ক্রিকেটারদের।
